বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত কুড়িগ্রাম ৬ নং সেক্টর এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ডাকে প্রতিরোধ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী অনন্য সাহসী অভিযান পরিচালনা করে।
২৫-৩১ মার্চ,১৯৭১ এবং ০১-০৬ এপ্রিল, ১৯৭১ খ্রি. তিস্তা ব্রীজে মুক্তিবাহিনী’র প্রতিরোধ যুদ্ধে তাদেরকে নিম্নোক্ত কারণে তিস্তা প্রতিরোধ যুদ্ধ থেকে নিজেদের কে প্রত্যাহার করে কুড়িগ্রাম মহকুমা শহর অবস্থান নিতে হয়।
(০১) তিস্তা ব্রিজের প্রতিরোধ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী হাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন সৈয়দ এজাজ মোস্তফা ও কাউনিয়া থানার দারোগা আব্দুস সাত্তার সহ অনেক খাঁনসেনার মৃত্যু।
(০২) ০৪ এপ্রিল, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হারাগাছ হয়ে তিস্তা নদী অতিক্রম করে লালমনিরহাট প্রবেশ, হাসপাতাল সহ অবাংগালী
সহযোগিতায় গণহত্যা শুরু করে ।
(০৩) আকাশ পথে লালমনিরহাট বিমান বন্দর দখল।
(০৪) ০৫ এপ্রিল, ১৯৭১ লালমনিরহাটে ব্যাপক গণহত্যার চালায়।
(০৫) তিস্তা ফ্রন্টের যুদ্ধে বীর উত্তম এরশাদ আলী, বীর বিক্রম আতাহার আলী মল্লিক সহ বেশকিছু
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়।
(০৬) অসম যুদ্ধের কারণে মুক্তিবাহিনী ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন এর নেতৃত্বে হাইকমান্ডের নির্দ্দেশে তিস্তা প্রতিরোধযুদ্ধ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে ০৬ এপ্রিল, ১৯৭১ কুড়িগ্রাম শহরে ফিরে আসে।
০৭ এপ্রিল, ১৯৭১ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সাজোয়া গাড়ি, মর্টার, মেশিনগান এর গুলি করতে করতে মুক্তিবাহিনীর অপ্রতুল প্রতিরোধ ভেঙে দুপুরের পর কুড়িগ্রাম মহকুমা কালেক্টরেট ভবনের সামনে এগিয়ে আসে। এখানে তারা কুড়িগ্রাম সাব জেলের এলাকায় প্রায় চারিদিকে ঘিরে জেল ইনচার্জ সহ ৬ জন কারারক্ষীকে আটক করে। পরে মহকুমা প্রশাসক ও মহকুমা পুলিশ প্রশাসকের বাসভবন, ইন্সেপেকশন বাংলো ও মুন্সেফ আদালতের নিকট বর্তমান সার্কিট হাউসের সামনের রাস্তায় মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করে। ৬ জনের মধ্যে ৫ জন শহীদ হন এবং একজন আহত হয়ে পড়ে থাকেন আর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয় ফলে জীবনে বেঁচে যান। এই শহীদগণ হচ্ছেন কুড়িগ্রাম মহকুমা
শহরের প্রথম শহীদ।
কুড়িগ্রাম কারাগারের শহীদ ও আহতগনের নাম এবং পদবী নিম্নরুপ:
(০১) শহীদ শেখ হেদায়েত উল্ল্যাহ, সাব জেল ইনচার্জ।
(০২) শহীদ মো: সাজ্জাদ হোসেন , জমাদার ইনচার্জ।
(০৩) শহীদ লাল মোহাম্মদ প্রামাণিক , কারারক্ষী ।
(০৪) শহীদ আনসার আলী আকন্দ , কারারক্ষী ।
(০৫) শহীদ মো: ফকর উদ্দিন , কারারক্ষী ।
আহত হয়ে পরে বেঁচে যান।
(০৬) শহীদ আব্দুল জলিল পাইকার , কারারক্ষী ।
কুড়িগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও হাইকমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মহি উদ্দিন আহমেদ এর নির্দ্দেশে ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম হারুন অর রশীদ লাল সহ ৪ জন (এস এম আজহারুল ইসলাম রাজা, মতিউল ইসলাম চৌধুরী নয়া ও রজব আলী) রাতে লাশ উদ্ধার করে আনেন এবং পরদিন সকালে জানাযা করে জেলখানায় কবর দেয়া হয়। আর জেল-ইনচার্জ কে আলহাজ বজলুল করিম এঁর বাড়িতে রাতেই কবর দেয়া হয়।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর আজ ০৭ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সকালে এই সকল শহীদদের কবরে ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।
প্রথমে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন কুডিগ্রাম জেলা প্রশাসন। পরে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার, বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সলিডারিটি এর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা সেল এবং উত্তরবঙ্গ জাদুঘর এর পক্ষ থেকে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার প্রাঙ্গণে জেল সুপার এঁর সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জনাব উত্তম কুমার রায়।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেনএকুশে পদক প্রাপ্ত আইনজীবি, লেখক, গবেষক ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘর এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের কুড়িগ্রাম মহকুমার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম ছাত্র সংগঠক, পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া), কুড়িগ্রাম মহকুমা কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক,অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা , বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সলিডারিটি এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম হারুন অর রশীদ লাল প্রমুখ ।
সভায় বক্তাগণ এই শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে কুড়িগ্রাম কারাগারের বিভিন্ন ভবনের নাম তাঁদের নামে করার প্রস্তাব করেন।
কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজের সামনে এই গণ হত্যাকান্ডের জায়গায় একটি এপিটাফ বসিয়ে যথাযথ মর্যাদায়
শহীদদের স্মৃতি স্মরণ করার জন্য জেলা প্রশাসনকে
অনুরোধ করা হয়।
হত্যাকান্ডের জায়গায় নির্মিত শহীদ হেদায়েত উল্ল্যা সড়কে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।