জলঢাকায় সবুজ মাল্টা উৎপাদনে সাড়া ফেলেছে আশরাফুল

আসাদুজ্জামান স্টালিন,জলঢাকা(নীলফামারী):

মাল্টা উৎপাদন করে ব্যপক সাড়া ফেলেছে এক লোক। তাকে এখন অনেকেই চেনেন। শুধু পাশাপাশি গ্রামগুলোতেই নয়, বিভিন্ন ইউনিয়নে তার ফল ছাড়াও নামেরও বিস্তৃতি হয়েছে। নাম আশরাফুল ইসলাম। সে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার খুটামারা ১নং ওয়ার্ডের নতুন হাজীপাড়া এলাকার মৃত আলীম উদ্দিনের ছেলে। তিনি একজন মাল্টা বাগানের মালিক। তার বাগানের উৎপাদিত সবুজ মাল্টা সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় ফল বাজার সহ অত্র অঞ্চলে ব্যপক সাড়া ফেলেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়,আশরাফুল ইসলাম তার বাড়ির পাশে মাল্টা বাগান করে অত্র উপজেলা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভিটামিন-সি সহ পুষ্টির চাহিদা পূরণে অপরিসীম ভুমিকা রাখছে। গোটা উপজেলায় ১৪ হেক্টর জমিতে ৮৯টি মাল্টা বাগান আছে। এসব বাগানের মাল্টা স্থানীয় বিভিন্ন ফল বাজারে চলে যাচ্ছে।

আশরাফুল জানায়, ২০১৭ সালে তৎকালীন কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মাহাফুজুল হক স্যারের কথায় উৎসাহিত হয়ে আমি ২০ শতাংশ জমির উপর ৬০টি মাল্টা বারী-১ জাতের কলম গাছ রোপন করি। সেসব গাছ হতে আমি ২০২০ সাল হতে ফল পেতে শুরু করি। করোনা কালে প্রচুর চাহিদা থাকায় ও ফল পাওয়ায় সেসময় লাভের মুখ দেখি। তারপর ২০২১ সালে আরও ৭০ শতাংশ জমির উপর ২৩৭টি গাছ রোপন করি। আমি গত বছর ২’শ মণ ফল পেয়েছি। প্রতি মণ ফল তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছি। চলতি বছর ৭০ শতাংশের নতুন বাগানের ১৭০ মণ ফল পেয়েছি। প্রতি মণ ফল দুই হাজার ৬’শ টাকা দরে বিক্রি করেছি। পুরাতন ২০ শতাংশ বাগানে বিক্রির অপেক্ষায় এখনও প্রায় ১’শ মণ ফল আছে। বর্তমানে যার প্রতি মণ ফল ব্যবসায়ীরা দুই হাজার ৮’শ টাকা দাম তুলেছে। বাগান পরিচর্যায় প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আশরাফুল আরও জানায়, আমার নিজের তৈরী ভার্মি কম্পোষ্ট সার ও শুকনো গোবর দিয়ে এসব গাছের পরিচর্যা করে থাকি। আমার অনুপস্থিতিতে স্ত্রী মণি আক্তার বাগান দেখভাল করে থাকেন।

আশরাফুলের স্ত্রী মনি আক্তার জানান, এই সবুজ মাল্টা বাগানেই মিশে আছে আমাদের ভবিষ্যত ও স্বপ্ন। এক সময়ের অভাবের সংসার এখন আমরা তিন বেলা দুই মুঠো খেতে পারি। সন্তানদের ভাল জায়গায় পড়াতে পারছি। বর্তমানের জীর্ণ বাড়িটা আগামী বছর ইট গাথার পরিকল্পনাও করেছি।
নিয়মিত বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত ওই এলাকার দিনমজুর রশিদুল ইসলাম ও আজিজার রহমান জানায়,আমরা বাগানের নিয়মিত পরিচর্যার কাজ করে থাকি। বাগানে ভার্মি কম্পোষ্ট,শুকনা গোবর ছাড়াও গাছের নানাবিধ সমস্যা দুর করতে নিয়মিত উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজন তদারকি করে থাকেন। ফলে গাছে অধিক ফল আনয়ন সম্ভব হয়।

প্রতিবেশী আলী হোসেন,হাবিবুল্লাহ ও মারুফা বেগম জানান, গাছে ফল আসার পরপরেই বিভিন্ন এলাকা হতে ফল বিক্রেতারা আসেন। সেসময় হতে তারা বাগান মালিকের সাথে দরদামের দিকে চলে যান। এছাড়াও জীপ-মাইক্রোবাসে করে অনেকেই বাগান দেখতে আসেন। তারা বাগান দেখা শেষে যাবার সময় অনেকে তাজা ফলও কিনে নিয়ে থাকেন।

ফল ব্যবসায়ী ফরহাদ আলী,শরিফুল ইসলাম ও আবেদ জানান,যিনি সন্তানের মতো গাছের যতœ নেন তার বাগানের ফল তো ভালো হবেই। আমরা গত বছর থেকে তার বাগানে ফল বিক্রি করছি। আশরাফুলের বাগানের মাল্টার স্বাদ আছে বলেই আমাদের এখানে তার ফলের চাহিদা বেড়েছে। আমরাও ভালো লাভ করছি।

খুটামারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রকিবুল ইসলাম ও ওয়ার্ড সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, নিঃসন্দেহে একজন বাগান মালিক হিসেবে আশরাফুল আমাদের গর্ব। যে মাটিতে এক সময় তামাক ছাড়া কোন কিছুই উৎপাদন সম্ভব ছিল না। সে মাটিতে আশরাফুল মাল্টা বাগান করে সাড়া ফেলেছে। তার বাগানের এসব মাল্টা শোভা পাচ্ছে এই অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারের ফল দোকানে। সে নিকোটিনের বদলে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করছে। এবং এক সময়ের অভাব শব্দকে তাড়িয়ে সংসারে ফিরে এনেছেন স্বচ্ছলতা। যা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুমন আহমেদ বলেন, তিস্তা অববাহিকা হওয়ায় এই অঞ্চলের মাটি ক্ষার যুক্ত। তাই মাল্টা বাগানের জন্য এই এলাকার মাটি উপযুক্ত। এছাড়া ক্ষার মাটির রসালো ফলগুলো মিষ্টি হয়। আমরা আশরাফুলদের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ফল বাগানের নতুন উদ্যোক্তা খুঁজছি। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হলে শুধু এই উপজেলা কিংবা অঞ্চল বাদেও সাড়া দেশে ভিটামিন-সি সহ পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভুমিকা রাখতে পারবে এই এলাকার বাগান মালিকগণ।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *