মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২২ অপরাহ্ন
সংবাদদাতা, রাবি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভাগের ২ সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক হলে অধ্যাপক এনামুল হক। তিনি গত রোববার এক শিক্ষককে যৌন হয়রানি করেন। পরে মঙ্গলবার বিভাগের আরেক শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে এনামুল হক একই আচরণের পুনরাবৃত্তি করলে, এঘটনায় বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়, মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুর ২টার দিকে বিভাগীয় সভাপতির অফিসকক্ষে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকগণের উপস্থিতিতে বিভাগীয় শিক্ষক অধ্যাপক এনামুল হক বিভাগের আরেক নারী শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে অশোভন ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণ ও ভাষা ব্যবহার করেন। মূলত একাডেমিক বিষয়ে আলোচনার মধ্যে এ রকম নন-একাডেমিক আচরণ ও ভাষা প্রয়োগ করেন ড. এনামুল হক।
অভিযোগ পত্রে আরও বলা হয়েছে, আমরাসহ (স্বাক্ষরকারীরা) পনেরজন বিভাগীয় শিক্ষক ঐ সময় কক্ষে উপস্থিত ছিলাম। সকলের সামনেই তিনি তার পরনের প্যান্ট খোলার ভঙ্গি করে বলেন, আমার সবসময় খোলা থাকে, এবার তোরটাও খুলে ছাড়ব। এরকম বলতে বলতে নিজের কাপড় খোলার চেষ্টা করে। এ সময় অন্য সহকর্মীরা তাকে নিবৃত্ত করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার (২৩ মে) অনুষ্ঠিত একাডেমিক কমিটির সভাশেষে সভাপতি বিভাগের সকল শিক্ষককে বসতে বলেন এবং ড. এনামুল হককে তিনি সেদিন যে যৌন হয়রানিকমূলক আচরণ করেছেন, ভবিষ্যতে এ আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য বললে তিনি আবারও অশোভন আচরণ করে বলেন যে “আমার বাল ছিড়ে নিস” এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন।
ওই অধ্যাপকের আচরণকে অশালীন যৌন হয়রানিমূলক উল্লেখ করে অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, আমরা এধরণের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তার এহেন ন্যাক্কারজনক আচরণের সুষ্ঠু বিচার ও শাস্তি দাবি করছি। হাইকোর্টের রায়ের আলোকে প্রণীত যৌন হয়রানি ও নিপীড়ণ নিরোধ নীতিমালার আওতায় তার আচরণ কার্যত: যৌন হয়রানির সামিল। কর্মক্ষেত্রে তার এহেন আচরণ সকল নারী শিক্ষকের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অতএব, আমরা এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করত: তার শাস্তি দাবি করছি।
উপাচার্য বরাবর দেওয়া ওই অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকরা হলেন- মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া, একই বিভাগের অধ্যাপক নাজমা আফরোজ, অধ্যাপক আঞ্জুমান শিরীন, অধ্যাপক সাবিনা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক শিরি ফারহানা, সহযোগী অধ্যাপক মো. আশিক শাহরিয়ার, সহযোগী অধ্যাপক মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, সহকারী অধ্যাপক ফিউজি আক্তার এবং প্রভাষক সাদেকা বানু।
অভিযোগের বিষয়ে রাবি উপাচার্যকে ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলা ও রাবি শাখা এবং বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক এনামুল হক তার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, এটা মূলত একাডেমিক বিষয়ের একটা মিটিং ছিল। মিটিংয়ে একাডেমিক বিষয়েই পক্ষে-বিপক্ষে কথা হচ্ছিল। সেখানে উত্তেজনাপূর্ণ কিছু কথাবার্তাও হয়েছে। এ সময় বিভাগের প্রায় সকল শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। ওই সময়কার কথাবার্তাগুলো যদি যৌন হয়রানিমূলক আচরণ হয়ে থাকে, তাহলে আমি শাস্তি মাথা পেতে নিবো। তবে, আমার কথাবার্তাগুলো যৌন হয়রানিমূলক নয় বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মঙ্গলবার বিকেলে উপাচার্য দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ধরণের বিষয়গুলো নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে সাধারণত লিগ্যাল সেলের পরামর্শ নেওয়া হয়। এ বিষয়েও লিগ্যাল সেলের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।