লাভজনক হওয়ায় উলিপুরে বেড়েছে ভুট্টা চাষ

আব্দুল মালেক:
অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীর চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষ দিন দিন বেড়ে চলেছে। বোরো ধান ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পোলট্রি শিল্পের চাহিদা, উচ্চ ফলনশীল জাত, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষে ঘুরেছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা। বিঘাপ্রতি ২০-২৩ হাজার টাকা খরচে ভুট্টার ফলন হয় ৩৫ মণ। যা বিক্রি করে পাওয়া যায় ৪২-৪৫ হাজার টাকা। দেশীয় জাতের ভুট্টায় তেমন ভালো ফলন না হওয়ায় হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করছেন জেলার কৃষকেরা।
জানা যায়, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন নদ-নদী বেষ্টিত। এ ৮টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের লোকজন চরে ভেসে উঠা জমিতে বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলের চাষাবাদ করেছেন। এরমধ্যে ভুট্টার চাষও রয়েছে। এসকল ফসলকে ঘিরে নদী গর্ভে বিলীন হওয়া নিঃস্ব হয়ে যাওয়া হাজার হাজার মানুষের মুখে এখন ফুটে উঠেছে সুখের হাসি। ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে আবাদি জমি, বসতবাড়ি হাড়িয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। এই নিঃস্ব পরিবারগুলো বাঁচার তাগিদে তারা বিভিন্ন এলাকায় রিকশা ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু নদ-নদীর নব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠেছে ছোট ছোট অসংখ্য বালুচর। এসব চরে রবিশস্যের ব্যাপক ফলন হয়। বাস্তুহারা এসব চাষিরা চাষ করছেন বিভিন্ন ধরনের ফসল। এছাড়া এবছর চরাঞ্চলে বন্যার কারণে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হলেও ভুট্টা চাষের মাধ্যমে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। বন্যার পানিতে পলি জমে চরাঞ্চলের জমি বেশি উর্বর হওয়ায় ভুট্টা চাষে স্বপ্ন দেখছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭’শ ৮০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছিলো ৯’শ ৭৩ হেক্টর। এবারে চাহিদা অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯’শ ৭৫ হেক্টর। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে এক হাজার ১৭০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ বেশি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এবারে ১৯৭ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ বেশি করা হয়েছে। ভুট্টাচাষে অল্প খরচে বেশি ফলন পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবছর চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টার চাষ বেশি হয়েছে বলে জানান তারা।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ চরাঞ্চলগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ ও চরাঞ্চলে ভুট্টার সমারোহ যা চোখে পড়ার মতো। ভুট্টা চাষিরা ভুট্টার ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনায় কৃষকদের মনে আশার সঞ্চার জাগিয়েছে। তারা জানান, অল্প খরচে বেশি ফলন পাওয়ায় উপজেলায় বিভিন্ন এলাকাসহ চরাঞ্চলে এবারে বেশি ভুট্টার চাষ হয়েছে। ইরি ও বোরো ধানের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে অধিক ফলন ও দাম ভালো পাওয়াসহ স্থানীয় বাজারে সহজেই ভুট্টা বিক্রির সুবিধা থাকায় খুশি কৃষকেরা।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের জুয়ানসতরা এলাকার ভুট্টাচাষি আমিনুল ইসলাম জানান, এবারে তিনি প্রায় ৩ একর জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ বাজার টাকা। ভুট্টা উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। মোট খরচ হবে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। ভুট্টার ফলন যেভাবে হয়েছে তাতে তিনি প্রায় ৩ শ৪শ মণ ভুট্টার আশা করছেন। বাজারদর ভালো থাকলে লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছেন এ চাষি। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, বীজ, সার ও কীটনাশক সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হাতের লাগালে থাকলে দ্বিগুন লাভ হতো বলে জানান তিনি। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার ভুট্টা চাষিদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম, রফিকুর ইসলাম, রুহুল আমিন, মোকলেছুর রহমান ও সাহেব উদ্দিন সহ আরও অনেকে জানান, ভুট্টা চাষ করে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। এবারে ভুট্টার বাম্পার ফলনে তাদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। মৌসুমে ভুট্টার বাজারদর ভালো থাকলে অনেক লাভবানের আশা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশারফ হেসেন জানান, উপজেলায় ভুট্টার চাষ ভালো হয়েছে। আমাদের পোলট্রি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভুট্টা। এর আগে এ শিল্প ছিল আমদানি-নির্ভর। আমাদের দেশের জমি ভুট্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দেশে উৎপাদিত ভুট্টা পোলট্রি শিল্পে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে ভুট্টার ফলন অনেক ভালো দেখা যাচ্ছে। কৃষক দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে বাড়ছে ভুট্টা চাষ।