‘আমাদের আবারো অভ্যুত্থানের দিকে যেতে হবে’

শাসকশ্রেণী, লুন্ঠন, দুর্নীতিবাজ শ্রেণী এখনো বাংলাদেশ রয়ে গেছে। আমাদের আবারো অভ্যুত্থানের দিকে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম।
শুক্রবার ১৫ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল আয়োজিত ‘ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল জুলাই গনঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। -খবর তোলপাড়।
ফয়জুল হাকিম বলেন, আমাদের আবারো অভ্যুত্থানের দিকে যেতে হবে। শাসকশ্রেণী, লুন্ঠন, দুর্নীতিবাজ শ্রেণী এখনো বাংলাদেশ রয়ে গেছে। একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের বিচার, লুটেরাদের বিচার আওতায় আনা জরুরি। বাংলাদেশে জনগণের ক্ষমতা আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগন দমন করা চিন্তা বন্ধ করতে হবে। জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সংবিধানে সবার অধিকার নিশ্চিত ও জনগণের হাতে ক্ষমতা আনতে গনতান্ত্রিক সংবিধান প্রণনয় করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার এবং নিহত ও আহত পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতাসহ পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে নিহত-আহত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য করে জুলাই ফাউন্ডেশনে জমা দিতে সহযোগিতা করছি এবং করে যাব। বিভিন্ন জেলায় এসব পরিবারকে জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।
অন্তর্বতীকালীন সরকারে মেহনতী মানুষের প্রতিনিধি নেই জানিয়ে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের এই নেতা বলেন, গণঅভূত্থানের শক্তির ওপর এই সরকার গঠিত হতো, তাহলে এই সংগ্রামে যারা নিহত হয়েছেন। প্রতিরোধ যারা গড়ে তুলেছিলেন। বিশেষ করে যারা গরীব মানুষ। শ্রমজীবী মানুষ। মেহনতী মানুষ। তাদের একটা প্রতিনিধিত্ব থাকতো। কিন্তু আমরা দেখেছি, গণ অভূত্থানের মধ্য দিয়ে এখানে অন্তর্বতীকালীন সরকার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখন পর্যন্ত শ্রমজীবী জনগণ তারা মুক্তি কোন পথে সেই সন্ধান করছেন।
গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্বতীকালীন বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি। ফলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে পেরেছেন। তাকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এসময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার করার দাবি জানিয়েছেন নিহত পরিবারের বাবা-মা। একই সঙ্গে আহতদের চিকিৎসাসহ নিহত ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা ও শহীদ পরিবারের স্বজনরা।
বাড্ডায় নিহত হাফিজুল ইসলামের শাশুড়ী নাসিমা বেগম বলেন, আমি হত্যার বিচার চাই। আমার মেয়ে ও দুই নাতি নিয়ে চলতে কষ্ট হয়। সরকারের কাছে আমরা সাহায্য কামনা করছি।
বাড্ডায় নিহত ইমনের আম্মা কুলসুম বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ২০ জুলাই আমার ছেলেকে পাখির মতো গুলি করা হয়েছে। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।
নিহত আমিনের মা সেলিনা বেগম বলেন, ২১ জুলাই আমার ছেলে সারাদিন ঘুম ছিল। সন্ধ্যায় বাজার করতে হাসি দিয়ে ঘর বের হওয়ার পরই গুলি লাগে। কাজলা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার সময় রিক্সায় তোলার সময় ওর বাবা দেখতে পায়। আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ফুটবলার খেলোয়াড় হবে। কি অপরাধ ছিল আমার ছেলের? কেন তাকে মারল? কোথায় গেলে আমার ছেলে পাব? এখন কেউ বলে না তুমি এতো কান্দো কেন মা? চার মাস হয়েছে আমি আমার ছেলেকে দেখি না। সরকারের কাছে আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।
বাড্ডা এলাকায় আহত মো. মোজাহিদ বলেন, ৫ আগষ্ট আন্দোলনের সময়ে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত পানি বিতরণ করেছিলাম। বিকালে দেখি, পুলিশ বিভিন্ন বিল্ডিং থেকে গুলি ছুড়ছে। প্রতিটি বুলেট তিন-চার গুলিবিদ্ধ হচ্ছে। ছোট একটা মেয়ের হাত গুলি লাগলে আমি বাঁচাতে গেলে আমার গুলি লাগে। তখন মাইক্রোবাস থেকে শটগান থেকে ছড়া গুলি মারে আমাকে। এখনো আমার শরীরের ১২৩টি গুলি রয়েছে। ডাক্তার বলেছে, বুলেট বের করলে আমি বাঁচব না। আমি চাই এর বিচার হোক।
বাংলাদেশ লেখক শিল্পী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান হঠাৎ করে ঘটেনি। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার লুটপাট, দুর্নীতি ও জুলুম নির্যাতনের বহিঃপ্রকাশ। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে কৃষক শ্রমিক-জনতার মুক্তি মিলবে না। দ্রবমুল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী দীপা মল্লিকসহ নিহত ও আহত পরিবারের স্বজনরা।