“অনেকে বলছেন ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন” সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা
‘এমন মানুষও রয়েছেন, যারা বলছেন আপনি ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন। সুতরাং, মানুষ নানা ধরনের কথাই বলে। তারা বলে নির্বাচনের দরকার কী? কার নির্বাচন দরকার?’
ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদি হাসান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে জানতে চান—নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের এত সময় লাগছে কেন? এই প্রশ্নের জবাবে এমন কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।-খবর তোলপাড়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার ফাঁকে আলজাজিরা টেলিভিশনের টক শো ‘হেড টু হেড’-এর উপস্থাপক ও জেটিওর প্রতিষ্ঠাতা মেহেদি হাসানকে সাক্ষাৎকার দেন ড. ইউনূস ।সাক্ষাৎকারের তিন মিনিটের একটি ক্লিপ সোমবার রাতে জেটিওতে প্রচার করা হয়েছে।
আপনার অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর ধরে ক্ষমতায়। আপনি বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে। এটা আরো পরে হওয়ার কথা ছিল। আপনি ফেব্রুয়ারিতে কেন এগিয়ে এনেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজানের কারণে এগিয়ে আনা হয়েছে।
মেহেদি হাসান: আপনি সাক্ষাৎকারের শুরুতে বলেছিলেন, বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখন কাজ দেখতে চায়। সমালোচকরা বলছেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। নির্বাচনের জন্য আরো ছয় মাস অপেক্ষা করা খুব দীর্ঘ। মানুষ ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। কেন আমরা এর আগে নির্বাচন করতে পারছি না? নেপালের অন্তর্বর্তী নেতা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেন বাংলাদেশে ১৮ মাস লাগছে?
ড. ইউনূস: নিশ্চয়ই! আপনি জানিয়েছেন, মানুষ বলছে কেন এত সময় লাগছে। আবার এমন মানুষও আছে যারা বলেন, ‘পাঁচ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন। সুতরাং, মানুষ সব ধরনের কথাই বলছে।’ তারা বলছে, ‘আপনি থাকুন। নির্বাচনের দরকার কী? নির্বাচন কার দরকার?’
মেহেদি হাসান: এমন কথা যারা বলছেন, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা বলেন, কেন আমরা তাড়াতাড়ি নির্বাচন করতে পারছি না? এই বিলম্ব কীসের জন্য?
ড. ইউনূস: যখন তারা এই কথা বলে, তখন তা গণতন্ত্র নিয়ে নয়, সুশাসন নিয়ে কথা বলে। আমরা দুর্নীতিমুক্ত শাসন দেখতে চাই। সে জন্যই তারা বলে, আপনি থাকুন! কারণ নির্বাচনের পর আমরা বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে চাই না। আপনি এক ধরনের মতামত তুলে ধরেছেন, আমিও আরেক ধরনের মতামত তুলে ধরলাম। কোনটি বেশি শক্তিশালী?
মেহেদি হাসান: কিন্তু আপনি কি আজ বলবেন, নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে এত সময় লাগার কারণ কী?
ড. ইউনূস: আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা কতদিন থাকব তা কেউ নির্ধারণ করে দেয়নি। আমরা কতদিন থাকব সে সিদ্ধান্ত আমাদের। তবে আমাদের তিনটি কাজ করতে হবে। একটি হলো সংস্কার, একটি বিচার এবং শেষটি নির্বাচন। আমরা সংস্কারের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছি। এটি একটি বিরাট এজেন্ডা। আপনি যদি শুধু নির্বাচন করেন, তবে সেই পুরোনো বিষয় আবার ঘটবে। কারণ আইন, নিয়ম, পদ্ধতি একই রয়ে গেছে। তাই ছাত্রদের নেতৃত্বে জনগণের একটি দাবি হলো সংস্কার করা। সুতরাং, আগে নিশ্চিত করতে হবে যে, ফ্যাসিবাদের সব শিকড় উপড়ে ফেলা হয়েছে, যাতে ভিন্ন ধরনের কাঠামো তৈরি হয়; যাতে আগের মতো সরকার আবার ফিরে আসতে না পারে। সেটাই আমাদের এজেন্ডা।
মেহেদি হাসানের সাক্ষাৎকারে আরো কিছু বিষয়ে কথা বলেন ড. ইউনূস। এর মধ্যে ছিল রোহিঙ্গা সংকট ও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করাসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়।









Chief Editor-Dipali Rani Roy