মেঘনা থেকে প্রতিদিন বালু লুট হয় ১৫ লাখ টাকার

সংবাদদাতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মেঘনা নদী থেকে অবাধে লুট হচ্ছে বালু। ইজারা ছাড়াই প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে মেঘনায় পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার প্রভাবশালী একটি চক্র। দুই বা আড়াই টাকা ফুট দরে লুটের ওই বালু বিক্রি করা হচ্ছে। সেই হিসেবে ১৫ লাখ টাকার বালু লুটে নেয়া হচ্ছে মেঘনা নদীতে প্রতিদিন।
এতে সরকার বিপুল পরিমাণ অঙ্কের রাজস্ব হারালেও বালু লুটপাটে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন লাভবান হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওই চক্রের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। তাছাড়া নৌ ও থানা পুলিশ বালু লুটের টাকার ভাগ পাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার চালিয়ে বালু লুটপাটে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয় কয়েকটি গ্রাম।
জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের চরলাপাং এলাকায় মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন ৫-৭টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর এলাকার একটি বালু খেকো চক্র। এ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে সরকারীভাবে ইজারা দেয়া নবীনগরের ধরাভাঙ্গা নতুন চর ও জাফরাবাদ মৌজার বালুমহাল। অবৈধ বালু উত্তোলনে উচ্চমূল্যে এই বালু মহাল ইজরা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। বাজারমূল্য অনুযায়ী উত্তোলিত বালুর মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। গত প্রায় ২৫ দিন ধরে অবাধে বালু লুট করছে রায়পুরার ওই চক্রটি। আর এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন, রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও মির্জাচর গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম। তার সঙ্গে মির্জাচরের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন বিএনপির কয়েকজন নেতাও আছেন। রীতিমতো অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত ক্যাডার বাহিনীর পাহাড়ায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে বালু উত্তোলন। ফলে ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে চরলাপাং, সাহেবনগর, নাসিরাবাদ, রায়পুরার মির্জাচর ও শান্তিপুরসহ কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রামের বাসিন্দারা নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়ার আতঙ্কে সময় পার করছেন।
চরলাপাং গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গত ২০-২৫ দিন ধরে রায়পুরার লোকজন চরলাপাং সীমানা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে গ্রামের নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছেন। বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়ছে তাদের। ফলে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।
নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরে আলম বলেন, চরলাপাং গ্রামের বেশিরভাগ অংশ নদীবেষ্টিত। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে কৃষি জমি ও ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষজন এসে প্রতিনিয়ত অভিযোগ জানাচ্ছেন।
বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানানো হলে তিনি প্রশ্ন রাখেন যে- আমি কি নদীতে গিয়ে বসে থাকব? আমাদের এলাকাটা যেন বাঁচে, সেজন্য প্রশাসন যেন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে- সেই দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে মেঘনা নদীর ধরাভাঙ্গা নতুন চর ও জাফরাবাদ বালু মহালটি প্রায় ৭০ কোটি টাকায় ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারার এক বছরের মধ্যে ইতোমধ্যে ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। এরমধ্যে ইজারা মূল্য পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় বালু উত্তোলন করতে পেরেছে তারা মাত্র তিন মাস। এ অবস্থায় এই বালু মহালে বালু নিতে আসা ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যাচ্ছে রায়পুরার অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্রটি। তারা নিজেদের কাছ থেকে বালু কেনার জন্য বাধ্য করছে বলে অভিযোগ করেন মুন্সি এন্টারপ্রাইজের লোকজন।
মুন্সি এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নবীর হোসেন বলেন, আমরা যে টাকা দিয়ে বালুমহাল ইজারা নিয়েছি- সেই টাকা তুলতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। এর কারণ হলো চরলাপাংয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। আশপাশের এলাকা থেকে যেসব ক্রেতারা বাল্কহেড নিয়ে আমাদের কাছ থেকে বালু কিনতে আসেন- তাদেরকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নিজেদের কাছ থেকে বালু কিনতে বাধ্য করে রায়পুরার চক্রটি। এটির প্রতিকারে জেলা প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে মদদ এবং কমিশন নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে নবীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু মুছার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ বিষয়য়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জেসমিন সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ইজারা এলাকার বাইরে থেকে কারও বালু উত্তোলন করার সুযোগ নেই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার জব্দসহ আর্থিক জরিমানা করা হয়। শীঘ্রই এ বিষয়ে বৃহৎ আকারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।