বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদদাতা, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। ক্লাস করতে না পেরে শিক্ষার্থীরা কলেজ থেকে ফিরে যান।
উপজেলার রাবাইতারী আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ নিয়ে টানাটানির ঘটনায় গত তিনমাস ধরে বেতন-বোনাস পায় না শিক্ষক ও কর্মচারীরা। বেতন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
সোমবার (১০ জুলাই) সকালে বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। তালা লাগানোর ঘটনায় শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে ক্লাস করতে না পেয়ে ফিরে যান। পরে খবর পেয়ে কলেজের সভাপতি মাহফুজার রহমান আসলে ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়। এরপর সভাপতি অধ্যক্ষের রুমে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হোসেন আলী ব্যাপারী অবসরে গেলে অধ্যক্ষের পদ খালি হয়। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে সহকারী প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের বিধান থাকলেও গভর্নিং বডি ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক এস এম রেজাউল হক মনিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। এ বিষয়ে দায়িত্ব বঞ্চিত সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দপ্তর দায়িত্ব প্রদানের নির্দেশনা পত্র প্রেরণ করলেও রফিকুল ইসলাম সরকারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেনি কলেজ গভর্নিং বডি। যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন। এরপরেও সংকটের সমাধান না হলে। সহকারী অধ্যাপকের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে কুড়িগ্রাম সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন রফিকুল ইসলাম। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত সহকারী অধ্যাপক এস এম রেজাউল হকের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব বাতিল করে সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করার জন্য কলেজ গভর্নিং বডিকে নির্দেশ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত কলেজ গভর্নিং বডির সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের নিকট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ হস্তান্তর করা হয়। এই দুই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদের দ্বন্দ্বে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।
কলেজের প্রভাষক ও টিআর প্রতিনিধি জুয়েল সদ্দার বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষে দায়িত্ব পালন নিয়ে সংকট তৈরি হওয়ায় তিন মাস ধরে সবার বেতন বন্ধ। সোমবার সকালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানে তালা দেন। ফলে কলেজে পাঠদান বন্ধ ছিল। আশাকরি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নুর ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষ যিনি হন না কেন সেটা আমাদের বিষয় না। আমরা ছোট পদে চাকরি করি। তিন মাস ধরে বেতন-বোনাস পাইনি। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। সামনে একটা ঈদ গেল পরিবারকে ভাল কিছু খাওয়াতে পারিনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কলেজে তালা দিয়েছি। তালা দেওয়ার কারণে কোনো প্রকার পাঠদান হয়নি। পরে সভাপতির আশ্বাসে দুপুর ১২ টায় তালা খুলে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে গভর্নিং বডি জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক এস এম রেজাউল হককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিলে আমি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করি। পরে আদালতের নিদের্শনায় কলেজ গভর্নিং বডি গত ২২ জুনে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে। আমি আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাকে দায়িত্ব দেওয়ায় আগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমার দায়িত্ব পালনের স্থগিত চেয়ে আপিল করেন। আগামী ২০ তারিখ শুনানি হলে, ন্যায় বিচার পাব বলে আশা করি।
এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক এস এম রেজাউল হক মনি বলেন, জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে অত্র প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে। পরবর্তীতে সহকারী প্রধান শিক্ষক আদালতে মামলা দায়ের করলে আমার দায়িত্ব পালন স্থগিত করে সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হলে আমি তার বিরুদ্ধে আপিল করি।
কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মাহফুজার রহমান বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ কর্তৃক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান সম্পর্কিত তথ্য ও পরিপত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন না করায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আদালতের নির্দেশে সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাই রকেট জানান, আদালত যে রায় দেবে আমরা সেভাবেই কাজ করবো। যাতে করে কলেজে পাঠদান ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারে আমরা তৎপর আছি।