রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন

মাথা গোজার ঠায় নেই, খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করে ভূরুঙ্গামারীর শহিদুলের পরিবার

প্রকাশের সময়: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫


রতি কান্ত রায়:

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর শিলখুড়ি ইউনিয়নের গৃহহীন শহিদুল ইসলামের মাথা গোজার ঠায় নেই। পরিবার খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করেন তিনি । ২ শিশু সন্তান, অসুস্থ বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবন যাপন করছেন। শহিদুল শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তর ছাট গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, শহিদুল একসময় শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করতেন। অন্যের জমিতে একটি ছোট্ট ঝুপরি ঘরে দুই শিশু সন্তান, বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে সবকিছু ছেড়ে স্বপরিবারে ঢাকায় চলে যায়। কিছুদিন পর এলাকায় ফিরে এসে দেখতে পান জমির মালিক তার মাথা গোজার জায়গাটি অন্য কাজে ব্যবহার করছেন।

এতে তিনি পরিবার নিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েন। বিভিন্ন দোকানের বারান্দাসহ উপজেলা বিভিন্ন স্থানে রাত্রিযাপন করা শুরু করেন। এভাবে কেটে যায় প্রায় ১১ মাস। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবনের বারান্দায় পরিবারটি আশ্রয় নেয়। উপজেলা পরিষদের পরিচ্ছন্ন কর্মী তাদের জিনিসপত্র থানায় জমা দিয়ে সেখান থেকে সড়িয়ে দেয়। এতে শহিদুলের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

অবশেষে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশে খোলা আকাশের নিচে দুুই শিশু সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাত্রিযাপনের উদ্যোগ নেন। এ দৃশ্য দেখে সেখানে লোকজনের ভীড় বাড়তে থাকে।

শহিদুলের মা ছকিনা বেওয়া (৬২) বলেন, বাবাগো আমাগোর বাড়িঘর নাই। অনেক দিন ধইরা ছোট দুইটা নাতি ও ছেলের বউকে নিয়ে উপজেলার বারান্দায় থাকতাছি। বৃহস্পতিবার দারোয়ান টোপলা-টাপলি নিয়া থানায় দিয়া আমাগোরে তাড়ায়া দিছে। এই ঠান্ডার রাইতে ছোট দুইডা পোনাই নিয়ে এহোন আমরা কই যামু? কোনহানে থাকমু?

শহিদুল ইসলাম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, নিজের জায়গা-জমি না থাকায় কিছুদিন কবরস্থানের মতো ভুতুড়ে জায়গায় বসবাস করেছি। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি দয়া করে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় থাকতে দেন। শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করতাম। মায়ের অসুখের কারণে ঢাকা চলে যাই। এতে কাজটি চলে যায়।

দুই শিশু সন্তান, অসুস্থ বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবন যাপন করছি। কাজ করলে খেতে পাই, আর কাজ না পেলে অনাহরে থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের অনেক ঘর না-কি ফাঁকা পড়ে আছে, সেখানকার কোন একটি ঘর দিলে শিশু সন্তান দুটোকে নিয়ে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতাম।

শিলখুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, শহিদুলের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে সে সবকিছু ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। তিনি আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘরে বসবাস করতে চাইলে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপ জন মিত্র বলেন, শহিদুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসের আবেদন দিলে তাকে ঘর প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর