বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন

বদলগাছীতে নেই ইউএনও; ভোগান্তিতে জনসাধারণ

রিপোর্টারের নাম / ১১২ টাইম ভিউ
Update : বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪

ফিরোজ হোসেন, বদলগাছী (নওগাঁ):

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় তিন মাসের অধিক সময় ধর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদটি শুন্য থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় ব্যাহত হচ্ছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কর্মকান্ডে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সঠিকভাবে তদারকি হচ্ছে না বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড। ইউএনও না থাকায় প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সবশেষ এ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন তৃপ্তি কণা মন্ডল। বদলিজনিত কারণে গত ৭ মার্চ/২৪ তিনি কর্মস্থল থেকে বিদায় নিয়ে অন্যত্র যোগদান করেন। তারপর থেকে তিন মাসের বেশী সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনও কর্মকর্তা যোগদান করেন নি। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইতিপূর্বে দু’দফায় দু’জনকে উপজেলায় পোস্টিং দিলেও অজানা কারণে তারা যোগদান করেননি এবং কাউকে ওই পদে পদায়ন করা হয়নি।

এ দিকে, ইউএনও হিসেবে কাউকে এ উপজেলায় পদায়ন না করায় কিছুদিন সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্ব পালন করেন। তারপর থেকে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কামরুল হাসান সোহাগ এ উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। মহাদেবপুর উপজেলাটি অপেক্ষাকৃত বড় হওয়ায় মহাদেবপুর থেকে এসে বদলগাছীতে সময় মতো দাপ্তরিক কাজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। জনগুরুত্বপূর্ণ পদটি দীর্ঘদিন ধরে শুণ্য থাকায় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ এসে সেবা না পেয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।

জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে উপজেলায় প্রায় ৩৪টি দপ্তর রয়েছে। ইউএনও না থাকায় এসব দপ্তরের বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। গত কয়েকদিনে উপজেলার ১৮টি দপ্তরে গিয়ে ১২ জন কর্মকর্তা ও কার্যালয়ে কর্মরত অনেক অফিস সহায়কের দেখা মেলেনি। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে অফিস থেকে কেউ কেউ বলছেন তারা বাইরে কাজে আছেন আবার অনেকে বলছেন বিভিন্ন মিটিং আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা পরিষদে আসা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তদারকি না থাকায় বেশিরভাগ দপ্তরের অফিস সময় মেনে চলছে না সংশ্লিষ্টরা। তাদেরকে দেরিতে আসা এবং ছুটির আগেই চলে যেতে দেখা গেছে দিনের পর দিন। এতে ব্যাহত হচ্ছে এসব দপ্তরের স্বাভাবিক কর্মকান্ড। এছাড়াও উপজেলার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন ইউএনও। পদটি শুন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা একাধিক সেবা প্রার্থীরা জানান, জরুরি কাজে এসে ইউএনও না থাকায় ফেরত যেতে হচ্ছে। এতে আমাদের অনেক দূর থেকে এসে প্রচুর খরচ ও সময় ব্যয় করেও কোন কাজ হচ্ছে না।
বদলগাছী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মহাদবেপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বদলগাছীতে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তিনি সব কাজই করছেন, তবে স্থায়ী কর্মকর্তা হলে বেশী ভালো হয়।

বালুভরা ইউপি চেয়ারম্যান আল এমরান হোসেন বলেন, মো. কামরুল হাসান সোহাগ অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে সময়ের কাজ সময়ে হয় না। আর একজন কর্মকর্তা দুই জায়গায় কাজ করতে গেলে সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে স্থায়ীভাবে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকুক এটাই আমাদের কাম্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, বদলগাছীতে দীর্ঘদিন ইউএনও না থাকায় স্বাভাবিক কাজে সমস্যা হচ্ছে। এতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের স্থায়ী কর্মকর্তা না থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। অবিলম্বে উপজেলায় একজন স্থায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদানের দাবী জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান সোহাগের নিকট অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বলেন, আমরা সরকারি কর্মচারি উর্দ্ধতের আদেশে আমাদেরকে যেকোনও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে আমরা বাধ্য। আরও কতদিন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকবেন বা নতুন কোনও ইউএনও যোগদান করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না এটা ডিসি মহোদয় বলতে পারবেন।

এবিষয়ে বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান বলেন, মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তিনি তো কাজ করছেন, খুব বেশী সমস্যা হচ্ছে না। আপনারা লেখালেখি করেন যাতে খুব তাড়াতাড়ি একজন ইউএনও যোগদান করেন।

এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা এর সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমার জানা নেই। তবে পোস্টিং হলে ইউএনও পাবেন বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি জন্য তাঁর কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর