কুড়িগ্রামে ভোজ্যতেল নিয়ে ব্যবসায়ী পরিবেশকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

হুমায়ুন কবির সূর্য:
কুড়িগ্রামে ভোজ্যতেল নিয়ে ব্যবসায়ী ও পরিবেশকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠলেও কাংখিত বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছে না ভোক্তারা। এই রমাদান মাসে রসুইয়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণটি না পেয়ে হতাশ গৃহিনীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে মুনাফা লুটছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। তবে সরকারিভাবে অন্য বছরের তুলনায় এবারে রমাদান মাসে ভোগ্য পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করছেন তারা।
সরজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল হাওয়া হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠছে বোতলজাত তেলের চেয়ে খোলা তেলের মূল্য বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বোতলজাত তেল ঢেলে নিয়ে খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, সরকার বোতলজাত ভোজ্য তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছে। অপরদিকে খোলা তেলের মূল্য নির্ধারণ না করায় ব্যবসায়ীরা অসাধু পথ অবলম্বন করছে। এক লিটার বোতলজাত তেলের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭৫ টাকা। অপরদিকে এক লিটার খোলা তেলের মূল্য ১৬৮ টাকা। এই পার্থক্যের কারণে বাজারে বোতলজাত তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যদি খোলা তেলের মূল্যর নির্ধারণ করে দেয় তাহলে এই সংকট থাকবে না।
কুড়িগ্রাম শহরের আদর্শ পৌর বাজারের ব্যবসায়ী নাঈম ইসলাম জানান, অনেকদিন থেকে কোম্পানীগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। তীর, রুপচাঁদা, ফ্রেস ও পুষ্টি কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা (এসআর) বোতলজাত তেলের সাথে শর্ত দিয়ে চাল, আটা ও সরিষার তেল ক্রয় করতে বলেন। শর্ত মানলে দুই কার্টুনের বেশি তেল দিতে চান না। এভাবে শর্ত দিয়ে ব্যবসা করা যায় না। ফলে অনেক ব্যবসায়ী তেল কিনতে পাচ্ছে না। গ্রাহকও তেল পাচ্ছেন না।
শহরের সুপার সপসহ বেশ কয়েকটি দাকান ঘুরে দেখা গেল বোতলজাত সয়াবিন তেলের কোন সরবরাহ নেই। কিছু দোকানে ভেজিটেবল অয়েলের বোতল পাওয়া গেলেও সেটিরও সংখ্যা সীমিত।
কুড়িগ্রাম ফ্রেস সয়াবিন তেলের ডিলার দবির হোসেনের ম্যানেজার পাপ্পু মিয়া বলেন, কোম্পানী থেকে তেল সরবরাহ কম। ফলে আমরা চাহিদা দিয়েও তেল পাচ্ছি না। আপনারা কোম্পানীগুলোর সাথে কথা বলতে পারেন।
রুপচাঁদা কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি সাব্বির জানান, আমরা তেল পাওয়া মাত্র মার্কেটে ছাড়ছি। সরবরাহ তুলনামূলক কম হলেও আমরা আটকে রাখছি না। দোকানদারদের অভিযোগের বিষয়ে এই বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, বোতলজাত তেলের চেয়ে খোলা বিক্রিতে লাভ বেশি। দোকানীরা বোতলের তেল খুলে বিক্রি করছেন কিনা সেটিও খতিয়ে দেয়া উচিৎ।
এদিকে বাজারে আলু, বেগুন, কফি ও লেবুর মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় কুড়িগ্রামে গত সোমবার (৩ মার্চ) সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও বাজার মনিটরিং কমিটির প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ‘বাজার মনিটরিং কমিটি’ গঠন করে প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজন করা হয়েছে। এই কমিটি কৃষক পর্যায়ে সবজির উৎস মূল্য থেকে বাজারে প্রকৃত মূল্য নির্ধারণে সহযোগিতা করবেন। এছাড়াও ব্যবসায়ী ও পরিবেশকদের মধ্যে বোতলজাত তেল সংকটের প্রকৃত কারণ কি এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখবেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উত্তম কুমার রায় বলেন, বোতলজাত সয়াবিনের সংকটের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা টিসিবি’র পণ্য পেয়ছি সেগুলোও বিভিন্ উপজেলায় বিক্রিও শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা জানান, বাজারে কোন ধরণের কারচুপি, অতিরিক্ত মূল্য আদায়, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের আর্থিক জরিমানা ছাড়াও কারাদন্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে কোন মূল্যে বাজার স্থিতিশীল রাখা হবে। এছাড়াও তিন মাস আগে থেকে বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলার সর্বত্র দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও অসঙ্গতি দেখা দিলে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।