অভিযোগের ৩ বছর পার হলেও পীরগঞ্জে ৩শ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার হয়নি

সংবাদদাতা, পীরগঞ্জ(ঠাকুরগাঁও):
পীরগঞ্জ পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রায় ৩শ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার না হওয়ায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভিযোগের ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় অভিযোগকারী খয়রাত আলী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জানা গেছে পীরগঞ্জ পৌরসভার রঘুনাথপুর মহল্লায় ঢাকাইয়া পট্টিতে পেরীফেরি ভূক্ত সরকারি জমিতে প্রায় ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বহুতল, সুসজ্জিত ও বাণিজ্যিক ভবন গুলো দেখলে মনে হয় এসব জমির মালিক ভবন নিমার্ণকারীরা।
আসলে এর চিত্র ভিন্ন। রঘুনাথপুর ঢাকাইয়া পট্টিতে প্রায় ২ শতাধিক বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত জমির মূল্য প্রায় ৩শ কোটি টাকা। বছরের পর বছর অবৈধ ভাবে এই সরকারি জমিতে অনেক বহুতল ভবন নিমার্ণ হলেও নিমার্ণ কাজ বন্ধ করার ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কোন সন্তোষ জনক ভূমিকা পালন করে নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে, দিন দিন ওই জমিতে বহুতল ভবন নিমার্ণে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। পীরগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত আলী সরকারি উক্ত সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ে একাধিক বার লিখিত অভিযোগ করেন।
৩ বছর আগে ভূমি মন্ত্রণালয় ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে নির্দেশ প্রদান করেন। গত ১৪/০৭/২০২২ ইং তারিখে ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কামরুন নাহার একটি পরিপত্র জারি করেন। গত ১৯/০৭/২০২২ ইং তারিখ বিকাল ৪ টায় পীরগঞ্জে এসে সহকারী কমিশনার ভূমি সোহাগ সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগকারীর অভিযোগের সত্যতা পান। মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এরপরেও একাধিক বার জেলা প্রশাসন ও পীরগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী অফিসারের কাযার্লয় হতে একাধিক বার তদন্ত করা হয়। বছরের পর বছর শুধু তদন্তই চলছে।
সরকারি জমি সরকারের নিয়ন্ত্রনে নেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক ঠাকুরগাঁও, উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি, পীরগঞ্জ এখনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে।
ওই জমিতে যেসব ব্যক্তিরা বহুতল, সুসজ্জিত ও বাণিজ্যিক ভবন নিমার্ণ করেছেন তাদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব, বিএনপির নেতা রহমত আলী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান নান্নু, ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন, আব্দুর রশিদ ওরফে রশিদ তহসিলদার (রোকেয়া মার্কেট স্বত্বাধিকারী), বাবলুর রশিদ, দিনাজপুর সরকারি হাসপাতালের ডাঃ কামাল হোসেন, ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, আজিজুল হক ওরফে আইজুল সহ ২ শতাধিক ব্যক্তি। ওই সব ভবন গুলো নিমার্ণ কাজ চলাকালীন সময়ে এলাকার গন্যমান্য লোকজন উপজেলা নিবার্হী অফিসার ইউএনও ও সহকারী কমিশনার ভূমিকে একাধিক বার অভিযোগ করলেও তারা সরকারের স্বার্থে কোন ভূমিকা রাখেননি বলে অভিযোগ পাওয়া উঠেছে।
গত ৩ বছর ধরে অভিযোগের প্রতিকার না পাওয়ায় পীরগঞ্জে দিন দিন সুশীল সমাজের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই ব্যাপারে সহকারী কমিশনার ভূমি এম,এন ইশফাকুল কবির জানান, তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করা হয়েছে।
অপরদিকে ভবন নিমার্ণকারীদের মধ্যে রেজওয়ানুল হক বিপ্লব জানান, উক্ত জমি আগেই আমার দখলে ছিল, আমি পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন তৈরি করেছি। অপর ভবন নিমার্ণকারী রহমত আলী জানান, ওই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। এখন বহুতল ভবন করেছি। বিষয়টি এলাকার সুশীল সমাজ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।