গাজায় ভূলুণ্ঠিত মানবতা

ফিলিস্তিনে নিরীহ মানুষের ওপর ইসরাইলের পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ বিশ্বের ক্ষমতাধরদের তরফ থেকে নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিদিনই গাজায় ইসরাইলি হামলায় নারী-শিশুসহ ফিলিস্তিনিরা নিহত হচ্ছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলের হামলায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা অর্ধলক্ষ ছাড়িয়েছে। ইউনিসেফ সতর্ক করে জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ থেকে ফের হামলা শুরু করার পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ শিশু নিহত হচ্ছে।
গাজার ১০ লাখেরও বেশি শিশু এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পাচ্ছে না জীবন রক্ষাকারী সহায়তা। ইসরাইলের কারণে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি জনতার যেসব মৌলিক অধিকার-তাও লঙ্ঘিত হচ্ছে চরমভাবে। হাসপাতালগুলোতে আহত মানুষের উপচে পড়া ভিড়; কিন্তু চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের সুযোগই নেই। কারণ চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি তো আছেই, চিকিৎসাকর্মীদেরও টার্গেট করে হত্যা করার কারণে রয়েছে চিকিৎসকের ঘাটতি। ২৩ মার্চ ১৫ জন জরুরি চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, তা খণ্ডিত চিত্র মাত্র, ইসরাইলের এমন পৈশাচিকতার নজির রয়েছে অসংখ্য। ক্ষমতার মোহে নিমজ্জিত বিশ্বনেতারা মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও সাধারণ মানুষ এই বর্বরতার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে। আমেরিকাসহ বিশ্বনেতারা নিশ্চুপ রইলেও মনুষ্যত্ব এখনো যাদের হারিয়ে যায়নি, সেই আমজনতা এই অনাচারের সীমা টানতে পথে পথে বিক্ষোভে নেমেছেন।
ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস নামে একটি গ্রুপ গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। একই কর্মসূচি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসনের প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও ক্লাস-পরীক্ষা বয়কটের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ফিলিস্তিনের মাটিতে ইসরাইল যুদ্ধের নামে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যে বর্বরতা চালাচ্ছে, এমন নৃশংসতা আগে কখনো দেখা যায়নি। হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে। ফিলিস্তিনের ওপর নেতানিয়াহু বাহিনীর এ হামলা খোদ ইসরাইলিরাও ভালো চোখে দেখছে না।
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গাজায় বোমা হামলার প্রতিবাদে এরই মধ্যে ফুঁসে উঠেছে ইসরাইলের মানুষ। মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন গাজায় হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। প্রায় হাতছাড়া হওয়া ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে গিয়ে যে মরণ খেলায় মেতেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী, তা এ অঞ্চলের ভাগ্যকে কোথায় নিয়ে ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ঘৃণ্য জাতি হিসাবে গণ্য হওয়ার মতো সব অপরাধই যে ইসরাইল করেছে, ইতিহাসের পাতায় তা লেখা থাকবে। ক্ষমতার মোহ নয়, মানবতার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে গাজায় শান্তি ফেরাতে বিশ্বনেতারা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।