বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে নিখোঁজ ৪ শিশুর মধ্যে তিন শিশুর মরদেহ উদ্ধার রাজারহাটে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন রাজারহাটে নিখোঁজ মাছ শিকারীর লাশ উদ্ধার কুড়িগ্রামে ঘন ঘন লোডশেডিং, জনজীবন বিপর্যস্ত নাগেশ্বরীতে নদীতে গোসলে নেমে ভাই-বোনসহ ৪ শিশু নিখোঁজ শ্রীবরদীতে শিক্ষককে হত্যা, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৭০০, আহত ১৯ হাজার জানালো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সচিব রুপপুর প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি, দাবি রাশিয়ার হাটবাজার পরিচালনা নিয়ে শিক্ষার্থী-বিএনপি সংঘর্ষ, আহত ৩০ ‘রাস্তায় হাঁটতে গেলে বন্ধুরা আলো আসবেই বলে অপমান করে’

গৃহবধূকে ধর্ষণ, বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা

রিপোর্টারের নাম / ৭৫ টাইম ভিউ
Update : শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪

সংবাদদাতা, রৌমারী:

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় পাওনা টাকা আদায়ের নামে এক গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিচার চেয়েও না পেয়ে ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী বিষপান করেন। এতে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ্য স্বামী বিছানায় কাতরাচ্ছেন।

শুক্রবার (২৪ মে) ওই দম্পতি বিষপান করেন। ৫ দিন ধরে ‘বিষক্রিয়ার’ সাথে লড়াই শেষে বুধবার (২৯ মে) বিকালে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলেজপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী গৃহবধূর নাম আশা বেগম। তার স্বামীর নাম জাহাঙ্গীর আলম (৩২)। তাদের ঘরে তিন বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের হলপাড়া গ্রামের আবুসামার ছেলে জয়নাল মিয়া এবং তার সহযোগী কারিগর পাড়ার শুক্কুর কসাই, ডাকাত পাড়ার আলম কসাই ও টাঙ্গাইল পাড়ার সোলেমান।

মৃত্যুর আগে গত ২২ মে স্থানীয় কয়েকজনের কাছে দেওয়া ওই গৃহবধূর জবানবন্দির একটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। তাতে ওই গৃহবধূ পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা করেছেন। লোমহর্ষক বর্ণনায় উঠে এসেছে কীভাবে জয়নাল ও সহযোগীরা দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছে।

বর্ণনায় ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন, তার বাবা নেই। মা গৃহকর্মীর কাজে বিদেশে থাকেন। স্বামী টাঙ্গাইলে কাজ করেন। স্বামীর ধার করা পাওনা টাকা দিতে না পারায় স্থানীয় জয়নাল মিয়া গত রমজান মাসের শুরু থেকে তাকে ধর্ষণ শুরু করেন। পরে তার সহযোগী আলম কসাই, শুক্কুর কসাই ও সোলেমানসহ তাকে দিনের পর দিন পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এই নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি বাধ্য হয়ে তার স্বামীকে বিস্তারিত ঘটনা জানান। পরে স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে জানালেও মেলেনি বিচার।

ওই গৃহবধূ জানান, পাওনা টাকা আদায়ের অছিলায় প্রথমে জয়নাল মিয়া তাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতে থাকেন। পরে জয়নাল তার সহযোগী আলম, শুক্কুর ও সোলেমানকে নিয়ে এসে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। মোবাইল ফোনে সেই ধর্ষণের ভিডিও করে তা প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানাতে ভয় দেখায়। এরপর ব্লাকমেইল করে জয়নাল ও শুক্কুর মিলে তাকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করেন। পাশবিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ এই গৃহবধূ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে বিষয়টি তিনি তার স্বামীকে জানান।

ওই গৃহবধূ আরও বলেন, ‘এরপরও জয়নাল আবার ফোন দিয়ে আমার কাছে টাহার (টাকা) চাপ দেয়। আমি বলি কীসের টাহা! টাহার জন্য এতো কিছু! টাহার জন্য আমার স্বামীর সংসারে অশান্তি। ফাইজলামি পাইছো। টাহা ফেরত দিলে আমার ইজ্জত ফেরত দিবা! ব্লাকমেইল কইরা দিনের পর দিন আমারে শেষ করছো। তখন (জয়নাল) হুমকি দিয়া কয়, টেহা কীভাবে তোলা লাগে দেখমু আমি।’

ওই গৃবধূর স্বামী বলেন, ‘আমি টাঙ্গাইল থাইকা ফিইরা দেখি বউয়ের শরীর ভাইঙ্গা গেছে। আমি জিগাইলে হে খালি কান্দে। পরে সব জানতে পারি। বিচার চাইলে তারা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। জয়নাল আমারে মাইরা ফেলার হুমকি দেয়।’

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যসহ স্থানীয়দের কাছে বিচার দিলেও কোনো সুরাহা মেলেনি। এরপর গত শুক্রবার (২৪ মে) ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী বিষপান করেন। গুরুতর অবস্থায় তাদের প্রথমে রাজিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে জামালপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসক তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করেন। কিন্তু আর্থিক সামর্থ না থাকায় এই দম্পতি বাড়িতে চলে আসেন। বুধবার বাড়িতেই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দম্পতির বিষপানের পর স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে থানা পুলিশ ম্যানেজ বাদেও ভুক্তভোগীদের ২০ হাজার টাকা দেওয়ার বিনিময়ে ঘটনা মীমাংসার সিদ্ধান্ত হয়। জয়নাল ভুক্তভোগীদের চিকিৎসায় ২০ হাজার টাকা দিলেও তা নিতে অস্বীকৃতি জানান ওই দম্পতি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জয়নাল মিয়ার নম্বরে ফোন দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনা গোপন ছিল। আমরা জানতাম না। আর ওই চ্যাংড়া (গৃহবধূর স্বামী) একেকবার একেক কথা কয়। বিষ খাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য জয়নাল ২০ হাজার টাহা দিছে। হের স্বামী নেয় নাই।’

অভিযুক্তদের অবস্থান ও পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নে এই ওয়ার্ড মেম্বার বলেন, ‘জয়নাল ও শুক্কুর কই আছে জানা নাই। আমরাই ঘটনা জানতাম না, পুলিশ ক্যামনে জানবো!’

কয়েকমাস ধরে চলতে থাকা নির্যাতনে অতিষ্ঠ গৃহবধূর বিষপানে মৃত্যু হলেও বিষয়টিকে অপমৃত্যু বলছেন রাজিবপুর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। স্বামী স্ত্রী দুজনই বিষপান করলে স্ত্রীর মৃত্যু হয়। স্বামীর অবস্থা উন্নতি হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’

গৃহবধূকে কয়েকমাস ধরে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ৫ দিন আগে বিষপানের ঘটনা এলাকায় আলোচিত হলেও তা পুলিশের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি বলে দাবি ওসির।

ওসি আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন অভিযোগ পাইনি। ভিকটিমের (গৃহবধূর) মামা আমাদের বলেছেন যে তিনি বিষ খেয়েছেন। তাই অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর