বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:২৫ অপরাহ্ন
সংবাদদাতা, পঞ্চগড়:
ভারতীয় সীমান্তে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার নয় মাস পর আব্দুস সালাম নামে এক যুবককে বাংলাদেশে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। শনিবার(২০মে) সন্ধার দিকে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা সীমান্তের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তার মরদেহ গ্রহন করেন পরিবারের লোকজন। সালামের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের পতিপাড়া এলাকায়। সে ওই এলাকার শহিদুল ইসলামে ছেলে।
লাশ গ্রহনের সময় বিজিবি, বিএসএফ সদস্য ছাড়াও জনপ্রতিনিধি ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শনিবার রাতেই তার মরদেহ বাংলাবান্ধা থেকে বাসায় নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। রাতে সালামের মরদেহ বাসায় আসতেই কান্নার রোল পড়ে যায়। স্ত্রী ও তার মায়ের আর্তনাদে যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যায়। এদিকে শেষ বারের মত নিহত আব্দুস সালামকে দেখতে তাঁর বাসায় ছুটে যান আত্মীয়-স্বজন সহ স্থানীয়রা। পরে গেল রাতে তার জানাযা শেষে মরদেহ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
নিহতের পরিবার জানায়, গত বছরের ২৪ আগষ্ট ভোরে নীলফামারী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন পঞ্চগড় উপজেলা সদরের অমরখানা সীমান্তের বিপরীত ভারতের বড়ুয়াপাড়া সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশী যুবক আব্দুস সালামসহ তিন যুবককে ধাওয়া দেন স্থানীয়রা। এ সময় অন্য দুই জন পালিয়ে গেলেও আব্দুস সালামকে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে ভারতের নাগরিকরা। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশী ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত আব্দুস সালামের বাড়ি উপজেলা সদরের সাতমেরা ইউনিয়নের কাহার পাড়ায়। ঘটনাটি ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়া প্রচার হলে নিহতের পরিবার বিষয়টি জানতে পারেন এবং মরদেহ ফেরতের জন্য বিজিবির মাধ্যমে ভারতের কাছে আবেদন করে। দুই দেশের আইনি জটিলতা এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে নিহতের এক ভাই ভারতে গিয়ে শনিবার সন্ধায় তার মরদেহ নিয়ে আসেন।
নিহত সালামের বড়ভাই আলিম হোসেন বলেন, আমার ভাইয়ের কোন খোঁজ না পেয়ে পরে জানতে পারি তাকে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে আমার ভাইয়ের লাশ ফেরতের জন্য বিজিবিসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ফিরেছি। দীর্ঘদিন পর হলেও স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় লাশ ফেরত পাওয়া গেছে।
নিহত সালামের মা আলেমা খাতুন বলেন, আমার ছেলে ওইদিন রাতে ভাত খেয়ে শুয়ে পড়েছিল। পরে স্থানীয় দুইজন তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সকালে উঠে শুনি সালাম বাসায় নেই। পরে ওইদিন দুপুরে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পাই। আমার ছেলেকে যারা পিটিয়ে মারলো। আল্লাহ তুমি তাদের বিচার করো।
সাতমেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ভারতে গরু আনতে গিয়ে স্থানীয় সালাম নামে একজন মারা গেছেন বলে জানা গিয়েছিল। মরদেহটি ভারতের জলপাইগুড়ি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থায় (ফ্রিজিং করে) রাখা ছিল। এরপর নিহত সালামের মেঝ ভাই আলিম উদ্দীন ভিসা পাসপোর্টের মাধ্যমে ভারতে গিয়ে মরদেহ সনাক্ত করেন। দীর্ঘ ৯ মাস পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করে বিএসএফ ও ভারতীয় পুলিশ। তবে মরদেহ আনার খরচ সালামের পরিবারের পক্ষ থেকেই করা হয়েছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকেই মরদেহ নিয়ে আসা হয়।।
সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস পর নিখোজ আব্দুস সালামের মরদেহ পেয়েছে তার পরিবার। মরদেহ নিয়ে আসার সময় পরিবারের সদস্যদের সাথে পুলিশও ছিল। এ ঘটনায় মরদেহ উদ্ধারের একটি সাধারণ ডায়েরির প্রস্তুতি করা হবে।