৮০০ বছর আগে তৈরি ঢাকেশ্বরী দুর্গামন্দিরের ইতিহাস
সকলের বিশ্বাস, দেবীর নামানুসারেই রাজধানী ঢাকা শহরের নামকরণ করা হয়েছিল
প্রহলাদ মন্ডল সৈকত/দিপালী রানী রায়:
বাংলাদেশের প্রাচীন দুর্গামন্দির ঢাকেশ্বরী। এমনটা মনে করেন অনেকে। ৮০০ বছর আগে মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেন। মনে-প্রাণে সকলের বিশ্বাস, দেবীর নামানুসারেই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের নামকরণ করা হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক এই মন্দিরের গঠন ও স্থাপত্যের নানা পরিবর্তন করা হয়েছে।
এই মন্দির নিয়ে নানা কথা প্রচলিত রয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে, রাজা বিজয় সেনের স্ত্রী রানী পুণ্যস্নানের জন্য লাঙ্গলবন্দে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। তিনিই বল্লাল সেন নামে পরিচিত। সিংহাসনে আরোহণের পর, বল্লাল সেন তার জন্মস্থানকে মহিমান্বিত করার জন্য এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। আবার এও কথিত যে, বল্লাল সেন একবার জঙ্গলের নিচে ঢেকে থাকা দেবতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এর পর তিনি সেখান থেকে দেবতা উন্মোচন করেন এবং ঢাকেশ্বরী নামে মন্দির নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের হিন্দুরা ঢাকেশ্বরীকে ঢাকার প্রধান দেবতা বলে মনে করেন, যা দেবী দুর্গার আদি শক্তির অবতার বা রূপ।
দুর্গার প্রতিমাকে ঢাকেশ্বরী বলা হয়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে চারটি শিব মন্দির রয়েছে। ১৬ শতকে রাজা মানসিং সেখানে চারটি শিব লিঙ্গ স্থাপন করে এই মন্দিরগুলো তৈরি করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মন্দিরের জমির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বেহাত হয়ে গিয়েছে এবং বর্তমান প্রাঙ্গণ সম্পত্তির ঐতিহাসিক নাগালের তুলনায় যথেষ্ট কম। জাতীয় মন্দির হওয়ায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক পাশাপাশি ধর্মীয় কার্যকলাপে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ঢাকেশ্বরী। প্রতি বছর মহাসমারহে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সাংসদদের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আগমন ঘটে এখানে।
আরও পড়ুন:
জানা যায়, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই মন্দির মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অর্ধেকেরও বেশি ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। প্রধান উপাসনালয়টি পাকিস্তান সেনাবাহিনী দখল করে নেয় এবং গোলাবারুদ রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করে। ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন এবং মন্দির কর্তৃপক্ষকে সংলগ্ন জমি উপহার দেওয়ার ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের ৭ জুন বাংলাদেশে তাঁর সফরের সময় মন্দিরে প্রার্থনা করেছিলেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁকে ঢাকেশ্বরী দেবীর একটি মডেল দিয়েছিলেন।