সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: অধিকতর তদন্তের দাবি নিহতের পরিবারদের

রিপোর্টারের নাম / ৬৭ টাইম ভিউ
Update : শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪

বিডিআর বিদ্রোহে নিহত তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের পুত্র রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেছেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ ফজলে নূর তাপস ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম সরাসরি জড়িত। আমি নাটক সাজানোর নামে রহস্যশালা আর চাই না।-খবর তোলপাড়।

শনিবার ১৭ আগস্ট দুপুরে মহাখালী রাওয়া ক্লাবের স্কাইলাইন রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ট্রায়াল কমিশন গঠনের দাবি জানান।

জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের কথা বলতে গেলে অনেক কথাই গুছিয়ে বলা কঠিন হয়ে যায়। আমার বাবা সবসময় বলতেন, মানুষের স্বার্থ আগে দেখতে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর দেশ প্রেমিক অনেক সেনা অফিসার বিচার চাইতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছেন। কেউ কেউ জেলে গেছেন। দরবারের শত শত অফিসারের জীবন ধ্বংস করা হয়েছে।’

এক আওয়ামী লীগ নেতা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, ‘ওনার নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার বাবা-মাকে জবাই দিয়েছেন। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে বাবা-মার মতো আমাকেও জবাই দিয়ে দেবে। আমরা দাবি করছি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। আমরা সেসব দেশ প্রেমিক অফিসারদের অবদান ভুলব না। ক্ষতিগ্রস্ত সেনা অফিসারদের পরিবারকে যেন যথাযথ সম্মান ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আমরা শহিদ পরিবার মনে করি, যেসব নির্দোষ, দেশপ্রেমিক বিডিআর সৈনিক জেল খাটছেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।’

শাকিল আহমেদের ছেলে বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই; যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) অন্য একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীতে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে। ওই দিনটিকে আমরা শহিদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি করছি।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ট্রায়াল বা তদন্তকে আমরা মানি না। কারণ, প্রধান যে হত্যাকারী, নির্দেশদাতা তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। খুনি কি তার নিজের বিচার করবে? মুখ বন্ধ করে দেখতে হয়েছে, কেমন করে তদন্ত, ট্রায়াল প্রভাবিত করল। ডাল ভাতের কথা বলল। নীরবে সহ্য করতে হয়েছে।’

সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী এগিয়ে যায়। তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই এই জন্য যে, ছাত্র-জনতার ওপর গুলি না করে এগিয়ে এসেছেন। জনগণকে অনুরোধ করব, সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাহিনীর পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের সাবেক মহাপরিচালক লেফট্যানেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর। যিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমরা চাইব, অন্তত তার তদন্ত কমিটির রিপোর্টটা পাব। উচ্চ আদালত যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, সেগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে পর্দার আড়ালে যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা বেড়িয়ে আসবে।’

রাকিন আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকরাও কম নির্যাতনের শিকার হননি। অনেক কিছুই প্রকাশ করতে পারতেন না।’

পরে কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর হাতে থাকা ট্র্যাজেডির সমস্ত তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ, তদন্ত কমিশন গঠন, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহিদ সেনা দিবস ঘোষণাসহ পিলখানায় শহিদ ৫৭ অফিসার ও ১৭ সাধারণ নাগরিকের পরিবারের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট সাকিব বলেন, ‘দুটো তদন্ত কমিটি হয়েছিল। বাহিনীর পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের সাবেক মহাপরিচালক লেফট্যানেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর। যিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমরা খুব করে চাইব, অন্তত তার তদন্ত কমিটির রিপোর্টটা প্রকাশ করুক। কারণ, আমরা খুব কাটছাঁট অংশ গণমাধ্যমে জেনেছি। আমরা পুরোটাই দেখতে চাই। তাতে আমরা অনেক কিছু জানতে পারব। আর উচ্চ আদালত যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, সেগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে পর্দার আড়ালে যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা বেড়িয়ে আসবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরা চার্জ করতে পারব।’

গত ১৫ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তাদের দায় করছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে আমি তো সরাসরি দায়ী করতে পারি না। আমরা তো অনেক নাম শুনি। আপনারাও শোনেন। কিন্তু সেই নামগুলো আমরা তখনই বলতে পারব যদি তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এমনি এমনি নাম বলে দেওয়া যায় না।’

কর্নেল কুদরত ইলাহীর স্ত্রী লবী রহমান বলেন, ‘হয়তো বলবেন, এতদিন পর কেন আমরা এখানে। অনেক কিছুই তো পেয়েছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে আমরা কিন্তু শুধু বিচারই চেয়েছি। প্রথমেই আমাদের প্রশ্ন করা হয়, কী কী পেয়েছি। ইচ্ছে হয় সব ফেরত দেই, আমার স্বামী শহিদ কর্নেল কুদরত ইলাহীকে ফিরিয়ে দেন। এটা সিনেমা বা নাটকের প্রমোশন না, এটা খুবই সেনসিটিভ।’

সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা ৭ দফা দাবি:

১. পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সত্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে পূর্বে যে সমস্ত তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের রিপোর্ট পাবলিক করতে হবে।

২. হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় মোতাবেক তিন বিচারক যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, অবিলম্বে সেই তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। এতে পর্দার আড়ালে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বেরিয়ে আসবে।

৩. অফিসিয়াল গেজেট করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহিদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গেজেটে শাহাদাতবরণকারী সকলকে শহিদের মর্যাদা দিতে হবে।

৪. ২৫ ফেব্রুয়ারি শহিদ সেনা ও শোক দিবসকে ঘিরে গোটা দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে।

৫. পিলখানা ট্রাজেডিকে স্কুলের পাঠ্য বইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে, কেমন ছিল এই শহিদদের ত্যাগ।

৬. যেসব সেনা কর্মকর্তা এ ঘটনাকে ঘিরে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা যথাযথ কম্পেন্সেশন প্রদান করতে হবে।

৭. নির্দোষ কোনো বিডিআর সদস্যকে যেন কোনভাবেই সাজা না দেওয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর