উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

আব্দুল মালেক:
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হারুন অর রশীদ যোগদানের পর থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কথায় কথায় হাসপাতালের স্টাফদের শোকজ, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, কর্মস্থল ত্যাগ, উৎকোচ গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধের কারণে অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত আট মাস আগে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এর আগে তিনি দিনাজপুর সদর হাসপাতালে আবাসিক সার্জন (অর্থোপেডিক্স) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও তার অধস্তন স্টাফদের নানা রকম হয়রানি করছিলেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। নিজের প্রাইভেট প্রাকটিস ভালো করার জন্য আক্রোশমূলক সেখানেও অধস্তন কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দুর্ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে।
হাসাপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে এটি তার প্রথম পদায়ন। চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকে তিনি একটি বলয় তৈরি করেন। এরপর শুরু হয় নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি। গত আট মাসে ছয়জন নার্স, একজন স্যানিটারী ইন্সপেক্টর, একজন স্যাকমো, একজন ফার্মাসিষ্ট, ছয়জন স্বাস্থ্য সহকারী, সিএইচসিপি দুইজন, দুইজন এমটি (ল্যাব), অফিস সহকারী একজন ও একজন পরিচ্ছন্নকর্মীকে শোকজ করেছেন । যা অতীতের ঘটনায় এটি প্রথম এবং আশ্চর্যের। এমনকি একজনকে একাধিকবার শোকজের ঘটনাও ঘটেছে।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হারুন অর রশীদ যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের ভেতরে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধের মধ্যদিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এর আগে হাসপাতালটিতে প্রতিমাসে নরমাল ডেলিভারি ৮০-৯০টির মতো হতো। সেখানে ৩০-৩৫টিতে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে। গত একমাস ধরে চরাঞ্চলগুলোর বেশিরভাগ এলাকায় টিকাদান (ইপিআই) কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় হাসপালে কর্মরত স্টাফদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেরামতের কাজ নামমাত্র কাজ করে নিয়ে ঠিকাদারের লোকের কাছ থেকে দু’টি এসি কিনে নিয়েছেন। এর মধ্যে একটি তার বাসায় ব্যবহারের জন্য নিয়েছেন। এছাড়া বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎসহ বেশিরভাগ সময় ব্যক্তিগত কাজে তিনি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার কর্মস্থল ত্যাগ করে দিনাজপুরের বাসায় যান এবং শনিবার বিকেলে কর্মস্থলে ফেরেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জয়নুল আবেদিন বলেন, আমার বাসা রাজারহাটে সেখান থেকে আসতে দেরি হয়। এ জন্য আমাকে তিনবার শোকজ করা হয়েছিল। আমি শোকজের জবাবও দিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল ও টিকা কার্যক্রমের উপকরণ সরবরাহ না থাকায় সমস্যা হয়েছিল। তবে এখন টিকা কার্যক্রমের সমস্যা নেই পর্যায় ক্রমে শুরু করা হবে।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ম›জজুর এ-মুর্শেদ বলেন, এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। কিছু সময় শুধুমাত্র পিসিভি টিকা সরবরাহ না থাকায় সমস্যা হয়েছিল, এখন সমস্যা নেই।