পূজোয় রমেশের বায়না
ফারুক আহম্মেদ জীবন
ভারতের পশ্চিম কলকাতার বাসিন্দা কার্তিক। স্ত্রী সুবাসিনী, ছোট বোন পুষ্পরেণু, যাকে সংক্ষেপে সবাই পুষ্প বলে ডাকে। বিধবা মা, নির্ঝরীণি আর চার বছরের ছেলে রমেশকে নিয়ে কার্তিকের পাঁচ সদস্যের একটা সুখের সংসার। দুর্গাপূজা প্রায় এসে গেছে। আর তাই ছোট্ট ছেলে রমেশ তার মা-বাবার কাছে বায়না ধরেছে এবার দূর্গা-পূজা সে বাংলাদেশে গিয়ে তার ঠাকু -মা আর ঠাকু-দার সাথে করবে। একটা কথা আগেই বলে রাখা ভালো। রমেশের বাবা কার্তিক ভারতের বাসিন্দা হলেও তার মা- সুবাসিনী রায় এর জন্মস্থান হলো বাংলাদেশের যশোর জেলায়। বাংলাদেশে রমেশ এর বাবা কার্তিকের বাবা-ঠাকু-দার সূত্র ধরে বহু আত্মীয় স্বজন রয়েছে। সেই সূত্র ধরে কয়েকবছর আগে কার্তিক পাঁচফুট ভিসা করে বেড়াতে এসে- ছিলো বাংলাদেশে আত্মীয়ের বাসায়। আর এসেই প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল কার্তিক রমেশের মা সুবাসিনীর রায়ের। ঠিক কাঁচা হলুদের মতো যেনো দেহের রঙ সুবাসিনীর।আর চন্দ্রিমার মতো আলো ঝলমলে গোল-গাল মিষ্টি মুখ অবয়ব।৷ প্রায় কোমর অবধি লম্বা ঢেউ তোলা কোঁকড়ানো মাথার চুল তার।ডাগর ডাগর বাদামি রঙের ভাসা ভাসা দারুণ মায়া জড়ানো আকর্ষণীয় দুটো চোখ তার। সুবাসিনীকে দেখতে একেবারে ঠিক যেনো মাটির প্রতিমা, মা-দূর্গার মতো লাগে। কার্তিকও দেখতে বেশ সুদর্শন আর স্মার্ট। একেবারে শিব ঠাকুরের মতো দেখতে। ওদের দুজনের প্রথম দেখাতে চার চোখ এক হতেই শুধু
কার্তিক নয়, একপর্যায় সুবাসিনীও প্রেমে পড়ে যায় কার্তিকের। এবং প্রেমের শেষ পরিণয় হয় বিয়ে। ওরা সাত-পাকে বাঁধা পড়ে দু,জন দুজনার। বিয়ের পর পরেই- সুবাসিনীকে কলকাতায় নিয়ে চলে আসে কার্তিক। কার্তিকের পরিবারের কেউ এ বিয়েতে অমত করে না।কেননা বউ দেখতে শুনতে আলাপ ব্যবহার শিক্ষা-দীক্ষায় সবদিক দিয়ে বেশ ভালো। আর তাছাড়া পরিবারের কেউ কার্তিককে বিয়ে করাতে মোটে রাজি করাতে পারছিলো না এর আগে।। অন্তত ডজন খানেক মেয়ে দেখেছিল কার্তিকের জন্য। কার্তিকের পরি-
বারের লোকজন। কিন্তু কোনো মেয়েকে কার্তি
-কের পছন্দ হয়নি। আর তাই কার্তিকের বউ দেখে বরং সকলেই সন্তুষ্ট হয়েছে। তবে চেনাজানা
নিকট আত্মীয়ের মধ্যে কোনো কোনো মেয়ের একটু ঈর্ষাও হয়েছে কার্তিকের বউ দেখে। যেসব মেয়েরা একদিন কার্তিকের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখে
ছিল। কার্তিক এম, এ, পাশ করার পর চাকুরী খুঁজছিলো। কিন্তু হঠাৎ কার্তিকের বাবা হারাধন স্ট্রোক করে স্বর্গবাসী হওয়ায়। তার বাবার স্বর্ণের দোকানের দ্বায়িত নিয়ে সে সংসারের হাল ধরে।
আর চাকুরী করা হয়ে ওঠেনি কার্তিকের। ছোট্ট বোন পুষ্প এবছর ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে।
যাহোক বিয়ের পর ব্যবসা, বিধবা মা, ছোট বোন
পুষ্প আর বউ সুবাসিনীকে নিয়ে বেশ সুখে দিন
কাটতে লাগে কার্তিকের। তার বছরখানেক পর বাড়ির নতুন অতিথি হয়ে আসে রমেশ।রমেশের জন্ম হওয়াতে এক অন্য রকম আনন্দ যেনো ওদের সকলের মনে। কার্তিকদের কলকাতায় বেশ প্রভাব। কেননা কার্তিকের বাবা- ঠাকু-দা রা সবাই স্বর্ণের ব্যবসায়ী বেশ অর্থবিত্তের মালিক। গোষ্ঠীর সকলেই প্রায় পার্টি করে। আর সেজন্য
এলাকার লোকজন খুব মান্য গণ্য করে ওদের। যেটা বলছিলাম কার্তিক সুবাসিনীর ছেলে রমেশ যেমন ফুটফুটে দেখতে তেমন তার কথা। কার্তিক কেবল বাসায় খেতে এসেছে দুপুরে ।সেসময় রমেশ মা- সুবাসিনীকে বললো, মা..মা আমি কিন্তু এবার পূজা বাংলাদেশে করবো ঠাকু- দা, আর ঠাকু মার সাথে। ও বাবা. বাবা..চলো না..কতোদিন
ঠাকু মা, ঠাকু দা-কে দেখিনি। চলো না বাবা..
এবারের দুর্গাপূজা বাংলাদেশে গিয়ে করি। প্রতিবছর তো আমাদের এখানকার প্রতিমা মা- দুর্গাকে দেখে আনন্দ করি। এবার চলো বাংলাদে
-শে গিয়ে ওখানকার নতুন দুর্গা-মা কে দেখবো। সুবাসিনী বললো, রমেশ যখন জেদ ধরছে। আর এতো করে যেতে চাইছে। ও রমেশের বাবা…চলো না ঘুরে আসি। আর তাছাড়া অনেক-দিন হলো আমরাও তো যাইনি। শেষ গিয়েছিলাম তা প্রায় এক দেড় বছর হয়ে গেলো। কার্তিক বললো..
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ সুবাসিনী।ব্যবসা সংসার দেখতে
গিয়ে অনেকদিন যাওয়া হয়ে উঠেনি। আচ্ছা ঠিক
আছে দেখি…তবে যে সুবাসীনি আজকেই তোমার আমার পাঁচ ফুটের ভিসা লাগাতে হবে। কেননা পরশুদিন থেকে পূজা শুরু।ঐদিন সন্ধ্যায় কার্তিক
পাঁচফুট অফিসে গিয়ে তার বন্ধু হরিপদকে দিয়ে দ্রুত এক সপ্তাহের ভিসার ব্যবস্থা করলো। হরিপদ
আবার কার্তিকের স্কুল জীবনের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হরিপদ এখন সে পাঁচফুট অফিসে চাকুরী করে।
তার পরদিন কার্তিক, স্ত্রী সুবাসিনী ছেলে রমেশকে নিয়ে মার্কেটে গেলো। বাংলাদেশে থাকা কার্তিকের শশুর-শাশুড়ী শালা শালিদের জন্যও কেনাকাটা করতে। রমেশ তো মহা খুশি। এবারের দুর্গাপূজা
বাংলাদেশে করবে বলে। পরেরদিন সকালবেলা কার্তিক ওর মা নির্ঝরীণি-ছোট বোন পুষ্পর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সকলে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। সন্ধ্যা নাগাত পৌঁছালো বাংলাদেশে
। সুবাসিনীর মা-বাবা পড়শী সকলেই মহা খুশি
অনেকদিন পর সুবাসিনী ওর বর কার্তিক আর
ছেলে রমেশকে দেখে। সবাই যথেষ্ট আদর যত্ন
করলো ওদের। রমেশ ওর মা-বাবা মাসী মামাদের সাথে পরেরদিন থেকে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। আর নানান রকমের মিঠাই খেতে লাগলো। রঙবি রঙের গাড়ি কিনে গাদা করতে লাগলো বাড়িতে এনে। কলকাতায় গিয়ে ওরই বয়সী খেলার সাথীদের দেখাবে বলে। রাতে
রমেশ ওর মা-বাবাকে বললো…ইশ! জানে মা…
জানো বাবা..এখানকার দুর্গা প্রতিমা গুলো কত্ত
সুন্দর।কি সুন্দর করে তাকিয়েছিলো আমার দিকে
মা- দুর্গা। সুবাসীনি বললো, ওমা তাই? রমেশ গুণ টেনে বললো হুম.। কার্তিক বললো বাহ্ বেশ তো।
তা- তুমি কিছু বললে না বাবা রমেশ? রমেশ বললো…বলিনি আবার….বলেছি জানো মা দুর্গা আমরা তোমাকে কতদূর থেকে দেখতে এসেছি। ঐ ভারতের কলকাতা থেকে দেখতে এসেছি হুম। সুবাসিনী বললো…শুনে কি বললো মা দুর্গা ? রমেশ বললো কিচ্ছু তো বললো না।.শুধু আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো। কার্তিক হেসে বললো, ও আচ্ছা…তাহলে মনে হয় তুমি একা একা মিষ্টি কিনে খেয়েছ দুর্গা মাকে প্রসাদ দাওনি এজন্য গোস্বা হয়েছে। তাই অভিমান করে তোমার সাথে কথা বলেনি।তা- বাবা রমেশ অনেক রাত হয়েছে এবার তুমি ঘুমাও। তারপর একসময় ঘুমিয়ে পড়লো রমেশ। বেশ আনন্দের সাথে
পূজার কয়টাদিন কাটলো রমেশের। কয়েকদিন
থাকার পর পূজা শেষ হলে একসময় ঠাকু-মা আর ঠাকু-দাদের বাড়ির সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবারো মা- বাবার সাথে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো ছোট্ট রমেশ বাবু।
নারাংগালী ঝিকরগাছা যশোর বাংলাদেশ।