রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন

জ্বালানি ও ডলার সংকটে কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বেড়েছে লোডশেডিং

রিপোর্টারের নাম / ৫৭ টাইম ভিউ
Update : বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানির সরবরাহ কমে গেছে তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। আবার গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ঘাটতি হচ্ছে। এতে বেড়েছে লোডশেডিং। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ডলার জোগাড় করতে না পারায় বিল বকেয়া বাড়ছে। তেলচালিত কেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে গরম বাড়তে থাকায় চাপে পড়ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।-খবর তোলপাড়।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি অনেক বেশি হলে রাজধানী ঢাকাতেও লোডশেডিং করতে হয়। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। এ দুটি সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ঢাকায় আগের দিনের চেয়ে লোডশেডিং বেড়েছে মঙ্গলবার। দুটি সংস্থা সোমবার দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ১০০ মেগাওয়াট করে ঘাটতি পেয়েছিল। রাতে ডিপিডিসির ঘাটতি ২০০ মেগাওয়াট ছাড়ায়। গতকাল দিনেও ডেসকো এলাকায় ১৬০ মেগাওয়াট ও ডিপিডিসি এলাকায় ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। এতে করে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় এক ঘণ্টা, কোথাও দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়েছে।

তবে ঢাকার বাইরে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহর এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। তবে বেশি হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ছয়টি বিতরণ সংস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি)। এ সংস্থাটির তথ্য বলছে, গতকাল দিনের বেলায় তিনটার দিকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে তারা। ঢাকার আশপাশের এলাকাতে ৩৮ শতাংশ ঘাটতি ছিল তাদের। কুমিল্লায় ৩৭ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৩৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৩ শতাংশ, সিলেটে ২৮ শতাংশ, রংপুরে ২৬ শতাংশ বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল আরইবির।

পিডিবির ভাষ্যমতে, দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট। প্রয়োজনের সময় আগে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এখন ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। দিনে ১২০ থেকে ১৩০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে বিদ্যুৎ খাত। এখন সরবরাহ হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে দিনে গ্যাস আসে ১১০ কোটি ঘনফুট। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল গত ২৭ মে থেকে বন্ধ। এতে এখন সরবরাহ হচ্ছে ৬০ কোটি ঘনফুট। ১২ সেপ্টেম্বর টার্মিনাল চালু হতে পারে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, সামিটের টার্মিনাল চালুর পর মজুত থাকা গ্যাস থেকে কিছু সরবরাহ করা যাবে। খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। দরপত্র আহ্বান করে প্রক্রিয়া শেষ করতে একটু সময় লাগতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে আড়াই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ বাড়েনি। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও কম সরবরাহ হচ্ছে। এর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব ইউনিট। এতে মঙ্গলবার তিন হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে লোডশেডিং। একক বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র। দিনে দেড় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে তারা। তারা এখন সরবরাহ করছে এক হাজার মেগাওয়াট।

পিডিবি ও আদানি সূত্র জানায়, লোডশেডিং কমাতে পাওনা পরিশোধে সোনালী ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সোমবার ৮০ লাখ ডলার ও মঙ্গলবার ২০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। বুধবার আরও কিছু পরিশোধ করার কথা রয়েছে। তবে বকেয়ার তুলনায় এটা তেমন কিছুই না। দিনে ৩০ লাখ ডলার পাওনা হয় আদানি। তাই তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে রাজি হচ্ছে না। আরও কিছু বিল পরিশোধ করা হলে সরবরাহ বাড়তে পারে।

জানা গেছে, ব্যাংক থেকে বন্ড ছেড়ে বেসরকারি খাতের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের চাপ কিছুটা কমিয়েছিল গত আওয়ামী লীগ সরকার। তবুও বকেয়া জমে ছিল। গ্যাসের বিল, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল, ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল মিলে পিডিবির বকেয়া এখন ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বকেয়ার চাপ থাকায় বেসরকারি খাতের তেলচালিত কেন্দ্রগুলো থেকেও সর্বোচ্চ চাহিদায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এর বাইরে বিলম্বে বিল পরিশোধের জরিমানা হিসেবে ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার, যা প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এটি নিয়ে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে না। চাহিদামতো ডলারও পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে গরম বেড়ে যাওয়ায় একটু বিদ্যুৎ ঘাটতি হচ্ছে। তেলচালিত কেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। গত সোমবার সকাল নয়টার দিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তৃতীয় ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে থেকে অন্য দুই ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্কারের জন্য বন্ধ আছে। এই প্রথম বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিটই বন্ধ হয়েছে। ফলে পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলা ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর