বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:২৬ অপরাহ্ন
জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল , কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রীজ, লালন শাহ সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকা থেকে পদ্মা নদীতে বালু তোলা হচ্ছে। এতে এসব স্থাপনার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। পদ্মার নদীতে বসানো হয়েছে অসংখ্য ছোট বড় ড্রেজার। হাইকোর্টের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। পদ্মা নদীতে অবাদে এই বালু লুট করা হচ্ছে। বালু তোলা বন্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেড়ামারা হার্ডিঞ্জ ব্রীজ, লালন শাহ সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকা থেকে পদ্মা নদীতে বালু তোলা হচ্ছে। এতে এসব স্থাপনার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কও ঝুঁকিতে আছে। এগুলোর রক্ষার জন্য উচ্চ আদালত পদ্মায় বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করেছেন। তা বাস্তবায়নে হাইকোর্টের নির্দেশে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন মনিটরিং টিম গঠন করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালানো হয়েছে অভিযান। তারপরও কখনো রাতে আবার কখনো দিনে এই উত্তোলন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নদ-নদী থেকে সংগ্রহ করা বালু পাঠানো হচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। প্রভাবশালী ব্যক্তি সিন্ডিকেট করে বালুর ব্যবসা করছেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। ভেঢ়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের বারোমাইল থেকে মসলেমপুর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি জমি। কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আতঙ্কে এখন পদ্মা নদী পাড়ের মানুষ। বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার কারণে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙন দ্রুত রোধ করা না গেলে নতুন করে হুমকির মুখে পড়বে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। ভেড়ামারা-কুষ্টিয়া ও ভেড়ামারা-পাবনা মহাসড়ক এখন হুমকির মুখে রয়েছে।
ভেড়ামারার বাহিরচর ইউনিয়নের বারোমাইল এলাকার কৃষক হাবিবুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ২ বিঘা জমি পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে। দিন দিন পদ্মা নদীর ভাঙ্গন বেড়ে চলেছে। বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার কারণে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। দ্রুত ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী এলাকাবাসী।
টিকটিকিপাড়ার হাসান আলী বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে তাঁরা হুমকির মুখে। পদ্মার তীরে তাঁর ২০ বিঘা জমি ছিল। ভাঙতে ভাঙতে এখন ১০ বিঘা অবশিষ্ট রয়েছে। তাও যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
মুন্সিপাড়া এলাকার হারুন মিয়া বলেন, তাঁর ১০ বিঘা জমির মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে ২ বিঘা। তিনি অবিলম্বে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান। পদ্মা নদীতে রীতিমতো বালু লোপাটের মহোৎসব চলছে। এটি রোধে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
বালু উত্তোলনকারীদের একজন সাঈদ খান বলেন, তাঁদের কাছে এ-সংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তাঁরা স্পর্শকাতর এলাকায় বালু উত্তোলন করছেন না।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কু-ু বলেন, এ-সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছেন। কীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা যায়, সে বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন। যদিও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনজনকে জেলে পাঠানোর পাশাপাশি সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান জানান, পদ্মায় ড্রেজিং মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, পদ্মার বালু উত্তোলন সম্পর্কে একটি নির্দেশনা রয়েছে, যা কঠোর। ড্রেজার কিংবা অন্য কোনো উপায়ে বালু তোলা যাবে না। কেউ যদি তোলেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।