কুরআন-সুন্নাহকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারণের জন্য গণভোট দাবি

সংবিধানে ‘কোরআন ও সুন্নাহ এর পরিপন্থী আইন বাতিল বলে গণ্য হইবে’ মর্মে একটি গণভোট ব্যতিত জাতীয় নির্বাচন নয়। কারণ প্রত্যেকটি বিপ্লবের পর বিপ্লবের স্পিরিট কি হবে এটি নির্ধারণ করা আবশ্যক। যে স্পিরিটের আলোকে পরবর্তী সংবিধান রচনা বা দেশ পরিচালনা করা হবে। এমতাবস্থায় বিপ্লবী সরকারের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কুরআন ও সুন্নাহকে মূলনীতি হিসেবে নির্ধারনের জন্য একটি গণভোটের আয়োজন করা আবশ্যক।-খবর তোলপাড়।
সোমবার ৪ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমী আয়োজিত ‘বিপ্লব, বিপ্লবী সরকার, আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে প্যান ইসলামিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ও সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট মো. মোস্তফা জামাল ভূইয়া এই দাবি জানান।
এডভোকেট মো. মোস্তফা জামাল ভূইয়া বলেন, বিগত স্বৈরশাসককে আরও দুর্বল করতে তিনি সরকারকে নিজেদের বিপ্লবী সরকার ঘোষণা দেওয়া, সংবিধান বাতিল করা; পূর্বের নিয়োগকৃত রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ; স্বৈর শাসনের জন্য দায়ী সকল ব্যক্তিদের বিচারের মুখামুখি করা এবং বিচার কাজ সম্পন্ন করা; ভারতের সঙ্গে সকল বৈষম্যমূলক চুক্তি বাতিল করা এবং মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার আহ্বান জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিজেদের ‘বিপ্লবী সরকার’ বলে ঘোষণা করতে হবে বলে জানিয়েছেন নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমীর সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার। তিনি বলেন, এই সরকারকে নিজেদের বিপ্লবী সরকার বলে ঘোষণা দিতে হবে। এতো রক্ত ঝরার পরে, এত ছাত্র-জনতা পঙ্গু হওয়ার পরে আবারও আমরা সেই চর্বিত চর্বণে শপথ নিলাম৷ দ্বিতীয়ত, সংবিধান বাতিল করতে হবে। বিপ্লবী সরকার হয়ে গেলে এমনিতেও আর সংবিধান থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, দেশটা এখন যেভাবে চলছে, দীর্ঘদিন ধরে অসংগতির মধ্যে ছিলাম, এখনও তেমন চলছে। আমাদের আশা-আকাঙ্খা এখনো এই সরকার পূরণ করতে পারছে না। রাজনৈতিক মামলাগুলো এখনো তুলে নেওয়া হয়নি, যেসমস্ত আইনজীবীরা সরকারের দালাল ছিলেন তারা এখনো আদালতে আসা-যাওয়া করে। তাদের অপরাধের বিচার করে তাদের সনদ বাতিল করতে হবে যাতে তারা আর আইন অঙ্গনে ঢুকতে না পারে।
তিনি প্রস্তাব করে বলেন, নবাব সলিমুল্লাহ আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা তার নামে অন্তত একটি রাস্তার নামকরণ করার কথা বলেছিলাম। আমি প্রস্তাব করছি, পল্টন থেকে তাঁতীবাজার পর্যন্ত রাস্তাটি নবাব সলিমুল্লাহ’র নামে ঘোষণা করা হোক।
সভায় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটা সোনার থালা। সেই মধ্যযুগেও ইউরোপ থেকে এখানে আসার জন্য তারা উদ্রগ্রীব থাকতো। আজকে সেই দেশকে ভিখারির দেশ বানিয়েছি আমরা। এই দেশে যাতে আর কোন দৈত্য, স্বৈরাচার ক্ষমতায় না বসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, ভারত এবং হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন, বিপ্লব, সংগ্রাম ৩৫ দিনের নয়, গত ১৬ বছর ধরেই চলছে। সরকারের কয়েকজন ছাড়া এই সরকারের আর কেউ রাস্তায় ছিল না। তাই এই সরকার বিপ্লবী সরকার নয়। ৫ তারিখে যে বিজয় এসেছে তাতে যদি আমরা খুশি হয়ে যাই তাহলে বড় ভুল করছি। ভারতের র’এর পরিকল্পনায় এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আর কখনো বিপন্ন হতে দেব না।
দার্শনিক আবু মহী মূসা বলেন, রাজনীতিবিদরা মেধাবী, বিএসসি ক্যাডাররা মেধাবী, পুলিশরা মেধাবী, কিন্তু এই মেধাবীরা এতবছর ধরে কি করছে? এরাই দেশটাকে ধ্বংস করেছে। মেধাবী আর জ্ঞানী এক বিষয় না।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে হবে। এ দাবি এখন সময়ের দাবি।’ তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কথা ছিল দেশে বিপ্লবী সরকার গঠন করার। কিন্তু তা হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফরমুলা ভারতের দেওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সময় উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও এর বিরোধীতা করেননি। এর পেছনে রহস্য রয়েছে। তাই বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে হবে।’
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সাবেক সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, শেখ মুজিব না হলে এই দেশে এক নায়ক শাসন এই দেশে কায়েম হতো না। তিনি দেশে এক নায়ক শাসন কায়েম করতে চেয়েছিলেন। শেখ মুজিব নায়কতন্ত্র কায়েম না করলে তার কন্যা শেখ হাসিনা এক নায়িকা হতেন না।
এ ছাড়াও সভায় ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত উর্দুভাষী সংখ্যালঘু কাউন্সিল বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আফজাল ওয়ার্সী, ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশের মহাসচিব ইকবাল হাসান স্বপন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস প্রমুখ।