বিদায় মঞ্জু ভাই

আব্দুল খালেক ফারুক:
মঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে আমার ঘনিষ্টতা হয় ১৯৯৬ সালে। কুড়িগ্রামের প্রথম দৈনিক আজকের কুড়িগ্রামের প্রকাশনার সুবাদে। আমি ওই পত্রিকার সহকারী সম্পাদক (বার্তা) ও মঞ্জু ভাই সহকারী সম্পাদক। তিনি ফিচার ও কলাম লিখতেন। আমি সংবাদ সম্পাদনা করতাম।
এই পত্রিকার উদ্যোক্তা ডা. মাহফুজার রহমান মজনু ভাই। তাঁর সঙ্গে কয়েকজন চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী বন্ধু ‘সমমনা লিমিটেড’ এর ব্যানারে পত্রিকার প্রকাশনায় যুক্ত হন। সম্পাদক শ্রদ্ধেয় শফি খান, নির্বাহী সম্পাদক আমার সাংবাদিকতার গুরু শ্রদ্ধেয় মো: শাহাবুদ্দিন। আমরা বিপুল উদ্যম নিয়ে শুরু করলেও এ যাত্রায় সফল হতে পারিনি।
মঞ্জু ভাই পরবর্তী সময়ে দৈনিক মুক্তকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি হয়ে পুরোমাত্রায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে দৈনিক সংবাদের জেলা প্রতিনিধি হন। সত্তর দশকে তিনি কিছুকাল সাংবাদিকতা করে চাকুরির সুবাদে চলে যান এলাকা ছেড়ে। চাকুরি ছেড়ে আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়, প্রাণের টানে। কিছুদিন শফিকুল ইসলাম বেবুর সম্পাদনায় ‘বাহের দেশ’ নামে একটি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু ভাইয়ের ঠিকানা সংস্থার হিসাবরক্ষক হিসেবে সামান্য কিছু সন্মানি পেতেন। তবে পুরোদস্তুর সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে তিনি কুড়িগ্রামের সাংবাদিকতা অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। দিয়েছেন নতুনমাত্রা। তাঁর অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান থেকে উপকৃত হয়েছে এই জনপদ।
মঞ্জু ভাইয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি প্রচুর সংবাদ ও ফিচার লিখতেন। সংবাদের শরীর ঠাসা থাকত নানা তথ্য আর উপাত্ত দিয়ে। তাঁর চমৎকার হাতের লেখা আর সুলিখিত সংবাদ আমাদের জন্য যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল। জনকণ্ঠের সাংবাদিক রাজু মোস্তাফিজের অফিস কিংবা ক্রীড়া সংস্থায় বসে সংবাদ লিখতেন সাদা কাগজে, গোটা গোটা অক্ষরে। আমরা পাশে বসে দেখতাম, কখনও পরামর্শ দিতাম; এক সঙ্গে বসে যে যার মত করে লিখে ফ্যাক্সের দোকানে ছুটতাম সংবাদ পাঠাতে। এসময় শফিখান, রাজু মোস্তাফিজ, আহসান হাবীব নীলু ও আমি ছিলাম বেশিরভাগ সময়।
মঞ্জু ভাই কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি দাপ্তরিক কাজ ও হিসাব নিকাশ সংরক্ষণে ছিলেন পটু। নানা মত ও পথের ভিন্নতা সত্বেও সাংবাদিক তথা প্রেসক্লাবের ঐক্য ও উন্নয়নে ছিলেন অবিচল।
টেলিভিশন সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন রোল মডেল। কাজ করেছেন, ইটিভি, সিএসবি, সময় ও এখন টিভিতে। সংবাদ বাছাই ও অকুস্থলে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য ছুটতেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। এ ক্ষেত্রে বয়স কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তাঁর রাগ ও জেদ ছিল, মুখের উপর কথা বলা ও সমালোচনা করার বাতিক ছিল, তবে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করতেন। ষাটোর্ধ ওই সাংবাদিকের প্রয়াণে কুড়িগ্রামের সাংবাদিকতা অঙ্গণে এক ধরণের শূন্যতা তৈরী হলো।
কুড়িগ্রামের সাহিত্য অঙ্গনকেও সমৃদ্ধ করে গেছেন মঞ্জু ভাই। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লিখতেন। সম্পাদনা করেছেন লিটল ম্যগাজিন। পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়াকেন্দ্রিক তাঁর শৈশব ও কৈশরের বেড়ে ওঠা ও সাহিত্য চর্চায় সহযোগী হয়েছেন অনেকেই। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনুসন্ধানে তিনি মহারাজের দরবারসহ অনেক লেখা লিখে সমৃদ্ধ করে গেছেন কুড়িগ্রামের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা অঙ্গনকে।
মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুক। সেই দোয়া, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল।
বুকভরা কষ্ট, শেষযাত্রায় শামিল হতে পারলাম না। ক্ষমা করবেন মঞ্জু ভাই। বিদায়।(ফেসবুক থেকে নেয়া)
লেখক- আব্দুল খালেক ফারুক
সাধারণ সম্পাদক,
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব







