আদর্শ আলিম মাদ্রাসা কমিটি নিয়ে দুর্নীতি: জামায়াত নেতার আপিল খারিজ, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল


আঞ্চলিক সংবাদদাতা, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের আদর্শ এতিমখানা দ্বি-মুখী আলিম মাদ্রাসার নবগঠিত কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন চেম্বার জজ আদালত। মাদ্রাসার কথিত সভাপতি ও উলিপুর উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি মোঃ খায়রুজ্জামানের করা আপিল খারিজ করে দিয়ে পূর্বের স্থগিতাদেশই বহাল রাখা হয়, যা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতাদের অভিযোগকে আরও শক্তিশালী করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক অধ্যক্ষ মু. আজিজুর রহমান নবগঠিত এই কমিটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে একটি রিট আবেদন করেন। গত ২৭ আগস্ট বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কমিটিটির কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
আজিজুর রহমানের দাবি, মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আলতাফ হোসেন ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন দাতা সদস্যদের বাদ দিয়ে একটি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছেন। এমনকি ওই তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং গোপনে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে, ভোটার তালিকার ৪৪, ১০৮, ১৯২, ও ২৭৭ নম্বরে থাকা ব্যক্তিরা মৃত, অথচ তাদের নাম তালিকায় রয়েছে। স্থানীয় অভিভাবক সদস্য সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “আমরা কখন, কীভাবে কমিটি গঠিত হলো কিছুই জানি না। অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীরা নিয়োগ-বাণিজ্যের জন্য পকেট কমিটি বানিয়েছেন।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আলতাফ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রিটের বিষয়টি শুনেছি, তবে আমরা সব নিয়ম মেনেই কমিটি করেছি। ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম পাওয়া গেলে সেটা কেরানির ভুল।”
এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় — আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে গভর্নিং বডি অনুমোদন সংক্রান্ত স্মারকের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
পরে, ০৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে কথিত সভাপতি ও সাবেক উলিপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মো. খায়রুজ্জামান হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ ০২ তে আপিল করেন। কিন্তু বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের বেঞ্চ পূর্বের স্থগিতাদেশ বহাল রেখে তাদের ভুয়া কমিটির আবেদন বাতিল করে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জামাত সংশ্লিষ্ট এই সভাপতি খায়রুজ্জামানও অধ্যক্ষ আলতাফের সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতির পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দ্রুত অনুমোদন আনতে ভূমিকা রেখেছিলেন।
অন্যদিকে, সাবেক অধ্যক্ষ মো. আজিজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, “আমার সম্মানহানির উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগত পদ নয়, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ও প্রবিধান রক্ষার জন্য রিট করেছি। আদালতের স্থগিতাদেশই প্রমাণ করে, আমার অভিযোগ সত্য।”
তিনি আরও বলেন, “এই মাদ্রাসা ধর্মীয় শিক্ষার কেন্দ্র হলেও, কিছু অসাধু ব্যক্তি একে ব্যক্তিগত লাভের উপায় বানিয়ে ফেলেছে। আমি আশা করি, প্রশাসন ও বোর্ডের তদন্তে সত্য প্রকাশ পাবে।”
বর্তমানে বিষয়টি উলিপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে পরপর দুটি আদালতের রায়ে এটা স্পষ্ট যে, মাদ্রাসার কমিটি গঠনে মারাত্মক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে, যার সঙ্গে একজন স্থানীয় জামায়াত নেতার সম্পৃক্ততা বিষয়টিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।