শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
প্রহলাদ মন্ডল সৈকত:
নিরাপত্ত্বার চাদরে ঢেকে গেছে রংপুর মহানগরী। এ উপলক্ষে বুধবার ২ আগস্ট বিকাল ৩ টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভাগীয় জনসভায় যোগদান। আয়োজকরা জানিয়েছেন, জনসমুদ্র হবে জনসভা, এখান থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
চলছে শেষ মুহুর্তের মাঠ, মঞ্চ সাজানোর কাজ। রংপুর মহানগরীর ২১টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশ রুট গুলোতে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশী করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে জনসভায় আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে প্রায় এক যুগ পর রংপুরের পীরগঞ্জের লালদীঘির পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন রংপুরে। বধূবরণে আয়োজনের বিন্দুমাত্র কমতি নেই কোথাও। উজ্জ্বীবিত আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের ঢেউ বইছে। দফায় দফায় হচ্ছে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগসহ সহযোগি ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বর্ধিত সভা।
মিছিলে মিছিলে একাকার নগরী। চলছে বর্ণিল-বর্ণাঢ্য প্রচারণা। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলর্বোডে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। নগরীর বিদ্যুতিক পিলার, ল্যাম্প পোস্ট, দেয়াল, গাছ কোথাও ফাঁকা নেই। ধুয়ে মুছে চকচকা করা হয়েছে রাস্তাঘাট, রোড ডিভাইডার। চলছে বাদ্যযন্ত্র ও গানের তালে নেচে গেয়ে মাইকিং। জনসভা স্থল ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, জিলা স্কুল মোড়, ডাকঘর মোড়, সুরভি উদ্যান মোড়, পুলিশ লাইন্স মোড়, সিটি বাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে মাইক সাটানো হয়েছে। প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন। শেষমূহুর্তে মাঠ পরিদর্শনসহ বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তারা।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম বলেন. আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে সভা সমাবেশ করা হয়েছে। গ্রামেগঞ্জে শহরে বন্দরে খণ্ড খণ্ড মিছিল করা হয়েছে। পুরো বিভাগজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালানো হয়েছে। বিগত সময়ের উন্নয়নগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। মানুষ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত। তারা জনসভায় যোগ দিতে অপেক্ষা করছে।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগেরসাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রোজী রহমান বলেন, আমরা খুব আনন্দিত, উদ্বেলিত। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুকন্যা রংপুরের পুত্রবধূ শেখ হাসিনার আগমনে উচ্ছ্বাসে একাকার হয়ে গেছি। এগারো বছর পর আমরা তাকে নবসাজে বরণ করতে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা করছি, লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্বাগত জানাতে জিলা স্কুল মাঠে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ব্যাপক সমাগম ঘটবে। যা রংপুরের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফর এবং এই জনসভা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। জনসভায় হাওয়ায় এখন পুরো রংপুর বিভাগ আওয়ামী লীগের জয়বাংলা জয়োধ্বনিতে উদ্বেলিত। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় সংসদ নির্বাচনে যুবসমাজ মাঠে থাকবে। আগামীতে রংপুর বিভাগের সবগুলো আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত হবে।
এদিকে জনসভাস্থল রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এসএসএফসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন সর্বোচ্চ সতর্কতায়। মাঠের দক্ষিণ পশ্চিম কোণায় নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে সভামঞ্চ। পাশেই মিডিয়া, মুক্তিযোদ্ধা ও অতিথি কর্ণার। সামনে থাকবে জনতা। প্রস্তুতির কাজ তদারকি করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতিদিন মাঠ-মঞ্চসহ সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করছেন তারা। জিলা স্কুল মাঠের জনসভায় থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমনটা জানিয়েছেন নেতারা।
আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে রংপুরসহ পুরো বিভাগে উৎসবের আমেজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বঙ্গবন্ধুকন্যা তার ক্যারিশমাটির নেতৃত্বের কারণে দলমত নির্বিশেষে লোকে লোকারণ হয়ে যাবে। গোটা শহর মানুষে মানুষে টইটম্বুর হয়ে যাবে। আমরা আশা করছি দল-মত নির্বিশেষে এই জনসভায় সবশ্রেণির পেশার মানুষ অংশ নেবেন। শুধু জিলা স্কুল মাঠ নয় গোটা শহর উপচে পড়া মানুষের ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
দলের প্রেসিডয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনসভার সকাল আয়োজন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।এই জনসভায় প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে। পুরো রংপুর এই জনসভা ঘিরে জয়বাংলার জনস্রোতে রুপান্তরিত হবে। পুরো বিভাগজুড়ে যেভাবে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়েছে, তাতে আমরা মনে করি রংপুরের মানুষের জন্য এটি হবে ঐতিহাসিক জনসভা।
নানক আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ এই জনসভা থেকেই বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, অগ্নি সন্ত্রাস, মানুষ খুন এবং দেশ বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে উত্তরের এই জনপদ (রংপুর) থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
এদিকে জনসভাকে ঘিরে পুরো নগরীকে নিরাপত্বায় চাদরে ঢেকেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন রুট দিয়ে আসা যানবাহন পাকিংয়ে নগরীর ২১টি পয়েন্ট নির্ধারণ করেছে মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বসানো হয়েছে এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়গুলোতে বাড়ানো হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, জনসভাকে ঘিরে সব ধরণের নিরাপত্বার বন্দোবস্ত করেছি আমরা। পোশাকী পুলিশের পাশাপাশি আর্মডসহ সাদাপোশাকী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। জনসভাস্থল ছাড়াও থাককে পথে পথে রুট ডিউটি, থাকবে চেকপোস্ট, পুরো নগরীর গুরুত্বপূর্ন প্রবেশ পথ ও মোড়ে মোড়ে থাকবে সদস্যরা। উঁচু ভবনের ছাদে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে থাকবে প্রশিক্ষিত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
আবু মারুফ হোসেন বলেন, জনসভাস্থল, পুরো শহর এবং সার্কিট হাউজ পুরোটাই আমরা সিসিটিভির কাভারেজে এনেছি। ১ হাজারেরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় আমরা বসিয়েছি। এটা আমরা ডিজিটালি মনিটরিং করবো। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মাঠে এবং পুরো নগরীজুড়ে থাকবেন। সাথে থাকবেন আয়োজকদের স্বেচ্ছাসেবককরা। যাতে জনগন মাঠে সুশৃংখলভাবে আসতে পারেন, সুন্দর পরিবেশে সভা শুনতে পারেন এবং নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন।
আবু মারুফ হোসেন আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা আমরা বরদাশত করবো না। কেউ করার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে মোকাবেল করা হবে। এজন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। যে কোন ধরণের ঘটনার প্রতিরোধ, প্রতিহত করার সক্ষমতা আমাদের আছে।
এদিকে সফরসূচি অনুযায়ী, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে রংপুরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ২টায় তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর ক্যান্টনমেন্টের হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে সেখান থেকে সড়কপথে রংপুর সার্কিট হাউসের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
সোয়া ২টার দিকে সার্কিট হাউসে পৌঁছে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর বিকেল ৩টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাসমাবেশস্থলে পৌঁছবেন। প্রথমে সেখানে রংপুর বিভাগের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। সফরে রংপুরে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন সরকারপ্রধান। মহাসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার পর বিকেলে আবার একই পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পর তিনি আবার রংপুরে আসছেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।