শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন

লাল সবুজের পতাকা”

রিপোর্টারের নাম / ১৫ টাইম ভিউ
Update : শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

-ফারুক আহম্মেদ জীবন

১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবস। সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের প্রতিটা স্কুল, কলেজ, আর ইউনির্ভাসিটি,শহীদ মিনার গুলোতে আজ পতপত করে উড়ছে খোলা গগনের উন্মুক্ত ঝিরঝিরে বায়ুতে লাল সবুজের স্বধীন পতাকা।
সজীব আর স্বর্ণালি দু,ভাই বোন সকালে তাদের স্কুলে গেছে বিজয় দিবসে। সজীব আর স্বর্ণালির দাদু সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধ মিনহাজ মোল্লা। একটু বেলা হলে। সে তার পুঁতা পুতনিদের এগিয়ে আনতে গেছে স্কুলে।
কিছুক্ষণ আগেই বিজয় দিবস শেষ হয়ে গেছে। সজীব স্বর্ণালি তাদের দাদু ভাই মিনহাজ মোল্লাকে দেখতে পেয়েই ছুটে কাছে চলে এলো। তারপর দু,ভাই বোন বৃদ্ধ দাদুর দুই পাশে দুটি হাত ধরে স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে একসময় সজীব মিনহাজ মোল্লাকে বললো….
জানো দাদু, আজ বিজয় দিবসে না, আমরা সবাই অনেক..অনেক আনন্দ করেছি। শুনে মিনহাজ মোল্লা বললো..তাই নাকি দাদু ভাই?
সজীবের ছোট্ট বোন স্বর্ণালি বললো..হুম দাদু। জানো..আমি কথা সাহিত্যিক ফারুক আহম্মেদ জীবন এর বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা কালজয়ী কবিতার বইয়ের “রক্তে ভেজা” নামক একটা কবিতা পাঠ করেছি।মিনহাজ মোল্লা বললো তাই…সেই কবিতাটা একটু বলো তো শুনি দিদি ভাই? স্বর্ণালি হেসে ওঠে বললো…তাহলে বলবো..তুমি.শুনবে দাদু? দাদু মিনহাজ মোল্লা বললো..হুম শুনবো দিদি ভাই। তোমার বলা কবিতা আমি না শুনে কি পারি। তখন স্বর্ণালি সে তার কচিমুখে টরটর করে কবিতা-টি বলতে
শুরু করলো….
কোন বন্দী পাখির মতো আমরা
আর, নইতো পরাধীন,
আমরা যে মুক্ত বাঙালীরা যতো
আমরা সব স্বাধীন।
এখন, মুক্ত মনে নাও সবাই তাই
প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস,
কোন ভিনদেশীদের এখন আমরা
আর, নইতো কৃতদাস।
শোনো ডিসেম্বর যে বলছে ডেকে
আমি বিজয়ের মাস,
স্বাধীন মনে সব পতাকা উড়াও
করো সবাই উল্লাস।
আমার সবুজে ঘেরা বাংলা মাটি
বীর শহীদের রক্তে ভরা,
এসো সকলে আজ শ্রদ্ধার সাথে
পতাকা উড়াই মোরা।
মিনহাজ মোল্লা কবিতাটি শুনে বললো.বাহ! বাহ!বাহ! এইতো আমার দিদিভাই খুব সুন্দর কবিতা
পাঠ করেছে। সজীব বললো…আমি কোন কবিতা
বলেছি…বলো তো দাদু? মিনহাজ মোল্লা বললো…
তা-তো আমি জানি না দাদু ভাই। তুমি বলো শুনি?
সজীব বললো…আমিও কথা সাহিত্যিক ফারুক আহম্মেদ জীবন এর ঐ কালজয়ী কবিতার বইয়ের একটা কবিতা বলেছি। মিনহাজ মোল্লা বললো.. সেটা কোন কবিতা.. বলো তো শুনি দাদু ভাই? সজীব বললো..তাহলে আমি বলছি দাদু তুমি শোনো কেমন.।কবিতার নাম “বিজয় পতাকা.
তোমরা যেনো কেউ কভু ভেবো না
আমি একটা শুধুই পতাকা…
আমি যে লাখো শহীদের স্মৃতি চিহ্ন
যাদের রক্ত এ দেহে মাখা।
তোমরা যে লাল বৃত্তটাকে দেখছো
আমার মাঝে রয়েছে আঁকা,
সে-তো, ১৯৪৭, ৫২, আর ৭১ এর
ইতিহাসকে পিছু ফিরে দেখা।
এই বুকেতে যে ধারণ করেছি আমি
লাখো দেশপ্রেমিকের রক্ত,
ভালোবেসে তাই শক্ত করে তোমরা
ধরে রেখো স্বাধীনতার ভক্ত।
দেখতে পারছো কি মোর গায়েতে
