বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০৩ অপরাহ্ন

নোটিশ:
দৈনিক তোলপাড় পত্রিকা থেকে আপনাকে স্বাগতম। তোলপাড় পত্রিকা আপনার আমার সবার। আপনার এলাকার উন্নয়নের ভূমিকা হিসেবে পত্রিকাটির মাধ্যমে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি।  এ জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা-বিভাগ-কলেজ ক্যাম্পাসসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাংবাদিক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পত্রিকাটির পর্ষদ।  আগ্রহী হলে আপনিও এক কপি রঙিন ছবিসহ নিম্ন ঠিকানায় সিভি প্রেরণ করে নিয়োমিত সংবাদ পাঠাতে পারেন। সেই সাথে সারা বিশ্বে আপনার এলাকার প্রতিষ্ঠানের প্রচারেরর জন্য  ৫০% কমিশনে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।

কক্সবাজার উপকূলের অধিকাংশ সাইক্লোন সেল্টারের বেহাল দশা

শাহীন, কক্সবাজার:
কক্সবাজার জেলায় সাড়ে ৫ শতাধিক সাইক্লোন সেল্টারের অধিকাংশ সাইক্লোন সেল্টার এখন অবৈধ দখলে। অন্য সাইক্লোন সেল্টারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত ১৩ বছরে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় অন্তত ৭৫টি সাইক্লোন সেল্টার কাম বিদ্যালয় নির্মিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন উপকূলে বসবাসরত লোকজন। এ ছাড়া অবৈধ দখলে থাকা সাইক্লোন সেল্টারগুলো দখল মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহতা এখনো ভুলেনি উপকূলের লোকজন। সেই ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের পর উপকূলীয় এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা সাড়ে ৫ শতাধিক সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করলেও শতাধিক সাইক্লোন সেল্টার অবৈধ দখলে চলে গেছে। অন্য সাইক্লোন সেল্টারগুলোতেও প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় ব্যবহার করতে ভয় পায় উপকূলের লোকজন।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা সাইক্লোন সেল্টার দখল করে কেউ বানিয়েছেন গোয়াল ঘর, কেউ বানিয়েছেন বসতবাড়ী। উপকুলীয় এলকার কয়েকটি ইউনিয়নে আসন্ন বর্ষাতেও জোয়ার ভাটা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই তা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে আর খবর রাখে না কেউ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন ধলঘাটার চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, ৯১ সালের ভয়াবহতার স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি ধলঘাটার মানুষ। ওই ঘুর্নিঝড়ে ধলঘাটার প্রায় প্রতিটি পরিবার চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৯০ ভাগ পরিবারের কেউ না কেউ ওই ঘুর্নিঝড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃতের সঠিক কোন হিসাব না থাকলে স্থানীয় লোকজনের হিসাবে প্রায় ৭ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এপ্রিল মাস আসলেই ধলঘাটায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ওই ঘুর্নিঝড়ের প্রায় ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও অনেক পরিবার তাদের ক্ষতি পুষিয়ে আনতে পারেননি। এত ভয়াবহতা সত্তেও এখনো স্থাপিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লেন সেল্টার।

ঘুর্নিঝড় পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও সহযোগী সংস্থা কর্তৃক কয়েকটি সাইক্লোন সেল্টার নির্মিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। সাইক্লোন সেল্টার গুলোর এমন অবস্থা হয়েছে যে গুলোতে লোকজন আশ্রয় নিতে ভয় পাচ্ছে। যেগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে সেগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নানা অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। উল্টো স্থানীয় সাংসদ তাদের ওখানে গিয়ে খাবার খাই। সুতরিয়া বাজারের ও সরাইতলার সাইক্লোন সেল্টার এখন নেই। নতুনভাবে কোন সাইক্লোন সেল্টার এই এলাকায় নির্মিত হয়নি। বর্তমানে যা সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে তার অধিকাংশই ব্যবহারের উপযোগী নয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় মানুষ ওখানে উঠতে ভয় পায়।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হায়দার জানান, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ সাইক্লোন সেল্টার ব্যাবহার কিংবা সংস্কারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কয়েকটি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে। তিনটি সংস্কার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছি। এছাড়াও ২৯ এপ্রিলের ঘুর্নিঝড়ে গৃহহীন হয়ে পড়া অনেকেই এখনো বসতবাড়ী গড়ে তুলতে পারেননি। বর্তমানে বেঁড়িবাধ না থাকায় ও পানি নিস্কাসনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন মাতারবাড়ির মানুষ।

৯১ সালের ঘুর্নিঝড়ে মা, বাবা, চাচা, ও দাদী হারনো শওকত আলী জানিয়েছেন, ২৯ এপ্রিলের দিনটি আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। আমার পরিবারের ৮ সদস্যের মধ্যে কর্তা ব্যক্তিদের যারা বাড়িতে ছিলেন তারা সকলেই মৃত্যু বরন করেছেন। আমাদের বদুয়ার পাড়ায় মানুষ ছিল ১৬৫ জন। তৎমধ্যে ঘুর্নিঝড়ে একই দিনে মৃত্যুবরন করেছেন ১২৫ জন। মাত্র একটি পরিবার ছাড়া অপর সকল পরিবারের একাধীক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এই ভয়াবহ দিনটি আমাদের জন্য শোকবিহল একটি দিন। শুধুমাত্র হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁেচ আছেন ধলঘাটার ১৪ হাজার মানুষ।

কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইলের একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, ৯১ সালের সেই বেদনার স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক পরিবার। ঘুর্নিঝড়ে বসতবাড়ী ও পরিবার পরিজন হারিয়ে অনেকেই আর কুতুবদিয়ায় ফিরে আসেন নি। সেই দিনের ঘুর্নিঝড়ের থাবায় কুতুবদিয়ার মানচিত্র পর্যন্ত পাল্টে গেছে। স্থায়ী লোকজনের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে বেঁড়ীবাধে কিছু কাজ হওয়ায় অন্যত্র চলে যাওয়া লোকজন এখন ফিরে আসতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই নির্মিত হয়েছে ২/৩টি করে সাইক্লোন সেল্টার কাম বিদ্যালয়। তবে আগের যেগুলি ছিল তার অধিকাংশই জবর দখল করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া ‘মোখা’ বর্তমানে যে গতি তাতে আগামী রোববার আঘাত হানার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এজন্য কক্সবাজারসহ দেশের সকল সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মোখার প্রভাবে সাগর কিছুটা উত্তাল হলেও স্বচ্ছ আকাশ আর তীব্র দাবদাহ বিরাজ করছে।

সৈকতে লাল পতাকা টানানো হয়েছে। সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, তীব্র দাবদাহের পাশাপাশি সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে।

আর পর্যটকদের সর্তক করতে লাল পতাকা টানানো হয়েছে। পর্যটকদের হাটু পানির নিচে নামতে দেওয়া হচ্ছে না।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সকল উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার উপকূলীয় এলাকার সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয়সহ ৫৭৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১০ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৪৯০ মেট্টিক টন চাল, ৭ মেট্টিক টন শুকনো খাবার ও ১৯৪ বান্ডিল ঢেউ টিন মজুদ রাখা হয়েছে।

উপকূলে ফিরছে ফিশিং ট্রলার:

ঘূর্ণিঝড় মোখা পরিস্থিতি সাগরে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন কক্সবাজারের জেলেরা। এরই মধ্যে উপকূলে নোঙর করেছে তিন হাজারের কাছাকাছি মাছ ধরার ট্রলার।

বৃহস্পতিবার কক্সবাজার বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেখা যায়, সাগরে মাছ শিকারে যেতে উপকূলে ট্রলারে মজুত করা হয়েছিল রসদ। সব প্রস্তুতি শেষে জেলেরাও উঠেছিলেন ট্রলারে। কিন্তু সাগরে মাছ শিকারে আর যাচ্ছেন না। বাঁকখালী নদীর মোহনায় ফিরছে মাছ ধরার একের পর এক ট্রলার। সাগর থেকে ফিরে আসা জেলেরা বলছেন, সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে তাই উপকূলে ফিরেছেন তারা।

এফবি তরঙ্গ ট্রলারের মাঝি আবু তৈয়ব বলেন, সাগর উত্তালের পাশাপাশি বাতাস বেড়েছে। তাই মাছ শিকার না করে ২১ জেলে নিয়ে উপকূলে ফিরে আসি।

আরেক জেলে ছৈয়দ আলম বলেন, জীবন বাঁচানোর জন্য উপকূলে অবস্থান। ঘূর্ণিঝড় কেটে গেলে তারপর সাগরে মাছ শিকারে যাব।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, যে ট্রলারগুলো এখনো সাগরে মাছ শিকার করছে তারা সংকেত বাড়লে উপকূলে ফিরে আসবে। এরই মধ্যে তাদেরকে উপকূলে ফিরে আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার উপকূলে নোঙর করেছে প্রায় তিন হাজার ট্রলার। এখনো সাগরে আছে দুই হাজারের বেশি ট্রলার।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামমছুদ্দৌজা নয়ন জানিয়েছেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি শরনার্থী ক্যাম্প রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকালে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তুতি সভা হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে বংগোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে আগামী এক সপ্তাহ সাগর উত্তাল থাকবে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছ। সেইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

দৈনিক তোলপাড় এর পক্ষ থেকে সকল পাঠক লেখক সাংবাদিক ও শুভানুধায়ীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, পত্রিকাটি বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগ জেলা উপজেলা থানা কলেজ ক্যাম্পাস-এ এক ঝাঁক তরুন-তরুনী সাংবাদিক নিয়োগ করতে যাচ্ছে ।

আগ্রহীরা দ্রুত এক কপি ছবিসহ প্রধান সম্পাদক বরাবর আবেদন করুন.. আবেদন পাঠানোর ঠিকানা-dailytolpercv@gmail.com

এছাড়া বিশেষ ৫০% ছাড়ে সারাবিশ্বে প্রচারের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা-dailytolpernews@gmail.com যোগাযোগ করুন-+88 01915394614, +8801719026700


© All rights reserved © 2017 তোলপাড়