
হুমায়ুন কবির সূর্য:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে সৃষ্টি হয়েছে অনন্য এক পরিস্থিতি। এই আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী উভয় দলের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন আপন দুই ভাই। ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও আগ্রহের ঝড়। এতদিন রৌমারী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। প্রায় গুছিয়ে নিয়েছিলেন সবকিছুই। কিন্তু বিএনপি থেকে তার বড় ভাই এবং রৌমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান প্রার্থী হওয়ায় সব হিসেব নিকেশ এখন নতুন করে করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে দুই ভাইয়ের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। কিন্তু একই পরিবার থেকে দুটি বড় দলের প্রার্থী হওয়ায় চলছে নানান হিসেব নিকেশ ও জল্পনা-কল্পনা।
এদিকে সোমবার ৩ নভেম্বর বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ২৩৮টি আসনের সম্ভাব্য বিএনপি প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এরমধ্যে ২৮ কুড়িগ্রাম-৪ আসনে প্রার্থী হিসেবে আজিজুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। দুই ভাইয়ের এই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।এখন সবার নজর সহোদর দুই ভাইদের লড়াইয়ে।
কুড়িগ্রাম-৪ আসন চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪১২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭১১ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ৯ জন।
বৃহৎ এই ভোটার গোষ্ঠীর মন জয় করতেই এখন দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আসনটি ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলেরই শক্ত ঘাঁটি হিসেবে কুড়িগ্রাম-৪ দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। ফলে দুই ভাইয়ের এই মুখোমুখি লড়াই আসনটিকে জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত আসনে পরিণত করেছে।
এক প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, “রৌমারী-চিলমারীর ইতিহাসে এমন দৃশ্য প্রথম। ভাইয়ের বিপরীতে ভাই-এটা নির্বাচনী মাঠে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জনমনে প্রশ্ন-কে এগিয়ে থাকবেন?
ভোটারদের মধ্যে কৌতূহল এখন তুঙ্গে। কেউ বলছেন, “এটা পরিবারের ভিতরেও রাজনৈতিক বিভাজনের প্রতিচ্ছবি।”আবার অনেকে মনে করছেন, দুই ভাইয়ের জনপ্রিয়তায় এখন দেখা যাক শেষ হাসি কে হাসে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা ও প্রার্থীদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ওপরই নির্ভর করবে কে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবেন।
জামায়াতের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাক বলেন, আমার বড় ভাই তিনি বিএনপি হতে সম্ভাব্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনি যদি সত্যি মনোনয়ন পেয়ে যান তাতে করে আমাকে পরাজিত করতে পারবে না। কেননা জামায়াতের জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেড়েছে। দুই ভাই প্রার্থী হলেও নির্বাচনে এর কোন প্রভাব ফেলবে না।
আজিজুর রহমান বলেন,আমার ছোট ভাই একসময় বিএনপি করতো। আমার কারণে সে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে জামায়াতে যোগদান সেই দলের প্রার্থী হয়েছে। আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা না করলে আমার পরিচয় এবং পারিবারিক ইমেজের কারণে আমার ছোট ভাই এককভাবে নির্বাচনে সুবিধা নিতে পারত। কিন্তু আমি প্রার্থী হওয়ায় সেই সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হলো। জনগণ আমাকেই চাইছে। তাই আমি আশা করবো আগামী নির্বাচনে দল আমাকে ফাইনাল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিবে।
প্রধান সম্পাদক- দিপালী রানী রায়
খামারবাড়ী, ফার্মগেট ঢাকা-১২১৫ ও ট্রাফিক মোড়, রাজারহাট-৫৬১০ থেকে প্রকাশিত। মোবাইল - ০১৭৭৩৩৭৪৩৬২, ০১৩০৩০৩৩৩৭১, নিউজ ইমেইল- dailytolpernews@gmail.com, বিজ্ঞাপন- prohaladsaikot@gmail.com