বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ক্যাবের ৯ সুপারিশ
বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য সংগ্রহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করাসহ ৯টি সুপারিশ জানিয়েছে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অসাধু ও মুনাফা শিকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ক্যাবের নেতারা এসব সুপারিশ জানান।-খবর তোলপাড়।
অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ক্যাবের নেতারা এসব সুপারিশ জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। যা সাধারণ ভোক্তাদের জীবন অতিষ্ঠের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসাধু ও মুনাফা শিকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সব পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বর্তমানে ঢাকার খুচরা বাজারে অধিকাংশ সবজির কেজি ১০০ টাকার ওপরে।
এ ছাড়া খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম দেশের ইতিহাসে সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় উঠেছিল। লাল ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৭০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা ২ মাস আগেও ছিল ১৫০ থেকে ১৬২ টাকা। কিন্তু একজন সাধারণ ক্রেতার এই উচ্চ মূল্যের বাজারের সঙ্গে কীভাবে চলবে, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার।
মানববন্ধনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সরকারের লক্ষ্য থাকা উচিত জনগণকে স্বস্তি দেওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে এখন সেই স্বস্তি নেই। আর অস্বস্তির কারণেই কিছুদিন আগে (আওয়ামী লীগ) সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারও সেই অস্বস্তি দূর করতে পারছে না। এর কারণ হচ্ছে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে সিন্ডিকেটের হাত। অবিলম্বে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের স্বস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সিন্ডিকেটকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ভেবেছিলাম, দেশে আর বুঝি সিন্ডিকেট থাকবে না। কিন্তু দুই মাস না যেতেই আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি সংস্কারের চিন্তা বাদ দিন, বাজার মূল্য এবং সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিন।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, বাজারের নিত্যপণ্যের দামে হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তা। কিন্তু এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না সরকারকে। ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করছে। কিন্তু সেটা অপ্রতুল্য, তাদের কাজের পরিধি আরও বাড়াতে হবে। আমাদের একটাই দাবি, নিত্যপণ্যের মূল্য ভোক্তার নাগালের মধ্যে আনুন।
৯ দফা সুপারিশগুলো হলো-
১. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সারা দেশে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ এর কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে।
২. পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব পণ্যের বিক্রয়মূল্য দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে।
৩. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য সংগ্রহ, সরবরাহ ও প্রাপ্তি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি মূল্য, পাইকারি মূল্য ও খুচরা মূল্য নির্ধারণ করতে হবে ও তা বাস্তবায়নের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫. কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, মজুতকারী ও মুনাফা শিকারিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে এবং তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৬. পেঁয়াজ, রসুন ও আদার অধিকতর চাষাবাদের জন্য বীজ, সার ও লাগসই আধুনিক প্রযুক্তি কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করতে হবে।
৭. প্রাণিজ পুষ্টির চাহিদা পূরণে ক্ষুদ্র পোলট্রি খামারিদের আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।
৮. পেঁয়াজ, রসুন, আদা, সয়াবিন তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক ছাড় দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে এবং পণ্য আমদানির পর তা যেন নির্দিষ্ট দামে বাজারে বিক্রি হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সড়কে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন হয়রানি বন্ধ করার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানান তিনি।