মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১১ অপরাহ্ন

ছাত্রলীগ টিকেটেই শত কোটির মালিক এই নেতারা, নেপথ্য কাহিনী

রিপোর্টারের নাম / ২৮ টাইম ভিউ
Update : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

রাজনীতি ছাত্রলীগ টিকেটেই শত কোটির মালিক এই নেতারা: নেপথ্য কাহিনী

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির অন্যতম প্রাচীন সংগঠন হলো ছাত্রলীগ।স্বাধীকার আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাতেও তারা অবদান রাখে। এটি বাংলাদশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিষ্ঠার পর এটি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি শেখ মুজিবর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।এছাড়াও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সহিংসতা, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি ও হত্যার অভিযোগও রয়েছে। -খবর তোলপাড়।

শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রেমখ্যাত সেই ছাত্রলীগের অনেক নেতা গত কয়েক দশকে আঙ্গুল ফুঁলে কলাগাছ হয়েছে। শুধু কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাই নয় জেলা পর্যায়ের নেতারাও কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ আছে।

২০১১ সালে যোগ দেওয়া ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকি নাজমুল আলম আওয়ামী ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে টাকা পাচার করে ৪ কোম্পানি খুলে ব্যবসা চালাচ্ছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার পাশাপাশি আন্ডারওয়াল্ডের অনেকের সাথে সম্পর্ক রয়েছে তার।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও সাধারন সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে খোদ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অংশ।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়। তৎকালীন সভাপতি ও সম্পাদকের নানা অপকর্মের বিস্তারিত তুলে ধরে করা ওই অভিযোগে তখন ১০০ কেন্দ্রীয় নেতার সই নেওয়া হয়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, আগস্টে জাতীয় শোক দিবসের মাসে কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিতকরণ, ছাত্রলীগের দুই কাণ্ডারির স্বেচ্ছাচারিতা, কেন্দ্রীয় নেতাদের অবমূল্যায়ন, পদ বাণিজ্য, প্রেস রিলিজের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়া রাতের আঁধারে কমিটি গঠন অভিযোগে জায়গা পেয়েছে। এ ছাড়াও বিবাহিত, চাঁদাবাজ, মাদকসেবী, ছাত্রদল ও শিবিরকর্মীদের কমিটিতে পদায়ন, সাধারণ সভা না করা এবং সংগঠনের নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ারও অভিযোগ ছিল।

২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্রে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে। তখন তাঁদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিভিন্ন অপকর্মের লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। ওই অভিযোগে তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অপকর্মের বিস্তারিত তুলে ধরা হয় এবং এতে ১০০ কেন্দ্রীয় নেতার সই নেওয়া হয়।

বিশিষ্ট ফরিদপুরের নেতা নিশান মাহমুদ শামীমের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ওঠে, যা তিনি আদালতে স্বীকার করেন। ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট সিআইডি ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করে।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বায়জিদ আহম্মেদ খান শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ নেতা হয়ে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করে বিশাল বিত্তবৈভব গড়েন। তিনি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেন।

ঢাকা সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক একসময় দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন, তবে ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পাওয়ার পর তিনি অল্প সময়েই কোটি কোটি টাকার মালিক হন। তিনি জমি দখল, চাঁদাবাজি, অবৈধ ঠিকাদারি ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে তার সম্পদ গড়েন।

গাজীপুরে হাসিনা সরকারের সময়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা কোটিপতি হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পদ বিক্রি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, ঝুট ব্যবসা ও তদবির বাণিজ্যের মতো অপকর্মে জড়িত থাকার।

গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাসুদ রানা এরশাদ ঝুট ব্যবসা, জমি দখল, এবং চাঁদাবাজি থেকে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন। এছাড়া, টঙ্গীর ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরকার বাবু ২০২২ সালে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হয়ে দুই বছরে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়ে ওঠেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, ঝুট ব্যবসা, তদবির বাণিজ্যসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ পদের মাধ্যমে কোটিপতি হন। তাঁরা চিনি চোরাচালান সাম্রাজ্য পরিচালনা এবং অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন একে একে পাহাড় কেটে সাবাড়, জমি রেজিস্ট্রি, স্বর্ণ চোরাচালান এবং মাদক ব্যবসা থেকে কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেন।

মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম বাঁধন, সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের মদদপুষ্ট হয়ে ঠিকাদারি এবং অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে কোটিপতি হন।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মনিরুজ্জমান মামুন ছাত্রলীগের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন। তিনি এলাকায় জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ এবং ট্রাকের মালিক হন।

অন্যদিকে, ঝিনাইদহের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দিনার বিশ্বাস একসময় দুটি টিনশেড ঘরের মালিক থাকলেও পরে চাঁদাবাজি, জমি দখল, সরকারি প্রকল্প হাতিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন।

চুয়াডাঙ্গার আরেফিন আলম রঞ্জু এবং মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন। এছাড়া, বরিশালে রইচ আহমেদ মান্না বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি শুরু করে পরে বাস মালিক হয়ে কোটিপতি হন। এই ঘটনাগুলো ছাত্রলীগের অনেক নেতা ও কর্মীকে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জন করার এক অশুভ চিত্র তুলে ধরে, যেখানে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল এবং অন্যান্য অপরাধের মাধ্যমে তারা লাখ-লাখ কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন।

সূত্র: মানবজমিন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর