রেলওয়ে কর্মচারীদের দাবি: মধ্যরাত থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধের আশঙ্কা!

রেলওয়ে কর্চারীদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিধি মোতাবেক অর্জিত মাইলেজ (পার্ট অফ পে রানিং এলাউন্স) যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানের দাবিতে এদিন রাত থেকে কর্মবিরতিতে যেতে পারেন রেলওয়ে কর্মচারীরা।-খবর তোলপাড়।
দাবির বিষয়ে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ (লোকো মাস্টার, গার্ড, টিটিই)। কিন্তু সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় কর্মবিরতিতে যেতে পারেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রবিউল ইসলাম জানান, ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ জন্য তাঁদের দেওয়া হয় বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ। মাইলেজের হিসাব হলো- প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক বেসিকের সমপরিমাণ টাকা বেশি পাবেন। ৮ ঘণ্টায় একদিনের কর্মদিন ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা দুই-তিন মাসের সমপরিমাণ। তাঁদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয় তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করে। এর পর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ঐক্য আন্দোলন করে আসছে।
রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ২৭ জানুয়ারির মধ্যে মাইলেজ প্রদানসহ সব দাবি পূরণে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্মকর্তা ও রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে বারবার অবহিত করা হয়েছে। আমাদের এ আন্দোলন তিন বছর ধরে চলছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে রেল মহাপরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (পার্সোনেল-৩) আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ২৭ জানুয়ারি বেলা ১১টায় আমন্ত্রণ জানান। এতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে রেলের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীরা এ আলোচনা সভায় যোগ দেননি। কারণ আমরা জানি, এ আলোচনা সভায় গেলে তারা আমাদের কাছে আবারো সময় চাইবে। অতত্রব আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত ২৮ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির যে ঘোষণা দিয়েছি সেটি বহাল থাকবে। সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) গৌতম কুমার কুন্ডু বলেন, ‘রানিং স্টাফ কর্মচারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রেল ভবনে আজ (সোমবার) বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এটিতো রেলভবন ও মন্ত্রণালয়ের বিষয়। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই আমরা জানাতে পারবো।’
উল্লেখ্য, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের তথ্যমতে, এই অঞ্চলে ১০৮টি ট্রেন চলাচল করে। তার মধ্যে আন্তঃনগর ৫৪ টি, মেইল ৩৫ লোকাল ১৯ এবং মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। ২৮ তারিখ হতে কর্মবিরতি শুরু হলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।