নেপালের ‘নেপো কিডস’দের গল্প, যাদের বিলাসিতায় ক্ষুব্ধ জেন-জি’রা


নেপালে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গণবিক্ষোভে। সাধারণ নেপালিদের যখন বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং চরম দারিদ্রতার সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে, তখন রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিলাসবহুল গাড়ি, ব্যাগ এবং বিলাসী ছুটি কাটানোর নানা ছবি প্রকাশ করে চলেছেন। -খবর তোলপাড়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন—যখন সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হিমশিম খায়, তখন নেপো কিডরা লাখ টাকার জামাকাপড় পড়ে ঘুরে বেড়ায়। কারও কারও মতে এই ক্ষোভ শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি প্রজন্মগত বঞ্চনার বহিঃপ্রকাশ। খবর এনডিটিভির।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেপাল এশিয়ার অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। কেলেঙ্কারির তালিকায় রয়েছে ৭১ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ, যা পোখারা বিমানবন্দরের নির্মাণে খরচ দেখানো হয়েছিল। এছাড়া, ভুটান থেকে বিতাড়িত শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ ‘কোটা’ বিক্রির কেলেঙ্কারিও ফাঁস হয়েছে।
এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা পুঞ্জীভূত অসন্তোষের বারুদে যেন স্ফুলিঙ্গের ছিটা হয়ে ধরা দেয়। এরপর গণবিক্ষোভের জেরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এবং নেপালি কংগ্রেসের জোট সরকারের পতনের সাক্ষী হয় বিশ্ব।
তবে আন্দোলন চলাকালেই বিক্ষুব্ধ প্রজন্ম বিভিন্ন পোস্টারে তাদের প্রতিবাদের লেখা তুলে ধরেছেন। অনেক আন্দোলনকারীর হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘নেতাদের সন্তানেরা গুচি ব্যাগ নিয়ে বিদেশ থেকে ফিরে আসে, আমাদের সন্তানেরা ফেরে কফিনে।’
বিক্ষোভকারীদের সমালোচনার নিশানায় ছিলেন দেশটির একাধিক নেতামন্ত্রীর পুত্র-কন্যা। তাদেরই একজন ২৯ বছর বয়সি শৃঙ্খলা খাতিওয়াড়া। অনেকের মতে, নিজের যোগ্যতায় নয়, বাবার প্রভাবের কারণে মিস নেপাল খেতাবটি হস্তগত করেছেন শৃঙ্খলা।
সাবেক মিস নেপাল শৃঙ্খলা
সাবেক মিস নেপাল শৃঙ্খলা
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করা শৃঙ্খলা পেশায় স্থপতি। ২০১৮ সালে মিস নেপাল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার পর তিনি একজন মডেল হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেন। ইনস্টাগ্রাম ছাড়াও তার একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে যেখানে তিনি তার জীবন ও কাজ নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার করেন। সেসব ভিডিওতে তার অভিজাত ও বিলাসী জীবনযাত্রার ঝলক ফুটে ওঠে। তাতেই সাধারণ নেপালি জনগণের সঙ্গে তাদের জীবনযাত্রার ফারাকটা স্পষ্ট হয়েছে।
নেপো কিডদের আরেকজন নেপালি গায়িকা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার পুত্রবধূ শিবানা শ্রেষ্ঠা। তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রায়শই বিলাসবহুল বাড়ি এবং ব্যয়বহুল ফ্যাশনের ভিডিও পোস্ট করেন। তিনি এবং তার স্বামী জয়বীর সিংহ দেউবা কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বলে অভিযোগ রয়েছে নেপালে।
শিবানা শেষ্ঠা
শিবানা শেষ্ঠা
শিবানার দাদা কেদার ভক্ত শ্রেষ্ঠা ছিলেন নেপালের সাবেক বিদেশ সচিব এবং রাষ্ট্রদূত। গান গাওয়ার পাশাপাশি শিবানা একটি প্রসাধনী পণ্যের ব্যবসাও পরিচালনা করেন। তারও ইউটিউবে নিজস্ব একটি চ্যানেল রয়েছে। ব্যাপক অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং দুর্নীতির মধ্যে এই ধরনের বিলাসী জীবনের ভিডিও ক্ষোভের আগুনে যেন ঘি ঢেলেছে।
স্মিতা দহল
স্মিতা দহল
নেপালের সাধারণ নাগরিক যখন চাকরির জন্য লড়াই করছিলেন, তখন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ডের নাতনি স্মিতা দহল লাখ লাখ টাকার গুচি হ্যান্ডব্যাগ প্রদর্শনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচিত হয়েছিলেন। প্রচণ্ডের পরিবারের এই সদস্যকেও ‘নেপো কিড’ আখ্যা দেয়া হয়েছে।
সৌগত থাপা
সৌগত থাপা
দেশটির আইনমন্ত্রী বিন্দুকুমার থাপার ছেলে সৌগত থাপাকে অপব্যয়ের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তিনি চেম্বার অফ কর্মাসের উচ্চ পদে ছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তার জীবনযাত্রা নিয়ে ব্যাপক চর্চা হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষ যখন দারিদ্রের শিকার, তখন এই মন্ত্রীপুত্র লাখ লাখ টাকার পোশাক পরে অনলাইনে প্রদর্শন করেন। সৌগতকে বছরের অধিকাংশ সময় বিদেশে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সেখানে দামি গাড়ি চালিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করেন তিনি। অনেকেরই দাবি, চেম্বার অফ কমার্সের দায়িত্বপালনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাব আছে সৌগত থাপার। কেবলমাত্র বাবার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেটি দখল করে বসে আছেন তিনি।