শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামে ”জাহাজ ঘর” এর ইতিহাস ও সংস্কারের দাবি

রিপোর্টারের নাম / ১৪৯ টাইম ভিউ
Update : বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪

কুড়িগ্রাম শহরের বুকে অবস্থিত জাহাজ ঘর, কেবল তার অনন্য নকশার জন্যই নয়, বরং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্যও বিখ্যাত। কুড়িগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বর বা শহীদ মিনার থেকে পূর্ব দিকের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের বাম দিকের রাস্তাটি দিয়ে সোজা ৮০০ মিটার বা ১০ মিনিট হাঁটার পর দেখতে পাওয়া যায় জাহাজ ঘর।

কুড়িগ্রাম বাজার হয়ে কালীবাড়ি মোড় পার হলে যেমন চোখে পরে জাহাজ ঘর, তেমনি ডায়াবেটিক সমিতির দিক থেকে পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়া হয়ে বিএনপি অফিস পার হলেই দেখতে পাওয়া যাবে জাহাজ ঘরের চালক নাবিকের কেবিনটি।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২৭ সালে তৎকালীন বিখ্যাত সমাজসেবী, ব্যবসায়ী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সতীশ চন্দ্র বকসী এই অসাধারণ স্থাপনাটি নির্মাণ করেছিলেন। জাহাজ ঘরের নকশা অনুপ্রাণিত হয়েছিল ব্রিটিশদের তৈরি স্টিমার থেকে। এক সময় স্টিমারের আদলে তৈরি এই বাড়ির সামনের দিকে তিনটি চিমনী এবং পিছনের দিকে একটি চিমনী ছিল।

জাহাজ ঘরের কর্মকান্ড :

ব্রিটিশ আমলের কংগ্রেস নেতা যারা সতীশ বকসীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, তারা নিয়মিতভাবে এই বাড়িতে বৈঠক করতেন।

ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উন্নয়নের জন্য আলোচনা হতো এই জাহাজ ঘরেই।

সতীশ বকসী পরবর্তীতে সতীশ পার্ক নামে একটি ফুটবল মাঠ স্থাপন করেন যেখানে খাঁন বাহাদুর খৈমুদ্দিন (পূর্বাশা সিনেমা হলের মালিক) শিল্ড খেলা খুবই জনপ্রিয় ছিল।

ঐতিহাসিক নাটক মঞ্চায়নের জন্য জাহাজ ঘরে একটি সৌখিন নাট্যদল গঠিত হয়েছিল।

সতীশ বকসী বিনাপানি নাট্য মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে নিয়মিত নাটক হতো।

পরবর্তীতে বিনাপানি নাট্য মঞ্চ বিনাপানি সিনেমা হল-এ রূপান্তরিত হয়, যা কুড়িগ্রাম জেলার প্রথম সিনেমা হল।

কুড়িগ্রামে প্রথম রিক্সা চালু করেছিলেন সতীশ বকসীর পুত্র অজয় কুমার বকসী।

বর্তমানে জাহাজ ঘরটি জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দ্বিতল এই জাহাজ ঘরে নিকট অতীতে কাত্যায়ানী প্রেস, সূর্য্য ইলেকট্রিক আর সাধনা ঔষধালয়ের সাইনবোর্ড ছিল।

জাহাজ ঘর বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই স্থাপনাটি সংরক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যগত ঐতিহ্য তুলে ধরা উচিত। আসুন, আমরা সকলে মিলে জাহাজ ঘরকে রক্ষা করি এবং এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ধারণ করে রাখি। জাহাজ ঘর কুড়িগ্রাম শহরের অনুপম এক সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যময় জাহাজ ঘর হেরিটেজ সমৃদ্ধ।

জাহাজ ঘর টিকে পুরোনো আদলে সংস্কার করা কি খুব খুব জটিল কোন কাজ ? কুড়িগ্রামের পৌর মেয়র চাইলে এটি সংস্কার করে টিকিটের বিনিময়ে পরিদর্শনের সিস্টেমে সংস্কারের টাকা খুব দ্রুতই উঠিয়ে নিতে পারেন পৌরসভার ফান্ডে । কাঠ আর টিনের তৈরী এই জাহাজ ঘর বিনির্মানে কতই বা টাকা লাগবে ?

পাদটীকাঃ জাহাজ ঘর সম্পর্কিত ইতিহাস ভিত্তিক তথ্য সমূহ সংগৃহিত।

লেখক- লুৎফর রহমান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর