যে নদের তীরে

—ফারুক আহম্মেদ জীবন
কপোতাক্ষ নদের পাশের গাঁওয়েতে
আমি যে বসত করি,
জোয়ার-ভাটায় যে নদের জলেতে
চলতো লঞ্চ আর তরী।
এই তো সে দিনের কথা সে সব
কি করে যায় তা ভুলি?
কতো নাইয়ে যেতো,মাল সাজাইয়া
নাইয়েতে পাল তুলি।
সেই- সব কথা নাতি- নাতনিদের
কখনো যদি আমি বলি,
বলবে,ও সব বানোয়াট কথা দাদু
কেনো মিছে করছো হিঁয়ালি।
কতো যে চলতো লঞ্চ স্টিমার তরী
এই না নদের জলের বুকে,
বলতো মাঝিরা গেলে আয় খোকা
ইঁশারায় আমায় ডেকে ডেকে।
কতো যে সুন্দার কপোতাক্ষের জল
বয়ে চলেছিল এঁকে-বেকে,
পিতা যেতো গঞ্জে করিতে যে সওদা
চুপি সারে আমায় নীড়ে রেখে।
যেদিন পিতা আমায় নীড়েতে রেখে
একাকি যেতো গঞ্জের হাটে,
কেঁদে কেঁদে মোর ভাসাইতাম বুক
একাকি বসে লঞ্চের ঘাটে।
গঞ্জ থেকে পিতা ফিরে অবেলায়
আমায় ঘাটে বসা দেখে,
লঞ্চ থেকে নেমে বুকে তুলে নিয়ে
চুমু খেতো সারা-টা মুখে।
প্রায় মিষ্টির লোভে ধরিতাম বায়না
গঞ্জের বাজারে যাবো বলে,
বায়না থামাতে না পেরে মোর পিতা
শেষে কোলেতে নিতো তুলে।
লঞ্চে উঠে পিতার কোলেতে বসে
যেতাম গঞ্জের বাজারে,
লঞ্চের ভডভডি শব্দ জল ছড়াছড়ি
আহা! লাগতো সে কি মজারে।
পিতার হস্তের আঙ্গুলটি ধরে আমি
গঞ্জের বাজার ঘুরে ঘুরে,
নানান রকমের মিঠাই খেয়ে শেষে
আসতাম নীড়েতে ফিরে।
সেই নদে নেই আজ জোয়ার ভাটা
আবর্জনায় গেছে ঢেকে,
কেউ আর এখন তাই থাকে না বসে
যাত্রীরা সেই নদটির বাঁকে।
খ্যাতিমান কবি মাইকেলের পৈতৃ ভিটা
যে কপোতাক্ষ নদের তীরে,
যে কবি লিখেছেন কবিতায় কতকিছু
কপোতাক্ষ নদটিকে ঘিরে।
যে কবির স্মরণেতে লাখো মানুষের
মেলাতে জমে উঠে ভীড়,
সেই কপোতাক্ষের কথায় বলছি আমি
যে নদের তীরে কবির নীড়।
নারাংগালী ঝিকরগাছা যশোর বাংলাদেশ।