সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন
এনামুল হক/রফিকুল ইসলাম, রাজারহাট(কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চাকিরপশার তালুক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সাফা পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড’র এর পার্টনারসিপ ব্যবসা নিয়ে সৃষ্ট ঘটনার সুরাহা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত রাজারহাট থানার অফিসার্স ইনচার্জ এর রুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে থানার ওসিসহ রাজারহাট দুই প্রেসক্লাবের সাংবাদিক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, রাজারহাট চাকিরপশার তালুক এলাকায় অবস্থিত মোঃ শামছুল হক (সাবেক চেয়ারম্যান) এর নামীয় হক ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিডেট নামে একটি ফিড মিল পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। পরবর্তীতে ওই মিলটি জায়গায়সহ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান নামে এক ব্যবসায়ীর সাথে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ২৮ এপ্রিল ২০২২ সালে চুক্তিবদ্ধ হন।
চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান ওই পরিত্যক্ত ফিড মিলটি চালু করার জন্য যাবতীয় সংস্কার কাজ করেন। এর মধ্যে গভীর নিচু স্থানে বালু দিয়ে ভরাট, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, বাউন্ডারি ওয়াল সংস্কার, গোডাউন ঘর ঢালাইসহ বিভিন্ন সংস্কার, ফিড উৎপাদন মিলের বড় কম্প্রেসার, ৪টি ডাই ক্রয়, ইনভেটর ক্রয়, রুমের প্যানের বোর্ডের এসি ক্রয়, ল্যাব রুম তৈরি, তার যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং বয়লার ডিজেল থেকে সিএনজিতে রুপান্তরিতসহ নানানবিদ সংস্কার করেন। প্রতিষ্ঠানটির মালামাল উৎপাদনের জন্য যাবতীয় অনুমোদনের কাগজপত্রাদি নেয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনও করেন। উপরউল্লিখিত কাজ ও জামানাত এবং বিদ্যুৎ অফিসে জামানতসহ আব্দুস সোবহানের মোট ব্যায় হয় ৫৫ লাক ৫শ ৬০ টাকা। এই ব্যায়গুলোর আলাদা আলাদাভাবে ৩শ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্পাম্পে উভয় পক্ষের সম্মতিততে পূর্বের চুক্তিপত্রকে বাতিল করে পুনঃরায় ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে নতুন চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়াও ফিড মিলটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরবর্তীতে আরও কিছু ব্যায় হয়।
এরমধ্যে ফিড মিলটির ব্যাপকভাবে উৎপাদনের জন্য চায়না থেকে একটি বড় মেশিন আমাদানির প্রক্রিয়া শুরু করেন ওই ব্যবসায়ী। এর মধ্যে গত ২০শে ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ পর্যন্ত ফিড মিলটি নমুনা স্বরুপ উৎপাদনে যায়। এই উৎপাদনে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে কুড়িগ্রাম ও রাজারহাট প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর লাইসেন্স যাচাইয়ের জন্য অত্র কারখানায় পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু সে সময় পর্যন্ত প্রাণী সম্পদসহ অন্যান্য দপ্তরের লাইসেন্স সম্পাদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল। পরে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ল্যাবের যন্ত্রপাতি, ডাক্তার নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
ফিড মিলটি ঠিকমত চালু না হতেই উক্ত প্রতিষ্ঠানের পার্টনার শামছুল হক চেয়ারম্যান লভ্যাংশ নেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আব্দুল মান্নানকেসহ কারখানার অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। এক পর্যায়ে উক্ত বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আব্দুল মান্নান সাফা পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড’র চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহানকে বিষয়টি অবগত করিলে উভয় পার্টনারের মধ্যে সমঝোতা তৈরির লক্ষে কুড়িগ্রাম ২ আসনের এমপি পনির উদ্দিন মহোদয়ের