বাংলার সবুজে ঘেরা ভূমি?
এই ভূমিতেই যে সব ঘুমিয়ে আছে
যারা একদা ছিল মুক্তিকামী।
যারা সেদিন বুলেটের যাতনা বুকে
গড়ে ছিলেন দিন আগামী,
এই পতাকা যে তাদের কথাই বলে
যাদের জন্য স্বাধীন তুমি।
সজীবের মুখে সম্পূর্ণ কবিতা শুনে মিনহাজ মোল্লা বললো….বাহ! বাঃ বাঃ বাহ! একেবারে
অতুলনীয়,অনুপম, অনিন্দ্য সুন্দর কবিতা দাদু
ভাই। তোমার কবিতাটির মধ্যে যেনো ইতিহাস,
স্বাধীনতার নির্যাস, বিজয়ের সুঘ্রাণ মিশানো। সত্যি
অপূর্ব,!বিজয় পতাকা নিয়ে এ যেনো কবির কাব্যিক ছন্দ রসের মনের মাধুরী মিশানো রয়েছে।
আহা! জানো দাদু ভাইয়েরা…তোমাদের দুজনের মুখে আজ বিজয় দিবসের দুটো কবিতা শুনে না.. আমার প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো। সত্যি দাদু ভাইয়ে
-রা একটুখানি গভীর উপলব্ধি করেই আমাদের লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা-টির দিকে তাকালে বুঝা যায়। ঐ পতাকা-টির মধ্যে কতো-কতো যে, দুঃখ কষ্ট আর আনন্দের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। ঐ.. ঐ.. লাল সবুজের পতাকার মধ্যে যেনো বীর শহীদদের বুকের তাজা রক্ত স্রোত বয়ে চলেছে। ঐ পতাকার চিহ্নের মধ্যেই যে বয়ে চলেছে আমাদের স্বাধীনতার পূর্বের সেই কষ্টের গ্লানি মাখা দীর্ঘ দিনের পরাধীনতার ইতিহাস। রয়েছে আমাদের স্বর্ণালি ফসল আর সবুজ শ্যামল বৃক্ষ প্রকৃতির দু,চোখ ধাঁধানো মায়ার ছবি। ঐ পতাকার চিহ্নটিই বোঝায় আমাদের এই সোনার বাংলা আজ একটা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ। যেটা বীর
শহীদদের তাজা রক্ত দিয়ে কেনা।ঐ পতাকার গাঢ় সবুজের মাঝে রক্তের মতো জ্বলজ্বলে লাল রঙের ঐ প্রতীক ঠিক যেনো প্রভাতে বাংলাদেশের
পুব গগনে উদিত হওয়া রক্তিম স্বাধীনতার সূর্য।
মনে হয় সবুজ বৃক্ষের ফাঁকে তা- আলো ছড়িয়ে
স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। সজীব বললো…
সত্যি দাদু তুমি ঠিকই বলেছ।আমরা কেউ তোমার
মতো এতো গভীর ভাবে ভাবনাচিন্তা করিনে বলেই ঐ লাল সবুজের পতাকার মর্ম বুঝতে পারিনে। আজ তোমার কাছ থেকে অনেককিছু শিখলাম দাদু। মিনহাজ মোল্লা বললো..আমাদের বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের পতাকার মর্যাদা কতোটা। সেটা বুঝা উচিৎ দাদু।তবেই তো সকলের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। সজীব বললো.আমি আমার নিজের প্রাণের চেয়েও আমার এদেশ, দেশের পতাকাকে ভালোবাসবো দাদু। প্রাণ থাকতে আমার দেশের স্বাধীন পতাকার কখনো অমর্যাদা হতে দেবো না। স্বর্ণালি বললো…আমিও ভাইয়ার মতো আমার এদেশকে ভালোবাসবো দাদু। মিনহাজ মোল্লা বললো..এই তো, আমার দেশের সোনার ছেলে-
মেয়ে। এদেশ, এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে
টিকিয়ে রাখতে গেলে যে তোমাদের মতো দেশ
ভক্ত নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের একান্তভাবে
দরকার এদেশে দাদু সোনারা। গল্প করতে করতে
বাড়ির পথ ফুরিয়ে এলো। স্বর্ণালি বললো…দাদু
আমরা বাড়ি এসে গেছি। মিনহাজ মোল্লা বললো.
ও তাইতো। দেখেছো দাদু ভাইয়েরা গল্প করতে করতে আমরা কখন বাড়ি চলে এসেছি তা- খেয়ালই করিনি।

নারাংগালী ঝিকরগাছা যশোর বাংলাদেশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর