শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২৬ অপরাহ্ন

আইএমএফের ১.১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের আশ্বাস

রিপোর্টারের নাম / ৩৫ টাইম ভিউ
Update : মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তিতে বাড়তি অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে এই কিস্তিতে ১.১ বিলিয়ন ডলার ঋণের আশ্বাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবে।-খবর তোলপাড়।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রতিনিধিদল আসছে প্রধানত রাজস্ব আয় বাড়ানো, আর্থিক ঘাটতি, বাজেট লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি—এগুলো দেখতে। এর জন্য কী কী কৌশলগত পদক্ষেপ বাংলাদেশ নিয়েছে এবং আগামী দিনে কৌশলগত পদক্ষেপ কী নেওয়া হবে সে বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবে তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক সংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ব্যাংক খাতে যে খেলাপি ঋণ আছে, অর্থনীতিতে এই ঋণের যে চাপ আছে তা জানতে চেয়েছে তারা। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থিতিশীলতা কিন্তু ফিরে আসছে। সম্পূর্ণ আসেনি, তবে এখন সময় বিনিয়োগের।

আপনারা দেখবেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট আগের মতো ওঠানামা করছে না। ব্যাংকিং খাতের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের লিকুইডি সাপোর্ট লাগছে। তবে ইসলামী ব্যাংকের মতো বড় ব্যাংকে কিছুটা ফিরে আসছে। ইসলামী ব্যাংক সব বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোও ধীরে ধীরে ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স খুবই ভালো। রপ্তানিও হচ্ছে ভালো, আমদানি একটু কম। তবে আগের চেয়ে একটু বেড়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি কিছু কম আসছে, সেটা কিছু রেস্ট্রিকশনের কারণে। সেটা আমরা চিন্তা করছি কী করা যায়। তারা আমাদের এখানে থাকবে কিছু দিন। আমরা তাদের বলেছি, আমরা এমন কিছু নেব যেটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। আমরা এমন কিছু নেব না যেটায় নিজেদের ভবিষ্যত্ নষ্ট হয়, যাতে আগামী সরকারে যে-ই আসুক তারা যেন সেটা ফলো করে। আমরা কতটুকু নেব এবং সেটা বিবেচনা করে ভেবেচিন্তে নেব। এতে তারা আশ্বস্ত হয়েছে।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা কতগুলো লক্ষ্যমাত্রা দেবে, সেটা করতে পারব কি না সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমি আশা করি, তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে আমরা আবার আলোচনা করে বলব। চলমান ৪.৭ বিলিয়ন ডলার তো প্রথম প্যাকেজের। কিন্তু সংস্কার করতে হলে তো আমাদের ফান্ড লাগবে। আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হচ্ছে। যেমন—ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব খাত। এগুলো করতে আমাদের ফান্ড লাগবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ওয়াশিংটনে আইএমএফের পর্ষদসভায় যে কথা বলে এসেছি সেখানে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চলতি অর্থবছরের জন্য ছয় বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা প্রত্যাশা করছি। আমরা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ওপেক ফান্ড—সব মিলিয়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের আশা করছি। সেখান থেকে পাব কত সেটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলতে পারবে। কিছুদিন পর এডিবি আসবে, ওপেক ফান্ডের টাকা আসবে। সব মিলিয়ে আগামী জুনের মধ্যে ছয় বিলিয়ন ডলার পাব তাদের কাছ থেকে, এ অঙ্গীকার পাওয়া যাবে। তবে আমাদের অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো দু-এক বিলিয়নে চলে আসবে না। একেকটা ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়নের প্রকল্প। তবে পুরো টাকা এক বছরে আসবে না।’

চলমান ঋণ সহায়তার আওতায় আমাদের ৪.৭ বিলিয়নের মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে তিন বিলিয়ন চলে আসবে। বাকি যেটা সেটা তো ২০২৬ পর্যন্ত যাবে না, তখন কী করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএমএফ আগামী মার্চে আবার আসবে। ১.১ বিলিয়ন ডলার তো ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে চলে আসবে। এর পরেরটার জন্য মার্চ মাসে রিভিউয়ে আসবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।

উল্লেখ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকাকালে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরো কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে বেশ কিছু কঠিন শর্তের বাস্তবায়ন এবং আগামী দিনে আরো বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ডলার দিয়েছে। এখন চতুর্থ কিস্তিতে ১.১ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।

আইএমএফের শর্তাবলি পর্যালোচনা করতে আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাদাকিসের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর