বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১৭ অপরাহ্ন
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট, চাকিরপশা এবং বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত “চাকিরপশার” নামক ২৮৩.২৮ একর বিল (স্থানীয়ভাবে নদী নামে পরিচিত) কোন ব্যক্তি বা সমিতির অনুকূলে ইজারা ও বন্দোবস্ত প্রদানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার(৭আগষ্ট) নিষেধাজ্ঞার এ আদেশ বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর ও জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম এর উপর জারি করা হয়েছে। আদালত এ বিলে থাকা সকল অননুমোদিত দখলদারদেরকে উচ্ছেদ করতে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং রাজারহাট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ২ (দুই) মাসের সময় দিয়ে নির্দেশ প্রদান করেছেন। একইসাথে চাকিরপশার বিলের ১৪১.২৯ একর জমি “চকিরপশার মৎসজীবী সমবায় লিঃ” নামক অমৎস্যজীবীদের সমিতি বরাবর ইজারা প্রদান বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর ও জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম কর্তৃক গৃহিত ব্যবস্থা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন মহামান্য আদালত। অন্তবর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি অননুমোদিত দখল, বন্দোবস্ত ও ত্রুটিপূর্ণ ইজারা প্রদান থেকে উল্লেখিত বিলটি রক্ষার ব্যর্থতাকে কেন অসাংবিধানিক ও আইন বহির্ভুত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন মহামান্য আদালত। আদালত কর্তৃক জারিকৃত এ রুলে বিলটি পুনরুদ্ধার, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী বিলের সীমানা নির্ধারণপূর্বক সকল স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদ করে এবং বিলের “পাঠানহাট” নামক স্থানে নির্মিত আড়াআড়ি বাঁধ অপসারণ করে নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বিল ও বিলের স্বাভাবিক প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। আদালত বিলটির বেআইনী ইজারা প্রদান ও বন্দোবস্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন। আগামী ৩ (তিন) মাসের মধ্যে বিবাদীগণকে রুলের জবাব দিতে বলেছেন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- ১) চাকিরপশার বিলটি সিএস মৌজা ম্যাপ অনুযায়ী দখলমুক্ত করে সংরক্ষণ এবং রেকর্ড সংশোধনপূর্বক উন্মুক্ত জলাশয়ে রুপান্তর করা; ২) পাঠানহাট নামক স্থানে বিলের প্রবাহ বন্ধ করে এলজিইডি কর্তৃক আড়াআড়িভাবে নির্মিত রাস্তা জরুরি ভিত্তিতে অপসারণ করে ব্রিজ নির্মাণ করা; ৩) অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা; ৪) বিলের পানি নিষ্কাশন, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় এবং বৃষ্টি ও বন্যার পানির প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিল, দলা বা নিচু ধরনের জমির শ্রেণি সিএস অনুযায়ী অপরিবর্তত রাখা; ৫) বিলের ইজারা বাতিল করে এটিকে উন্মুক্ত জলাশয় হিসেবে ঘোষণা করা এবং বিলকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা; ৬) তীরভূমিতে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণ করে পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা এবং জলাশয়কে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় অবস্থিত চাকিরপশার বিল রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ৭৯০৯/২০২৩) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এবং জনাব বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
মামলার বিবাদীগণ হলেন – পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক; ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী; রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার; কুড়িগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক; কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার; পরিবেশ অধিদপ্তর, রংপুরের পরিচালক; কুড়িগ্রাম জেলার মৎস কর্মকর্তা; কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা; রাজারহাট উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা; রাজারহাট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা; রাজারহাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং চাকিরপশার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও এডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধূরী এবং তাঁদের সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।
উল্লেখ্য, “চাকিরপশার” নামক বিলটি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট, চাকিরপশা এবং বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উলিপুর উপজেলায় গিয়ে তিস্তা নদীতে মিলিত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিলটি নদী হিসেবে পরিচিত। মূলত এটি তিস্তা নদীর একটি উপনদী হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিগণিত হয়ে আসছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী উজানে বিলটির দৈর্ঘ্য ১৮-২০ কিলোমিটার এবং ভাটির অংশে ১৬ কিলোমিটার। এ বিলটি নদীর সাথে সংযুক্ত হলেও এটিকে বদ্ধ জলমহাল হিসেবে চাকিরপশার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ নামক অমৎস্যজীবীদের নিয়ে গঠিত একটি সমিতির অনুকূলে ৩ বছর মেয়াদে ইজারা প্রদান করা হয় যার বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছে গ্রামবাসীরা।
জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিলের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ ও দখল করে এর বিরুদ্ধ ব্যবহারের ফলে এ বিল ও বিল সংলগ্ন প্রায় ২০ (বিশ) হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতায় ফসল উৎপাদন বিঘিœত হয় এবং অন্তত ৫ (পাঁচ) হাজার কৃষক মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিলটির নানামূখী অব্যবস্থাপনা ও বিরুদ্ধ ব্যবহাররোধে ও বিলটি যথাযথ সংরক্ষণে স্থানীয় এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বেলা উল্লেখিত মামলা দায়ের করলে মহামান্য আদালত উল্লেখিত রুল ও অন্তবর্তীকালীন আদেশ প্রদান করেন।