শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
গ্যালারিতে গর্জন বাড়ছে। কিন্তু প্রত্যেকটা রানে অস্বস্তি। এজবাস্টনে চতুর্থ দিনের শেষেই প্রত্যাশা ছিল রোমাঞ্চকর একটা দিন অপেক্ষা করছে। যদিও বৃষ্টিতে অস্বস্তি বাড়ে। শেষ দিন অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ১৭৪ রান। ইংল্যান্ডের দরকার ৭ উইকেট। দিনের খেলার বেশ কিছু ওভার নষ্ট হয়। অস্ট্রেলিয়ার জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬৭ ওভারে ১৭৪ রান। চাপের মুখে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে দলকে জেতালেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডকে ২ উইকেটে হারিয়ে নাটকীয় জয় তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া।-খবর তোলপাড় ।
২ উইকেট হাতে থাকতেও প্রথম দিন ইনিংস সমাপ্তি ঘোষণা করে ঝুঁকি নিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। তার সেই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে গেল। প্রশ্ন উঠে গেল বেন স্টোকসের ইনিংস সমাপ্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে।
ইংলিশ অধিনায়ক স্টোকসের পরিকল্পনা ছিল প্রথম দিনের শেষ বেলায় কয়েকটা উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলা। কিন্তু তার সেই পরিকল্পনা কাজে লাগেনি। তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৩৮৬ রানে। ৭ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড ২৭৩ রানে গুটিয়ে যায়। সর্বোচ্চ রান করেন জো রুট (৪৬) ও হ্যারি ব্রুক (৪৬)। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স ও নাথান লিঁয় ৪ টি করে উইকেট নেন। অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮১।
জয়ের জন্য ২৮১ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ দিনের শেষে ৩০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তোলে ১০৭। উসমান খোয়াজা ৩১ ও স্কট বোল্যান্ড ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৮৯ রানের মাথায় স্টিভ স্মিথ আউট হওয়ার পর স্কট বোল্যান্ডকে নৈশ প্রহরী হিসেবে মাঠে নামায় অস্ট্রেলিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট।
শেষ দিনে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১৭৪ রান। কিন্তু পঞ্চম দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি। একটা সময় মনে হচ্ছিল পঞ্চম দিনের খেলা হয়তো ভেস্তে যাবে। বৃষ্টি থামলে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর খেলা শুরু হয়। দিনের অষ্টম ওভারে নৈশপ্রহরী স্কট বোলয়ান্ডকে (২০) তুলে নেন স্টুয়ার্ট ব্রড।
বোল্যান্ড আউট হওয়ার পর ট্র্যাভিস হেডও (১৬) দলকে বেশিক্ষণ টানতে পারেননি। হেড আউট হওয়ার অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যান খোয়াজা ও ক্যামেরন গ্রিন। ৬৬ বলে ২৮ রান করে আউট হন গ্রিন। ৭ ওভার পরেই স্টোকসের বলে আউট হন খোয়াজা। ১৯৭ বলে ৬৫ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন তিনি।
ইংল্যান্ডের কাছে সুযোগ ছিল দ্বিতীয় নতুন বল নেয়ার। অবশেষে দিনের খেলার ১২ ওভার বাকি থাকতে দ্বিতীয় নতুন বল নেয় ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার তখন প্রয়োজন আর ২৭ রান। ক্রিজে নাথান লিয়ঁ এবং প্যাট কামিন্স জুটি। যে কোনও দিকেই ঝুঁকতে পারে ম্যাচ। বিশেষ করে ২০০৫ সালের সেই ম্যাচের পরিসংখ্যান যেমন ছিল। ২৮২ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ২ রানে হেরেছিল অজিরা। তবে দ্বিতীয় নতুন বলে নাথান লিয়ঁ অনবদ্য বাউন্ডারি মারায় ক্রমশ যেন ইংল্যান্ড শিবিরে হতাশা ঘিরে ধরে। ক্রিকেটে সবই সম্ভব। জয়সূচক রান না আসা অবধি ভরসা নেই। একদিকে স্টুয়ার্ট ব্রড, অন্যদিকে ওলি রবিনসন। ২৩ রান, ২ উইকেট। প্যাট কামিন্স-নাথান লিয়ঁ জুটি ধীরে ধীরে লক্ষ্যের দিকে এগচ্ছিলেন।
প্রতিটা রান কত জরুরি জ্যাক ক্রলির ফিল্ডিং মিসে টের পেল ইংল্যান্ড। প্যাট কামিন্সের ড্রাইভ, হাওয়ায় ছিল। ক্যাচের সুযোগ ছিল না। বাউন্ডারি লাইনে বল অবধি পৌঁছলেও বাঁচাতে পারলেন না ক্রলি। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭ রানে। তখন পুরনো মুহূর্ত ভেসে আসছে ইংল্যান্ডের। নিজের বলে ক্যাচ মিস হয়েছিল রুটের, বেন স্টোকস অনবদ্য একটা ক্যাচের চেষ্টা করছিলেন, বল হাতে এলেও জমেনি। সেই দুটো হলে, কী হতে পারতো! স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে মিড অনের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি নাথান লিয়ঁর। সকলেই অবাক তার শট দেখে। লিয়ঁর অভিব্যক্তিতে কোনও বদল নেই। স্পেশালিস্ট ব্যাটারের মতোই খেলছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন তখন ৬ রান। ইংল্যান্ড শিবিরে প্রত্যাশা, যদি ২০০৫ সালের পুনরাবৃত্তি হয়! টিম মিটিং শুরু হয় ইংল্যান্ডের। কিন্তু রবিনসনই বোলিং কন্টিনিউ করেন। ব্রড বেছে নেন শর্ট পিচ ডেলিভারি। শর্ট লেগে ওলি পোপ। যদি কিছু হয়! তিনটে সিঙ্গল এবং প্যাট কামিন্সের ব্যাটের কানায় লেগে বল বাউন্ডারি লাইনে পৌঁছতেই মহাকাব্যিক জয় অস্ট্রেলিয়ার। নবম উইকেটে ৫৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি প্যাট কামিন্স-নাথান লিয়ঁর।
৭৩ বলে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন কামিন্স। ২৮ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন লিঁয়। ৬৪ রানে ৩ উইকেট নেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ৪৩ রানে ২ উইকেটন নেন রবিনসন। ১টি করে উইকেট নেন মইন আলি, জো রুট ও বেন স্টোকস।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্টের সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস: ৮ উইকেটে ৩৯৩ রানে ডিক্লেয়ার (জ্যাক ক্রলি- ৬১ রান, রুট- ১১৮ রান, জনি বেয়ারস্টো- ৭৮ রান, নাথান লিয়ন- ১৪৯ রানে ৪ উইকেট)।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস: ৩৮৬ রানে অল-আউট (খোয়াজা- ১৪১ রান, হেড- ৫০ রান, ক্যারি- ৬৬ রান, কামিন্স- ৩৮ রান, ব্রড- ৬৮ রানে ৩ উইকেট, রবিনসন- ৫৫ রানে ৩ উইকেট)
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস: ২৭২ রানে অল-আউট (রুট- ৪৬ রান, হ্যারি ব্রুক- ৪৬ রান, স্টোকস- ৪৩ রান, কামিন্স- ৬৩ রানে ৪ উইকেট, লিয়ন- ৮০ রানে ৪ উইকেট)।
অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস: ৮ উইকেটে ২৮২ রান। (খোয়াজা- ৬৫ রান, কামিন্স ৪৪ অপরাজিত)