কুড়িগ্রামে সরিষার বাম্পার ফলনের পর বীজ সংরক্ষণ করছে প্রান্তিক চাষিরা

হুমায়ুন কবির সূর্য:
কুড়িগ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা এবার সরিষায় বাম্পার ফলন পেয়েছে। তাই আগামীতে আরও ফলন পেতে নিজেরাই সরিষার বীজ সংরক্ষণ করছেন। এতে কৃষকের অর্থ এবং সময় দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। জেলায় আগামীতে আরও ব্যাপক হারে সরিষা চাষের জন্য প্রান্তিক চাষিরা সরিষা বীজ সংরক্ষণ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আর বিঘা প্রতি গড়ে ফলন পাওয়া যাচ্ছে প্রায় পাঁচ মণ করে।
আমন ধান কাটার পর এবং বোরো ধান রোপণ করার আগে এই সময় জমি অনাবাদি থাকতো। তাই অল্প খরচে স্বল্প মেয়াদী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে দু’ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রুপান্তরিত করে অর্থনৈতিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকগণ।
জানা যায়, সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল ফসল। দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয় এবং প্রায় আড়াই লাখ টন তেল পাওয়া যায়। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪ শতাংশ তেল থাকে। খৈল প্রায় ৪০ শতাংশ আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশে টরি,শ্বেত ও রাই এই তিন প্রকার সরিষার চাষ করা হয়। আমন ধান কাটার পর সরিষা লাগানো হয় এবং স্বল্প মেয়াদী এই ফসল চাষ শেষে বোরো ধান রোপণ করা হয়।
জেলায় বারি সরিষা-৭জাতের গাছের পাতা বোটাহীন ও তল মসৃণ। ফুলের পাঁপড়ির রং সাদা। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২৫টি। বারি সরিষা -৯ এ জাতটি টরি-৭ এর চেয়ে শতকরা ১০-২৫ ভাগ বেশি ফলন দেয়। আমন ধান কাটার পর এবং বোরো ধান চাষের আগে। স্বল্প মেয়াদী এ জাতটি সহজে চাষ করা সম্ভব। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪৩-৪৪ ভাগ। ফসল পাকতে ৮০-৮৫ দিন সময় লাগে। পরিমাণমত সার ও সেচ দিলে হেক্টরে ১দশমিক২৫ হতে ১দশমিক ৪৫টন ফলন পাওয়া যায়।
বারি সরিষা-১৪জাতের ফসল ৭৫ হতে ৮০দিনে হয়। হেক্টর প্রতি গড়ে ফলন হয় ১ দশমিক ৪ হতে ১ দশমিক ৬ টন। আমন ধান কাটার পর স্বল্প মেয়াদী জাত হিসেবে চাষ করে বোরো ধান রোপণ করা যায়।
বারি-৭,বারি-৯,বারি-১৪ জাতে সরিষা চাষ হয়েছে বেশি। এরমধ্যে বারি-১৪জাতের সরিষা কম সময়ে ফলন আসে এবং ফলনও ভালো হয়। তাই কৃষকরা নিজেরাই সরিষা বীজ সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে।
বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রথমে মাড়াই করার পর রোদে ভালো করে শুকানো হয়। এরপর বীজগুলো ঠাণ্ডা করে প্লাস্টিকের পাত্রে, টিনে বা ড্রামে রেখে মুখ বন্ধ করে রাখেন। যেন পাত্রের ভিতরে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। বীজসহ পাত্র আদ্রর্তা কম এমন ঘরের শীতল স্থানে এক বছর থেকে দু বছর পর্যন্ত বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বজায় রাখে।
রাজারহারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বিশাল পাড় গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, বীজ, হালচাষ, সেচ, ঔষধ, কাটামাড়াসহ বিঘা প্রতি সরিষা চাষে ৫-৬হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গড়ে ৪-৫মণ সরিষা পেয়েছি।
একই এলাকার কৃষাণী মর্জিনা বেগম বলেন, আগে আমাদের জমি বছরে আমন ও বোরো ধান দু’বার চাষ করতাম। কিন্তু এবার আমন শেষে বারি-১৪জাতের সরিষা চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সুবল কুমার প্রামানিক বলেন,পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় আরডিআরএস বাংলাদেশের বাস্তবায়নে কৃষি ইউনিটের আওতায় কুড়িগ্রাম জেলায় ১০০ একর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। তেল জাতীয় ফসল চাষ সম্প্রসারণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, তেল আমদানীর নির্ভরতা কমাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সরিষার বীজ সংরক্ষণে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।