কলকাতা বইমেলায় (২৮শে জানুয়ারী-৯ই ফেব্রুয়ারী) এবার আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী লেখক-সাংবাদিক শিতাংশু গুহ’র বই ‘ভারত ভাগ হয়েছে ধর্মের জন্যে, ভাতের জন্যে নয়’ বের হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে ‘আনন্দ প্রকাশন’, বইমেলা ষ্টল নাম্বার ষ্টল নাম্বার ৪৮১। রবিবার ২রা ফেব্রুয়ারী বিকালে আনন্দ প্রকাশন ষ্টলে (৪৮১) বইটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। লেখক নিজে উপস্থিত না থাকলেও এতে বেশ কিছু পাঠক উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, বইটি’র চাহিদা রয়েছে। বাস্তুহারা শরণার্থীর ঢল সম্বলিত বই’র চমৎকার প্রচ্ছদটি করেছেন শ্রীরজত পুরকায়স্থ। মূল্য ২শ’ টাকা।
মুখবন্ধে লেখক জানিয়েছেন এটি তাঁর সপ্তম বই, এবং কলকাতা থেকে প্রথম প্রকাশনা। আগের বইগুলো ঢাকা থেকে এবং আগামী প্রকাশনী ও মুক্তধারা নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত। এরমধ্যে আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত লেখকের ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ বইটি ইতিমধ্যে পাঠক মহলে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছে। লেখকের অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, সমালোচনা, করোনার কথা, ক্লিনটন-মনিকা প্রেম ইত্যাদি। আনন্দ প্রকাশনীর কর্ণধার নিগমানন্দ মন্ডল জানিয়েছেন, বাংলাদেশের একজন লেখকের বই প্রকাশ করে তিনি আনন্দিত।
বইটি সম্পর্কে লেখক নিজের ভাষায় বলেছেন যে, বাঙ্গালী হিন্দুর একটি গৌরবময় ইতিহাস আছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙ্গালী হিন্দু’র অবদান অতুলনীয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে হিন্দুদের ত্যাগ ও অবদান অপরিসীম। অথচ বাংলাদেশে হিন্দুরা এখন নিজদেশে পরবাসী, অত্যাচারিত, নিপীড়িত। বিভিন্ন পরিসংখ্যান, তথ্য, উপাত্ত জানায়, ১৯৪৭’র পর থেকে এপর্যন্ত পূর্ব-বাংলা বা আজকের বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫কোটি হিন্দু হারিয়ে গেছে। এতবড় বিপর্যয় পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল, এটি ‘নীরব গণহত্যা বা নীরব হিন্দু হত্যা’। পশ্চিমবঙ্গ ধীরলয়ে সেইদিকে যাচ্ছে এবং পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা নিরাপদ নন।
লেখকের মতে, তাঁরা ঘরপোড়া, তাই সিঁদুরের মেঘ দেখে টের পান। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু কমছে, মুসলিম বাড়ছে, সমস্যা বাড়ছে, আরো বাড়বে। বাংলাদেশে হিন্দু কমছে তো কমছেই, এখন ৮%। পাকিস্তানে <২%। নিরোদ সি চৌধুরী তাঁর ‘আত্মঘাতী বাঙ্গালী’ বইয়ে এই হতভাগ্য ‘হিন্দু-বাঙ্গালীর’ কথাই বলেছেন, বাঙ্গালী হিন্দু অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে তা বলা বাহুল্য। ভারত ভাগ হয়েছিলো ধর্মের ভিত্তিতে, পুরোপুরি জনসংখ্যা বিনিময় হওয়া উচিত ছিলো। তা হয়নি, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আজ মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় নিশ্চিহ্নপ্রায়। ভারত সরাইখানা। যারা একদা বললো, ‘হিন্দুদের সাথে থাকা যায়না’, তাঁরা বহাল তবিয়তে ভারতে থাকলো। যারা ‘লড়কে লেঙ্গা পাকিস্তান’ নিয়ে ঘরে ফিরলো তাঁরা হিন্দুদের কঁচুকাটা করে বিদায় দিলো। কি চমৎকার তাই-না? লেখক লিখেছেন, একটি ছাগলকে বধ করার সময় পাশের ছাগলটি কাঁঠাল পাতা চিবায়, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুর অবস্থা অনেকটা তাই, তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে হিন্দু নিশ্চিহ্ন হতে দেখে ‘কাঁঠাল-পাতা’ চিবাচ্ছে। অবিভক্ত বাংলায় মুসলমান বারবার এককাট্টা হয়ে বিভক্ত হিন্দুদের পরাজিত করেছে। স্বাধীনতার পূর্বে অবিভক্ত বাংলায় কোন হিন্দু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী/ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না (একটু সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে হলেও বাংলার প্রধানমন্ত্রী বলা হয়েছে), যারা ছিলেন তারা হচ্ছেন স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন, এ,কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ভারত স্বাধীন হলে হিন্দুরা সেই সুযোগ পায়, যদিও তা আর বেশিদিন ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে হয়না। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বুঝতে পারছেন না যে, তাঁদের সামনে মহাবিপদ ঘনিয়ে আসছে। লেখক বলেছেন, ওহে হিন্দু, উদারতা ভাল, কিন্তু মুসলিম তোষণ করে স্বজাতির বিনাশ উদারতা নয়, ভীরুতা, কাপুরুষতা, দুর্বলতা। বাঁচতে হলে, পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে ‘ওঠ, জাগো’, সময় আর হাতে বেশি নেই! পালিয়ে বাঁচা যায়না, বাঁচার আর এক নাম সংগ্রাম। শ্রীগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বারবার বলেছেন, ‘ওঠ, যুদ্ধ কর’। এ লড়াই বাঁচার লড়াই। লেখক স্পষ্টত: বলেছেন, এ বই পশ্চিমবাংলার হিন্দু’র জন্যে-। মাত্র ৮৮ পাতার এ বইয়ে লেখক পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু’র ‘কুম্ভকর্মের ঘুম’ না ভাঙ্গলে তাদের কপালে বাংলাদেশের হিন্দুদের মতই দুর্ভোগ ঘটবে।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফার্মগেট ঢাকা-১২১৫ ।
মোবাইল : ০১৭৭৩৩৭৪৩৬২ । ইমেইল : dailytolpernews@gmail.com
বিজ্ঞাপন: prohaladsaikot@gmail.com