ধর্ষণ কি শুধু পুরুষ করে?
টিকটকার প্রিন্স মামুন ও লায়লার বিষয়ে অনেকেই জানেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওদের অনেক নাটকের পর সর্বশেষ কথিত প্রেমিক মামুনকে ধর্ষণের মামলায় জেলে দিয়েছেন প্রেমিকা লায়লা। আমার তাদেরকে নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে নেই, আমি বলতে চাই যে আইনে মামুনকে গ্রেফতার করে জেলে নেওয়া হয়েছে সেই কালাকানুন নিয়ে।
বাংলাদেশে যদি বর্তমান সময়ে কোনো কালাকানুন থেকে থাকে তার দু’টির মধ্যে একটি হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং বাকিটা চেকের মামলা (যদিও ওই মামলা নিয়ে আমার খুব আপত্তি নেই)। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটা অংশ নিয়ে প্রবল আপত্তি আছে।
শেখ হাসিনা সরকার এবং বেগম খালেদা জিয়া সরকার- দুই সরকার মিলিয়েই এই আইন করেছে (২০০০) এবং তার সংশোধনী এনেছে (২০০৩)।
নারী এবং শিশুদের রক্ষার জন্য এটি একটি যুগান্তকারী আইন হতে পারত কিন্তু সেখানে বলা হয়েছে “যদি কোনো পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত [ষোল বৎসরের] অধিক বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা [ষোল বৎসরের] কম বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।”
এখানে প্রথম অংশে ১৬ বছরের বেশি নারীদের ক্ষেত্রে ‘প্রতারণামূলক বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে’ –কথাগুলো বলে এই আইনের অপব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর এই সুযোগ নিয়ে ৪০/৫০ বছরের একজন নারীও যে কোনো বয়সের পুরুষের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। অশিক্ষিতদের থেকে শিক্ষিতরাই এই সুযোগ বেশি নিচ্ছেন। আর যাদের জন্য এই আইন করা হয়েছিল সেই প্রকৃত অসহায় নারী এবং শিশুরা এই সুযোগ কতটা নিচ্ছেন আমি সন্দিহান।
রাজধানীতে এবং রাজধানীর বাইরেও শিক্ষিত এক ধরনের ব্যবসায়ী নারী সম্প্রদায় এই আইন নিয়ে ব্যবসা করছে। তাদের টার্গেট ধনী এবং প্রবাসী বিশেষ করে পশ্চিমা দেশে বসবাসকারীরা। অনলাইনে প্রেমের ফাঁদ পেতে বসে আছে এরা। এদের সঙ্গে যুক্ত আছে তাদের কিছু পার্টনার আইনজীবী। কারো বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পুরুষকে গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে যায়। এফআইআর করলেই যথেষ্ট, তদন্তেরও প্রয়োজন মনে করে না পুলিশ।
এই আইনের ফলে, রাস্তার ‘পতিতাও’ কারো সঙ্গে দুই চারটা ছবি তোলে, দুই চার দিন ঘুরে, এসএমএস বিনিময় করে, যে কোনো পুরুষের বিরুদ্ধে প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ মামলা দিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করতে পারছে।
দেশের মধ্যে শত শত এমন কাণ্ড ঘটছে কিন্তু আদালত ‘আইনের’ অজুহাত দিয়ে পুরুষদের জেলে দিচ্ছেন। আর এই মামলায় ফাঁসিয়ে ‘ব্যবসায়ী নারীরা’ পুরুষদের থেকে টাকা আদায় করছে অথবা বড় অংকের কাবিননামা করে জেল থেকে বের করার বিনিময়ে টাকা, সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে। অবস্থার প্রেক্ষিতে মনে হয় নারী হলেই শুধু সেই ধর্ষিত হয়, এইসব ব্যবসায়ী নারীদের দ্বারা যে পুরুষও ধর্ষিত হচ্ছে সেটা দেখার দরকার নেই।
দুর্ভাগ্য যে সংবাদপত্রে এই বিষয় নিয়ে কোনো ইনভেস্টিগেশন নেই, তারা শুধু দাবি করে যে সরকার তাদেরকে লিখতে দিচ্ছে না। লেখার যে শত ইস্যু পড়ে আছে সেটা নিয়ে ধ্বংসের পথে যাওয়া বাংলাদেশের মিডিয়ার মাথাব্যথা নেই।
এই প্রলোভনে পড়ার মতো বয়স আসলে কত? সর্বোচ্চ ২৫ হতে পারে। কিন্তু তারও বেশি বয়সের নারীরা, এমনকি আমি নিজে ৩৮ বছরের একজন নারীকেও দেখেছি নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে এই ‘প্রলোভন ব্যবসা’ করতে, এই ঢাকা শহরে।
আইন শুধু তৈরি করলে হয় না, তার কী সুফল কুফল পাচ্ছে সমাজ সেটাও দেখার দরকার আছে। আমি জানি না ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ নিয়ে এই ধরনের কোনো সমীক্ষা চালানো হয়েছে কিনা সরকারের তরফ থেকে।
আপনি যে কোনো আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন, তারা এক বাক্যে বলছেন যে এটি একটি জঘন্য কালাকানুন, যে কোনো বিচারকের সঙ্গে কথা বলেন তিনিও একই কথা বলছেন। কিন্তু এটা পরিবর্তন করবে কে? একদলীয়, তালি বাজানোর সংসদে বিষয়টি তুলবেন কে? ব্যারিস্টার সুমন? নিজের ধান্দা না হলে তিনিও এখানে চুপ থাকবেন।
আর পরিবর্তিত হবে না বলেই ব্যবসায়ী নারীরা যে কোনো পুরুষকে দায়ী করে মামলা করতে পারবে দিনের পর দিন। আড়াই বছর একই বিছানায় ঘুমিয়েও তরুণ বয়সের প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে মধ্য বয়সি নারী লায়লা বিয়ের প্রলোভন, ধর্ষণের মামলা করতে পারেন। প্রিন্স মামুনের মতো ধনী নারীর ঘরে আশ্রয় নেওয়া বাদাইম্যাদের প্রতারণার জন্য আরো বহু আইনে ফাঁসানো যায় কিন্তু লায়লার পছন্দ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন। কারণ তিনিও জানেন প্রিন্স মামুনকে পুতুল হিসেবে ব্যবহার করতে কাবু করার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এই দেশে।
লেখাটি সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ফেসবুক থেকে নেওয়া।