অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বার্তা দিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে শপথ নেন তিনি। পরে শপথ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের ১৩ উপদেষ্টা। নতুন এই সরকারের শপথ গ্রহণের পরই স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন।
বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।-খবর তোলপাড়।
সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনূসের আহ্বানকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানিয়ে মিলার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. ইউনূস বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ তৈরি করতে চায়। তাই আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কূটনীতিক হেলেন লা ফাভে উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান ম্যাথিউ মিলার।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাহলে আপনি কি স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমাদের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং আমরা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাই। আমরা অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
এর আগে এক সাংবাদিক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে আজ শপথ নিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনও যোগাযোগ হয়েছে কি না বলতে পারেন?
জবাবে মিলার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে, এবং আমাদের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ তার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আমি জানি না শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে তিনি তার সাথে কথা বলেছিলেন কিনা, তবে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস বা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঠিক কী ধরনের যোগাযোগ হয়েছে জানতে চান ওই সাংবাদিক। তিনি বলেন, যোগাযোগ প্রকৃতি কেমন ছিল? আমি স্পেসিফিকেশন চাইছি না, কিন্তু এটা কি বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে নাকি মার্কিন স্বার্থের বিষয়ে কথা হয়েছে?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, আমি ব্যক্তিগত কূটনৈতিক কথোপকথনের কথা বিশদভাবে বলতে যাচ্ছি না, তবে স্পষ্টতই একটি বিষয় আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে– অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করবে এবং আমরা এটিই দেখতে চাই।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ইইউ বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের জটিল এ কাজে তাদের সহায়তা করা হবে। এ প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন। এরপর দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ এই সরকারে আছেন ১৭ জন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ১৩ জন (তিনজন ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি) উপদেষ্টাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।