বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
শুভেচ্ছা বার্তা:
আলোকিত রাজারহাট একটি বহুল প্রচারিত প্রিন্ট পত্রিকা। এটি নিয়মিত প্রকাশ হয়ে আসছে। পত্রিকাটির পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা। আলোকিত রাজারহাট এর ওয়েবসাইট কয়েকদিনের মধ্যে আপনাদের মাঝে উন্মুক্ত হবে। আপনি গর্বিত সাইটটির সঙ্গে থেকে নিয়মিত খবর দেখুন ও পড়ুন। আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। ধন্যবাদ।

ভাঙা হয়েছে শেখ মুজিবের বাড়ির অর্ধেকের বেশি

রিপোর্টারের নাম / ৮০ টাইম ভিউ
Update : বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বাংলাদেশের জন্মের সাক্ষী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির অর্ধেকের বেশি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে একটি ক্রেন ও দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে ওই বাড়ি ভাঙা শুরু হলেও সকালে দেখা গেছে একটি এক্সক্যাভেটর।

ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ছয় মাস পূর্তির দিনে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে এই ভাঙচুর শুরু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে বাড়ি ভাঙা হচ্ছে।-খবর তোলপাড়।

সকাল সোয়া ৯টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা বিরতি চলে। পুরো বাড়িজুড়ে ভিড় জমানো ছাত্র-জনতা ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান দিচ্ছেন। উৎসুক জনতার কেউ কেউ আধভাঙা ভবন দুটির দ্বিতীয়-তৃতীয় তলায় উঠে পড়েছে।

বিএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাফিন বলেন, “এ বাড়িটাকে যদি আমরা না ভাঙি, তাহলে ফ্যাসিবাদকে ধরে রাখা হবে। এটি ভাঙার মাধ্যমে আমরা সবাইকে ফ্যাসিবাদের পরিণতি বুঝাতে পারব। আমাদের বিপ্লব যাতে বিঘ্নিত না হয়, যারা শহীদ হয়েছে- তাদের রক্ত যাতে বৃথা না হয়। সেজন্য এই বাড়িটি ভাঙা জরুরী ছিল।”

ইমাম আহমেদ নামের একজন বললেন, “যারা দেশ, জাতি ও ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, তাদের পরিণতি কী হতে পারে, এই বাড়িটি তার প্রমাণ। এ থেকে সবাই শিক্ষা নেবে, ভবিষ্যতে দেশ এবং ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কাজ করলে তার সাম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে- এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।”

কোনো দেশই স্বৈরশাসকের চিহ্ন রাখতে চায় না মন্তব্য করে হাফিজ খান নামের একজন বলেন, “জনগণ বুকে যে চাপা কষ্ট রেখেছিল, এটা কষ্টেরই বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন জাতি রাখতে চায় না, বাঙালিও বাড়িটি ভাঙার মাধ্যমে এটি বুঝিয়ে দিল। এটি সাধারণ মানুষের চাপা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।”

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী হেলাল উদ্দিন নাঈম বলেন, “যার যার ক্ষোভ ঝাড়ছে এখানে এসে বাড়িটি ভেঙে। আমিও একটি ইট নিয়ে যাচ্ছি। এটি পড়ার টেবিলে রেখে দেব। মানুষ এখানে বাড়িটি গুড়িয়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদতন্ত্র যে গুড়িয়ে দিল, আশা করছি ভবিষ্যত এর থেকে শিক্ষা নেবে। ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে।”

তিনি বলেন, “এগুলা ফ্যাসিবাদের প্রতীকী। এতো মস্তবড় মানুষের বাড়ি সাধারণ জনগণ ভেঙে দিয়েছে তার এবং তার মেয়ের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে। তাদের জোর জবরদস্থির জন্য মানুষ যে ক্ষুব্ধ সেটি বুঝিয়ে দিল। এটি আমাদের জন্য শিক্ষা, ভবিষ্যতে যারা শাসন করবে- তাদের মধ্যে যেন স্বৈরাচারী মনোভাব ফুটে না ওঠে। তাদের জন্য একটি বার্তা আমরা কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ইটও খুলে নিয়ে এসেছি, তোমরা সাবধান হয়ে যাও।”

শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের পাল্টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে দেওয়া এই কর্মসূচি কেবল সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ধানমন্ডি ৫ নম্বরে মুজিবকন্যার বাসভবন সুধা সদন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ঢাকার বাইরে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিলেটে শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বুধবার রাত ৮টার পর থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জড়ো হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে জনতা গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। লাঠিসোটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেন অনেকে। কেউ কেউ বাড়ির দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেন। জানালার গ্রিল, কাঠ, ফটকের অংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।

ভেতর থেকে ‘নারায়ে তাকবীর’, ‘জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই করো’ -এসব স্লোগানের পাশাপাশি ‘দিল্লি না ঢাকা, আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’– ইত্যাদি স্লোগান শোনা যায় এ সময়। এই ভিড়ের মধ্যে দর্শকের সংখ্যাও কম ছিল না। তারা বাড়ির সামনের পরিস্থিতি দেখছিলেন, মোবাইলে ছবি তুলছিলেন বা ভিডিও করছিলেন, আবার চলেও যাচ্ছিলেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িত এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। বুধবার ব্যাপক ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মত যা কিছু আছে, তাতে ফের আগুন দেওয়া হয়। এসময় নারিকেল গাছের পাতাও জ্বলতে দেখা যায়। আগুন জ্বলতে দেখা যায় ৩২ নম্বরের ওই বাড়ির পাশের একটি ভবনেও।

কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা একজন বলেন, “বুলডোজার দিয়ে আমরা আজ স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দেব।”

ওই বাড়ি ঘিরে হাজার তিনেক মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে একটি ক্রেন পৌঁছায়। মানুষের উল্লাসধ্বনির মধ্যে সেটি মূল সড়ক থেকে ৩২ নম্বরের সড়কে ঢোকে। ক্রেনে ওপরে উঠে স্লোগান দিতে থাকেন অনেকে। পরে আসে একটি এক্সক্যাভেটর। রাত সোয়া ১১টার দিকে ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। ঘণ্টাখানের মধ্যে ভেঙে ফেলা হয় তিন তলা বাড়ির একটি অংশ। রাত সোয়া ১টার পর সেই কাজে কিছুটা বিরতি দেওয়া হয়। পরে আরো একটি এক্সক্যাভেটর ভাঙার কাজে যোগ দেয়।

এর আগে ৩২ নম্বর বাড়ির উল্টোপাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টরে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হচ্ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ আয়োজন করে। সেখানে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, “আমরা আন্দোলনের প্রামাণ্যচিত্র দেখাচ্ছি। আপনাদের যাদের ভাঙার আছে, তারা সামনে গিয়ে ভেঙে আসেন। এখানে যারা প্রামাণ্যচিত্র দেখতে চায়, তাদের সুযোগ দেন।”

এসব কর্মসূচির কারণে ধানমণ্ডি এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হলেও রাস্তার ওপর দুটো পুলিশ ভ্যান ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো অবস্থান ওই এলাকায় দেখা যায়নি। মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা একবার ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটির সামনে গেলে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান তোলে ছাত্র-জনতা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখান থেকে সরে যায় সেনাবাহিনী।

গভীর রাতে মাইকে গান ছেড়ে একদল মানুষকে সেখানে নাচতেও দেখা যায়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আসা লোকজনের ভিড়ে রাসেল স্কয়ার এলাকায় যান চলাচল অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। রাতে ঢাকায় ঢোকা ট্রাকের স্রোত যানজটে আটকে যায়। মিরপুর সড়কে যানবাহনের সারি সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত পৌঁছায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর