মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন

৫০ কেজি ধানের দুর্গাপ্রতিমা, নজর কাড়ছে সবার

রিপোর্টারের নাম / ২০১ টাইম ভিউ
Update : শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

সংবাদদাতা, নাটোর:

এক একটি ধান গেঁথে গেঁথে তৈরি করা হয়েছে দুর্গাপ্রতিমা। এক মাসের বেশি সময় ধরে ধানে গড়া এই দুর্গাপ্রতিমা দেখে মনে হবে যেন সোনা দিয়ে মোড়ানো। ধানে গড়া দুর্গাপ্রতিমা যেন সোনার আলোয় বানানো এক চিরায়ত বাংলার মুখ। ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’ কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের এই শাশ্বত আহ্বান যেন ফুটে উঠেছে প্রতিমার গোটা অবয়ব জুড়ে।

এবার শারদ উৎসবে নাটোর শহরের লালবাজারের রবি সুতম সংঘের এই দুর্গাপ্রতিমার মৃন্ময় রূপের দ্যুতি ছড়িয়েছে পুরো জেলায়। এমন শৈল্পিক কারুকাজে মুগ্ধ হচ্ছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।

এই শৈল্পিক প্রতিমা গড়েছেন লালবাজার এলাকার প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল। তিনি বলেন, একমাসের বেশি সময় ধরে চেষ্টার ফসল হিসেবে ব্যতিক্রমী দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রতিমাটির মাটির কাজ শেষ করতে চার জন প্রতিমাশিল্পী এক মাসের বেশি সময় লেগেছে। বিশেষভাবে ছোট ছোট ধান বসানো হয়েছে ফুলের মতো করে। এর জন্য ধান লেগেছে প্রায় পঞ্চাশ কেজির মতো। এরপর রং-তুলির আঁচরে চোখ-মুখসহ প্রতিমার আদিরূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বিশ্বজিৎ পাল আরও জানান, এই মণ্ডপে দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুর, মহিষাসুর প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট ও বিচালির ফ্রেম বা কাঠামো তৈরি করা হয়। পরে তাতে মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি আনা হয়। সেগুলো শুকিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে মাটি নরম থাকা অবস্থায় প্রতিমাজুড়ে ধান বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ধান এমনভাবে বসানো হয়েছে যাতে দেখলে মনে হবে প্রতিমাগুলো সোনায় মোড়ানো।

ধানে গড়া এই দুর্গাপ্রতিমা পূজিত হবেন রবি সূতম সংঘের মণ্ডপে। পূজামণ্ডপটি নাটোর শহরের লালবাজার কদমতলায় অবস্থিত।

এ বিষয়ে রবি সুতম সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ রায় বলেন, ‘রবি সুতম সংঘ প্রতিবছরই নিত্য নতুন দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরে আমরা ধান দিয়ে প্রতিমা তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করি। ধান দিয়ে প্রতিমা নির্মাণ করাটা খুব সহজ কাজ নয়। আমরা প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পালের সঙ্গে আলোচনা করলে তিনি এই প্রতিমা তৈরি করতে সম্মতি দেন। প্রতিমাশিল্পী একটি করে ধান সুনিপুণভাবে থরে থরে সাজিয়ে প্রতিমাকে সুন্দর করে তুলেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিমাকে ভিন্ন আদলে তুলে ধরার প্রয়াসে ধান ব্যবহার করা হয়েছে। যেন সোনালি আভা ফুটে ওঠে। এছাড়া ধান গ্রামবাংলার মানুষের কাছে সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্যের স্মারকও বটে। ধান দিয়ে জেলাতেই প্রথম এখানে প্রতিমা তৈরি হয়েছে।’

এবার নাটোর জেলায় ৩৫৪টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হচ্ছে। গত বছরের থেকে এবার ৩৮টি দুর্গাপূজা কম হচ্ছে। নাটোর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকার কারণে এ বছর পূজা কম হচ্ছে। তবে নাটোরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাছুদুর রহমান বলেন, ‘পূজা মণ্ডপের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। পূজা মণ্ডবে নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। এ ছাড়াও পূজা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বিক নিরাপত্তার কাজের নিয়োজিত থাকবে।’

এদিকে আগামী মঙ্গলবার দেবী দুর্গার বোধন ও ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর ১৩ অক্টোবর রোববার বিজয় দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর