সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট

রিপোর্টারের নাম / ৫৬ টাইম ভিউ
Update : রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই ৫ আগস্ট বিকেলে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার উপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে বিনোদন কেন্দ্রটি পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখা রয়েছে।-খবর তোলপাড়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হামলাকারীরা প্রধান ফটক থেকে স্টিলের গেটটি খুলে নীচে ফেলে রেখেছিল। পরে পার্ক কর্তৃপক্ষ সুরক্ষার জন্য গেটটি উদ্ধার করে জাল দিয়ে ফিক্সড করে আটকে দিয়েছে। ফলে ওই গেট ব্যবহার করে কেউ এখন আর ভেতরে ঢুকতে পারে না। ফটকটির উপরে ঢালাই করে লেখা বঙ্গবন্ধু নামের অংশটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। প্রধান ফটকের ভেতরে ঢুকেই সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটিও খোদাই করে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। পরে গ্যারেজে পার্কিং করা পর্যটকবহনকারী একটি বাস, দুইটি জিপ ও ৫টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে।

প্রধান ফটকের ভেতরে পূর্বপাশে থাকা ডিসপ্লে ম্যাপটি ভাঙচুর করা হয়েছে। পার্ক অফিসের জানালার কাঁচ, ফ্যান ও কম্পিউটার, প্রিন্টার, পিসি, স্ট্যান্ড ফ্যান, ওয়াল ফ্যান, সিলিং ফ্যান ভেঙ্গে ফেলেছে। লুট করেছে সেখানে থাকা ল্যাপটপটিও। ডরমেটরী ভবন, রেস্ট হাউজ- ময়ুরী ও ঐরাবতী, ফুডকোট-১ ও ২, শিশুপার্ক, মিউজিয়াম, প্রজাপতি কেন্দ্র, পার্ক অডিটোরিয়াম, কৃত্রিম উপায়ে পাখির ডিম ফুটানোর ইনকিউবেটর কক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

পার্কের কর্মকর্তারা জানান, ৫ আগস্ট বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর দুর্বৃত্তরা পার্ক অফিসের জানালার কাঁচ, ফ্যান ও কম্পিউটার, প্রিন্টার, পিসি, স্ট্যান্ড ফ্যান, ওয়াল ফ্যান, সিলিং ফ্যান ভেঙ্গে ফেলেছে। পার্ক অফিসে থাকা ল্যাপটপও লুটে নিয়েছে তারা। ডিসপ্লে ম্যাপে (যেখানে এক নজরে পার্কের বিভিন্ন স্থাপনা দেখানো হয়েছে) থাকা সকল কিছু ভাঙচুর করেছে। ডরমেটরীর (স্টাফদের আবাসিক ভবন) তিনটি কক্ষে ফার্নিচার ও আলমারী ভাঙচুর, টিভি, ডেক্সটপ, টাকাসহ ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র লুটে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। রেস্ট হাউজের জানালার কাঁচ, টেবিলের কাঁচ, দরজা ভাংচুরসহ একটি এসি লুটে নিয়ে গেছে তারা।

ফুটকোর্টে থাকা বিভিন্ন কোমল পানীয়, বোতলজাত পানি, চিপস, বিস্কুট, আইসক্রিম লুটসহ ফ্রিজ, গ্লাসসহ বিভিন্ন মালামাল তছনছ ও ভাংচুর করা হয়েছে। অডিটোরিয়ামের জানালা-দরজার কাঁচ ভাংচুর এবং সাউন্ড সিস্টেম লুট হয়েছে। শিশুপার্কের ভেতরে বিভিন্ন ইভেন্টের মালামাল ভাংচুর ও লুট করা হয়েছে।

দূর্বৃত্তরা মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা মৃত পশু,পাখি, মাছের মূল্যবান নমুনা রাখা জার ভাংচুর করেছে, মিউজিয়ামের জানালার দরজার কাঁচ ভাংচুর করেছে। প্রজাপতি কর্ণারে লাইফ সাইকেল, ঘরের জানালার গ্লাস ভাংচুর করেছে তারা।

সেখানে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি পাকের্র ইনকিউবেটর রুমের ইনকিউবেটর, এসি, ফ্রিজ ভাংচুর করা হয়েছে। ইনকিউবেটর রুমে থাকা ২টি ময়ূর ছানা ও পাখিশালা থেকে ৮টি টিয়া পাখি লুট করে নিয়ে গেছে দূর্বৃত্তরা। কোর সাফারি পার্কে পর্যটক পরিবহনের জন্য একটি পর্যটক বাস, ২টি সাফারি জিপ গাড়ি ভাংচুর করেছে হামলাকারীরা। এছাড়া পার্কের ৫টি মোটরসাইকেলও ভাংচুর করেছে তারা। পাকের্র দুটি রেস্টুরেন্ট ভাংচুর ও মালামাল লুট এবং সব সাইনবোর্ড ও ব্যানার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। বিভিন্ন স্থাানে স্থাপন করা সিটি টিভি ক্যামেরা, মনিটর, টিভি, ল্যাপটপ লুট করে নিয়েছে হামলাকারীরা।

এসব ভাংচুরের পর হামলাকারীরা কোর সাফারি পার্কে (বাঘ-ভালুক-সিংহ বেষ্টনী) হামলা চালাতে যায়। কিন্তু এ সময় পার্কে হিংস্র ওইসব প্রাণী মুক্তভাবে বিচরণ করতে থাকায় তারা সেখান থেকে ফিরে যায়।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, “পুরো পার্কে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হামলা-ভাঙচুরের ফলে পার্কে আড়াই কোটি টাকার উপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্বৃত্তের হামলার পর থেকে পার্কটি পর্যটকদের জন্য বন্ধ রয়েছে। এসব মেরামতের পর পর্যটকদের জন্য পার্ক খুলে দেয়া হবে।

কবে খোলা সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব মেরামতের জন্য বাজেট দরকার। বাজেট পাওয়ার পর যথাসম্ভব দ্রুত মেরামত করে পার্কটি খুলে দেয়া হবে। দেশে নাশকতার পর থানার কার্যক্রমও অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়ায় এ ব্যাপারে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর