কামরুল হাসান লিটন, ফেনী:

বুধবার(৩০ এপ্রিল) গত জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ক্ষতিগ্রস্থ গৃহহীন পরিবারের মাঝে সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা তেজগাঁও কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ১১০টি ঘরের চাবি হস্তান্তর ও প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

এ প্রকল্পের উদ্বোধন করার সময় ভার্চুয়ালি উপস্থিত উপকারভোগীদের উদেশ্যে বলেন, ২০২৪ সালের বন্যা ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। যা ইতিহাসে অবিস্মরনীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, আমরা যখন জুলাইয়ে গণঅভ্যুথানের মাঝে ক্ষমতায় আসি তখন সকল শ্রেণীর দাবী মাথায় নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ঠিক তখনই দেশের এ দক্ষিনাঞ্চলের জেলা গুলিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এটি সম্পূর্ন ভিন্ন জায়গার বন্যা ছিল। এ বন্যায় আমাদেরকে এত বেশী ক্ষতিগ্রস্থ করবে জানা ছিলনা। যা আমাদের ধারনার বাহিরে। আমাদের বন্যা অন্য বন্যার চেয়ে দীর্ঘতম ছিল। যা আমাদের মানুষগুলোকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলেছে। এ বন্যা দীর্ঘ হওয়ায় মানুষের মাঝে মানবিক জায়গা তৈরী হয়ে যায়। মানুষ ত্রাণ নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ত্রাণ নিয়ে সারাদেশের মানুষ ছুটাছুটি করছে। কে কার আগে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। মানবিক দরদগুলি তখন মানুষের মাঝে ফুটে উঠে। আমরা মনে করেছি এ বন্যায় সাধারন মানুষ তাড়াতাড়ি কেটে উঠতে পারবে। কিন্তু না বন্যা চলে যাওয়ার পর তা বুঝতে পেরেছি এটি কত ভয়াবহ ছিল। বন্যায় যারা বাড়িঘর হারিয়েছে তাদের কোথাও যাওয়ার কোন জায়গাই ছিলনা।

তিনি উপস্থিত সকলের উদেশ্যে বলেন, নানাভাবে প্রস্তাব আসছিল বাড়ির জন্য টাকা দিতে হবে। টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আমি একটু শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম। টাকা দিতে গেলে এই টাকা ভাগ-বাটোয়ারা অনেক রকম ব্যাপার হয়ে যাবে। যারা প্রাপ্য তাদের হাতে পৌছঁবে না। তখন প্রস্তাব করা হয়েছিল আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তা করার। সেই প্রকল্পটি কিভাবে হবে বা তার নাম কি হবে। তখন ভাবলাম এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। তখন সেনাবাহিনীর নাম প্রস্তাব করা হলো। তখন স্বস্তি পেলাম। প্রকল্পের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। এ কারণে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। এ প্রকল্পের সাথে সংযুক্ত হয়ে যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।

ফেনী জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ফাজিলপুর গ্রামের সুবিধাভোগী জামাল উদ্দিনের উঠানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ফেনীর ৫টি উপজেলায় ১১০টি ঘর গৃহহীন পবিরারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার মধ্যে ফেনী সদর ৩৫,ফুলগাজী ২০, ছাগলনাইয়া ২০, পরশুরাম ২০,সোনাগাজী ৫ এবং দাগনভূঞাঁ ১০টি। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সেনাবাহিনীর ২৪ ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশন এসব গৃহনির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান,মূখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন,আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম প্রমূখ।

ফেনীর শর্শদী গ্রামের জামাল উদ্দিনের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন ফেনী জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ১০১ পতাদিক ব্যাটালিয়ন ব্রিগেড়িয়ার জেনারেল মোঃ মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ফেনী ক্যাম্পের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহিম মুনায়েম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) ফাহমিদা হক, ফুলগাজীর ইউএনও তানিয়া ভুঞাঁ, ফেনী সদর ইউএনও সুলতানা নাসরিন কান্তা, ছাগলনাইয়ার ইউএনও সুবল চাকমা, দাগনভুঞাঁর ইউএনও স,ম,আজহারুল ইসলাম. পরশুরামের ইউএনও আরিফুর রহমান, সোনাগাজীর ইউএনও কামরুল হাসান প্রমুখ।