বাসায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উভয় পার্টনারসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সুরাহার জন্য চেষ্টা চালায়। কিন্তু শামছুল হক চেয়ারম্যান তার লভ্যাংশ বিষয় ছাড়া অন্যকোন বিষয় শুনতে অনিহা প্রকাশ করেন। এসময় এমপি পনির উদ্দিন ফিড মিলটি চলমান রাখার স্বার্থে অপর পার্টনার শামছুল হক চেয়ারম্যানকে কিছু সমঝোতার লক্ষে পরামর্শ প্রদান করেন। এসময় শামছুল হক চেয়ারম্যান ঘটনাটি নিরসন না করে জঠিলতা তৈরির লক্ষে কয়েক দিন সময় নিয়ে কালক্ষেপন করা অবস্থায় চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি উক্ত সমঝোতাকে না মেনে গোপনে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে দেন। এরই মধ্যে কাঁচামাল ক্রয় ও বিভিন্ন লাইসেন্সগ্রহনে সময় লাগার কারণে প্রায় ২৫ দিনের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এই কয়েকদিনের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহানের সেখানে সর্বমোট ব্যয় হয় ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
এর মধ্যে ২৫শে মে ২০২৩ইং তারিখ আনুমানিক সকাল ১১ টার দিকে শামছুল হক চেয়ারম্যানসহ ৩ থেকে ৪ ব্যক্তি সাফা পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড কারখানাতে উপস্থিত হয়ে পরিচালক আব্দুল মান্নানকেসহ উক্ত প্রতিষ্ঠানের এমডিকে কারখানা ছেড়ে দেয়ার কথা বলে হুমকিসহ গালিগালাজ করেন। এ বিষয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রাজারহাট থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। যার জিডি নং- ১১২২।
পরবর্তীতে আবারও উক্ত প্রতিষ্ঠানের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে শামছুল হক চেয়ারম্যানও তার ১৫-২০জন লোকজন নিয়ে ৪ মে ২০২৩ইং বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কারখানার গেটের উপরে থাকা প্রায় ১৫ ফিট দৈর্ঘ এবং ৫ প্রস্থ্য সাফা পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড এর সাইনবোর্ডটি ভাংচুর করেন। এবং ওই স্থানে হক ট্রেডার্স লিঃ এর একটি সাইন টাঙ্গানোর ঘটনায় কারখানার পরিচালক আব্দুল মান্নান রাজারহাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের বিষয়ে রাজারহাট থানার অফিসার্স ইনচার্জ মহোদয় অবগত হলে পরবর্তীতে থানা কর্তৃক উক্ত অভিযোগ তদন্ত গেলে উপরেউল্লিখিত ঘটনাটির সত্যতা পায় এবং বিষয়টি যাতে আর বাড়াবাড়ি না হয় সে বিষয়ে উভয়পক্ষকে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।
পরবর্তীতে থানার অফিসার্স ইনচার্জের নিকট অপর পার্টনার শামছুল হক চেয়ারম্যান স্বেচ্ছায় উক্ত ঘটনার বিষয়ে বসার প্রস্তাব দিলে তাতে সমর্থন জানিয়ে উভয় পক্ষকে রাত ৯টার দিকে থানায় আসার জন্য বলেন। পরে সেখানে, দুই পার্টনার, স্থানীয় সকল সাংবাদিক, গণমান্যব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার সমঝোতা বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে ৩টি বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১. উভয় পক্ষ যৌথভাবে ব্যবসায়ে সম্মতি হলে জয়েন্ট স্টকের নীতিমালার আলোকে ব্যবসা পরিচালনা, ২. এমডি আব্দুস সোবহান সাহেবকে মাসিক ভাড়া ও ৩. শামছুল হক চেয়ারম্যান নিজে প্রতিষ্ঠান চালাবেন এবং সেখানে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান পুণরায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন এবং এর বিনিময়ে বছরে ৩০ লাখ লভ্যাংশ দিবেন। এই তিনটি বিষয়ে উভয় পক্ষ আগামী ৭ দিনের মধ্যে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
হক ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিডেট এর মালিক শামছুল হক বলেন, সাফা পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড’র এর মালিক শেয়ার শর্ত ভঙ্গ করায় আমার মিলের জিনিসপত্র আমি ফিরিয়ে নেই। বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি বৈঠক হয়েছে।
এদিকে, রাজারহাট থানায় বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ আব্দুল্লাহিল জামান।