মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:১৩ অপরাহ্ন
রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বুধবার (২ আগস্ট) বিভাগীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আয়োজকদের দাবি, ওই জনসভা হবে জনসমুদ্র, যেখান থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী। এখন চলছে শেষ মুহুর্তে মাঠ, মঞ্চ সাজানোর কাজ।
রংপুর মহানগরীর ২১টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশ পথগুলোতে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশী করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে জনসভায় আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে প্রায় এক যুগ পর রংপুরের পীরগঞ্জের লালদীঘির পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন রংপুরে। বধূবরণে আয়োজনের বিন্দুমাত্র কমতি নেই কোথাও। উজ্জ্বীবিত আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের ঢেউ বইছে।
জনসভা আওয়ামী লীগের হলেও মাঠে আগত নেতাকর্মীদের পিপাসা মেঠাতে পানির বোতল হাতে থাকবে জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যে ২ লাখ ২৫ হাজার আধা লিটার পানির বোতল সরবরাহ করেছে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেস্টুন,ব্যানার, তোরণ আর বিলবোর্ড সাটিয়েছেন জাপার এই নেতা।
জনসভা সফল করতে সবধরণের সহযোগিতার কথাও জানিয়েছে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন পর রংপুর আসছেন। আমরা দলমত নির্বিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগতম জানানোর জন্য আমরা উদ্গ্রীব হয়ে আছি। জনসভাকে সফল করার জন্য আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে যতটুকু সাধ্য দলকে অর্গানাইজড করে আমরা জনসভায় যাবো। সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা রংপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রায় আড়াই লাখ বোতল পানির ব্যবস্থা করেছি। যাতে তীব্র রোদে কিছুটা হলেও মানুষ পিপাসা মিটিয়ে শান্তি পায়। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে আমরা জনসভায় আইনশৃঙখলা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছি। যেটা দেখভাল করবে মহানগর পুলিশ।
এদিকে জিলা স্কুল মাঠের জনসভামঞ্চ থেকে ২০১১ সালের মতো আবারও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় থাকতে পারে চমক পারে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের বিভিন্ন সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। তথ্য মতে- তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, শ্যামাসুন্দরী খাল খনন, রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক জোন, বন্ধ চিনিকল খুলে দেয়াসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা আসতে পারে জনসভা থেকে। এছাড়াও ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার ২৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং নতুন করে আরও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভায় বক্তৃতা দেয়ার আগে তিনি এসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, কাজ শেষে প্রস্তুত হওয়া শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিংপুল, পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ের জলাবদ্ধতা নিরসন শীর্ষক প্রকল্প, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, পালিচড়া স্টেডিয়াম, নলেয়া নদী পুনঃখনন, আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন, পীরগাছা চৌধুরানী জিসি হতে শঠিবাড়ি আরএইডি ৫৭৯ মি. সড়ক (পীরগাছা অংশ), পীরগঞ্জ ভেন্ডাবাড়ি হতে খালাশপীর জিসি সড়ক পুনর্নির্মাণ, কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর জিসি হতে পাওটানা জিসি ভায়া ভায়ারহাট সড়ক পুনর্নির্মাণ, মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট-পীরগাছা ভায়া বালারহাট সড়কের গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর উপর ৯৬ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট জিসি-কাকিনা আরএইডি সড়কে ৪০ মি. আরসিসি ভেরিয়েবল ডেপথ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, কাউনিয়া উপজেলায় তিনতলা পল্লীমারী সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম ফ্লাড শেল্টার নির্মাণ, রংপুর মেডিকেল কলেজ মাল্টিপারপাস ভবন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় ভবন, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যাবিশিষ্ট বেগম রোকেয়া মর্ডান হাসপাতাল, হেলেঞ্চা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, খালাশপীরে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, মাদারগঞ্জে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ডিমলা এ্যাসফল্ট প্লান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড নির্মাণ, ভারারদহ বিল, পাটোয়া কামরী বিল পুনঃখনন, চিতলী বিল পুনঃখনন, রংপুর সিটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নৈমুন্না বিল পুনঃখনন এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণ, রংপুর জেলায় বিটাক কেন্দ্র স্থাপন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস ভবন এবং লেডিস হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
রংপুর বিভাগবাসীর পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেসব দাবি জানানো হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, শ্যামা সুন্দরী খাল খনন, বন্ধ চারটি চিনিকল খুলে দেয়া, রংপুর বিভাগের ৬টিস্থল বন্দর আধুনিকায়ন, অর্থনৈতিক জোন, কৃষি নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ১০০০ বেডে উন্নীত করা, রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যায় প্রতিষ্ঠা, সদর হাসপাতালে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল করা, দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ১ হাজার বেডে উন্নীত করা, কারিগরি শিক্ষা ইন্সটিটিউট গড়ে তোলা, রংপুর থেকে সরাসরি ব্রড গেজের রেল লাইন নির্মান ও ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরি করা, পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ, ভারি শিল্প কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করা, ব্রক্ষ্মপুত্র নদের ওপর প্রস্তাবিত সেতু বাস্তবায়ন, জামালপুর-রৌমারী ও চিলমারী-পঞ্চগড় রেল সংযোগ স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবি।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পর তিনি আবার রংপুরে আসছেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপরই রংপুর বিভাগ, রংপুর সিটি করপোরেশন ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিশ্রুতির আলোকে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন রংপুরের পুত্রবধূ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। -সম্পাদনায় রংপুর বার্তা সম্পাদক।