চালু হচ্ছে পঞ্চগড় চিনিকল

সংবাদদাতা, পঞ্চগড়:
দীর্ঘ ৪ বছর বন্ধ থাকার পর দেশের উত্তরের প্রবেশদ্বার পঞ্চগড়ে অবস্থিত ভারি শিল্প পঞ্চগড় চিনিকল পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার।
এ লক্ষ্যে, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)-এর অধীনে ৬টি চিনিকলের আখ মাড়াই স্থগিত করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই চিনিকলগুলোর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড়, রংপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, সেতাবগঞ্জ ও শ্যামপুর চিনিকল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকলগুলো পুনরায় চালু করার জন্য এবং লাভজনকভাবে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের সুপারিশ ও মতামতের ভিত্তিতে, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে পর্যাপ্ত আখ সরবরাহ সাপেক্ষে ১ম পর্যায়ে শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল, ২য় পর্যায়ে পঞ্চগড় ও পাবনা চিনিকল, এবং ৩য় পর্যায়ে কুষ্টিয়া ও রংপুর চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পঞ্চগড় চিনিকলটি প্রায় ২১ দশমিক ২৮ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে এবং ২০০৫-২০০৬ অর্থবছর থেকে নানা কারণে লোকসান শুরু হয়। ২০২০ সালে এসে সরকার দেশের ৬টি চিনিকলের সঙ্গে পঞ্চগড় চিনিকলের আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করে। তখন থেকে আখ মাড়াই বন্ধ হওয়ায় পুরো মিল এলাকা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং এর মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে থাকে।
২০১৮ সালে ৬ কোটি ৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণ কাজ শুরু হয়, যা ২০২২ সালের ৩১ মার্চ শেষ হয়।
পঞ্চগড় চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার চিনিকলটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের তত্ত্বাবধানে পঞ্চগড়ে আখ চাষ হচ্ছে এবং ৩১টি ইক্ষুক্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি চালু রয়েছে। বর্তমানে ৭৯২ একর জমিতে আখ আবাদ হচ্ছে এবং মাঠে ২০০ একর জমিতে আখ রয়েছে। আখ চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হবে যাতে তারা আগের মতো আখ চাষে ফিরে আসে।
এদিকে, গত ১৬ নভেম্বর, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান পঞ্চগড় চিনিকল পরিদর্শন করে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বন্ধ কারখানাগুলো চালু করতে।’ তিনি আরও জানান, তিনি পঞ্চগড়সহ সকল বন্ধ সুগার মিল পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছেন।
পঞ্চগড় চিনিকলের তেঁতুলিয়া সিডিএ মনিরুজ্জামান জামান জানান, চিনিকল চালুর প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর, আগের মতো আখ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইক্ষুক্রয় কেন্দ্রগুলো চালু করা হবে। তিনি বলেন, ‘পূর্বে তেঁতুলিয়া উপজেলায় ২০-২২ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদিত হতো, কিন্তু বর্তমানে তা ১০ হাজার মেট্রিক টনে নেমে এসেছে।’
পঞ্চগড় সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ৬টি চিনিকল চালু করার প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বর্তমানে এ জেলায় ৭৯২ একর জমিতে আখ আবাদ হচ্ছে এবং আখ মাড়াইয়ের মৌসুম চলছে। ৩১টি ইক্ষুক্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি চালু রয়েছে, এবং মাঠে ২০০ একর জমিতে আখ রয়েছে। চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে যাতে তারা আখ চাষে আগের মতো উদ্যম নিয়ে কাজ করে।