নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পতনের দুই মাস। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি উঠেছে। তবে কেউ বলছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন। আবার কেউ বলছেন, ভোট নিয়ে তাড়াহুড়া না করে দীর্ঘ সময় নিয়ে সংস্কারের পরই নির্বাচন। নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এই বিতর্কের মধ্যেই মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিতকরণে নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের রুপরেখা তৈরি করবেন। ৩১ ডিসেম্বরের (তিন মাস) মধ্যেই সংস্কার প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেবেন। অতঃপর কমিশন সংস্কার করে নির্বাচন কমিশন পুণর্গঠন করা হবে। –খবর তোলপাড়।
নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়েই নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টাইমফ্রেম দেবেন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার, নতুন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি এক বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তিনি অনেক আগেই নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের কিছু কাজ করে রেখেছেন। ফলে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের কথা চিন্তাভাবনা করে বলেছেন।
শুধু তাই নয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের নিউজ আউটলেট এনএইচকে ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ‘দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের’ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচন নিয়ে অন্যেরা যাই বলুক না কেন অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ছক এঁকেই সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছেন। ফলে আজ থেকেই নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেল।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কখন হবে এটা আমার জানার কথা নয়। আমার ধারণা, সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারিত হবে। তবে নির্বাচন কমিশন সংস্কারে আমাদের ৯০ দিন সময় দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও সরকারের মধ্যে সংলাপ হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থার সব দিক নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করব এবং এর ভিত্তিতে সুপারিশ প্রণয়ন করব।
গত ১৯ জুলাই ৬টি সেক্টরে সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রফেসর আলী রিয়াজ দায়িত্ব পালন করবেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদারে নেতৃত্বাধীন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের অন্যান্য সদস্য হিসেবে কাজ করার কথা রয়েছে, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, নির্বাচন কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ড. আবদুল আলীম, আন্তর্জাতিক শাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন এবং লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমানের।
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেঁধে দেয়া সময় ৯০ দিনের মধ্যে সংস্কারের প্রস্তাবনা জমা দিতে হবে। গতকাল প্রধান উপদেস্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, মঙ্গলবার থেকে ছয় কমিশনের কাজ শুরুর কথা। কিন্তু একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদ আরেক দফা আলোচনা করতে চাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো এখানে স্টেকহোল্ডার। তাদের সঙ্গে আলাপ হবে। অনেক কিছুতে তাদের মতামত চাওয়া হবে। এ আলোচনা দ্রুতই হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরই কমিশনগুলো (চূড়ান্তভাবে) কাজ শুরু করবে।
এদিকে সেনাপ্রধানের সংস্কার করে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান উপদেষ্টার ১৮ মাস সংস্কারের পর নির্বাচন বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত ১৮ মাস ধরে সংস্কার করে পরে নির্বাচন নাকি ১৮ মাসের মধ্যে সংস্কারের পর নির্বাচন এই টাইমফ্রেম নিয়ে ধোঁয়াশা চলছে।
এ প্রসঙ্গে জাহিদ উর রহমান নিজের ইউটিউবে বলেছেন, নির্বাচন ও সংস্কার ১৮ মাসের মধ্যে নাকি সংস্কার ১৮ মাস অতপর নির্বাচন বিষয়টি জাতির কাছে পরিস্কার করা উচিত। কারণ সেনাপ্রধান ১৮ মাসের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচনের কথা বলেছেন। অথচ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১৮ মাস সংস্কারের পর নির্বাচন। জাতির কাছে টাইমফ্রেমের বিষয়টি পরিস্কার হওয়া দরকার।