জিমির পুতুলের সংসার”
—–ফারুক আহম্মেদ জীবন
খুব ছোট্ট একটা মেয়ে, নাম জিমি। এখন বয়স তার মাত্র চার বছর। কিন্তু বয়স তার কম আর সে দেখতে ছোট হলে কি হবে? তার ছোট মুখে টরটর করে পাকা পাকা কথা বলা শুনলে মনে হবে পুরো আস্ত একটা পাকাবুড়ি। জিমি দেখতে যেমন মিষ্টি কিউটের ডিব্বার মতো।তেমনি তার তোতা পাখির মতো শুনতে লাগে ছোট কচি মুখের প্রাণ জুড়ানো মিষ্টি মধুর নৈপুণ্য অঙ্গভঙ্গিময় মিশ্রণ কথা। তার কচি মুখের সে কথা শুনলে যে গোমড়া মুখি, সেও না হেসে থাকতে পারবে না।
ভোর থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগপর্যন্ত তার মুখে যেনো মিষ্টি কথার খই ফুটতেই থাকে। সারাদিনভর হাসি আনন্দ লাফঝাঁপ, দৌড়াদৌড়ি, ছুটাছুটি আর হৈ-হুল্লোড় করে সে একাই যেনো পুরো বাড়িটা মাতিয়ে রাখে।
তবে তার মুখে যে শুধু কথার ফুলঝুরি ফোটে তা-নয়। জিমির আছে ছোট্ট একটা সংসার।
“রাজা আর রাণী” নামের দুটো পুতুল নিয়ে তার সেই ছোট্ট সংসারটার নাম পুতুলের সংসার।
সে সারাদিনভর তার সেই পুতুল দুটোকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। কখনো তাদের মিছামিছি গোসল করাই। গা মুছে তাদের মাথায় গায়ে তেল মাখায়। মাথার চুল আঁচড়ায় দিয়ে সাজিয়ে দেয়। আদর করে ঘুম পড়ায় । আবার কখনো পুতুল দুটোকে তার কোলে দু,পাশে দুটো নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
আর, তার সেই সংসারটিতে পুতুলের পাশাপাশি আছে জিমির বড় ভাইয়া মুরসালিনের দেওয়া রান্নাবান্না করার জন্য নানান রকমের ছোটছোট খেলনা সামগ্রী।
যেমন, গ্যাসের চুলা, হাঁড়িপাতিল, কলস, গ্লাস, থালাবাসন, ঘর সাজানো শোকেজ, ফ্রীজ, সোফা, আরো নানান রকমের আসবাবপত্র। আর চার বছরের সেই ছোট্ট মেয়ে জিমি তার সেই সংসারটা রীতিমতো একজন দক্ষ সাংসারিক রমণীর মতো সারাদিন দু,হাতে সামলায়। সারাদিনভর সে মেতে থাকে তার সেই খেলনা সংসারের কাজকর্ম রান্না-
বান্না এটা ওটা নিয়ে।
কখনো বা- সে তার সাংসারিক জিনিস পত্র নিয়ে সংসারটা সাজায় সিঁড়ির ঘরে। ছাদে উঠার নামার নিচের সিঁড়িতে। আবার কখনো বাইরে থেকে ঘরে উঠার নামার পটনির উপর। আবার কখনো উঠান আঙ্গিনার এক কোণে লিচু তলায়।
সকাল হতেই জিমি প্রতিটাদিন রান্না করার জন্য বাড়ির আঙ্গিনার পেয়ারা গাছের তলায় ঘুরে ঘুরে গাছ থেকে ঝরে পড়া ছোট ছোট পেয়ারার গুটি খুঁটে খুঁটে এক পাত্রে রাখে। ইটের কুচি গুলো কুড়িয়ে রাখে অন্য পাত্রে। আর ধুলোবালি জল রাখে আরেক পাত্রে।
তারপর দুপুর হলে তার মা সুলতানা বেগম যখন রান্না ঘরে রান্না করে। তখন সে তার খেলনা রান্না
ঘরে বসে সেগুলো তার গ্যাসের চুলার উপর রেখে
বসে চামচ দিয়ে নেড়ে নেড়ে রান্না করতে থাকে।
আবার কখনো বা- জিমি রান্নার ফাঁকে তার পুতুল দুটোকে সোফায় পাশাপাশি বসিয়ে রাখে। আবার কখনো শুইয়ে রাখে। আর মাঝেমধ্যে তাদের সাথে আপন মনে কথা বলে। কি-রে, তোদের ক্ষিদে লাগছে? চুপ কর কান্দিস-নে, এই না রান্না হয়ে গেছে এক্ষুনি ভাত দিচ্ছি। আবার কখনো কখনো পুতুল দুটোর বুকের উপর আলতো হাত রেখে চুপ করতে বলে আদর করে করে।
জিমির আব্বু জীবন আহমেদ এদিকসেদিক থেকে কাজকর্ম করে বাড়িতে এসে যখন ডাক দেয়, ও মা জিমি.. আমার মা কই? জিমি সাথে সাথে তার জায়গা থেকে সাড়া দেয় কি…এ-না আমি। জীবন আহমেদ আবার বলে মাগো কি করছাও তুমি? জিমি উত্তর দেয় দেখতে পাচ্ছাও না…আমি রান্না করছি। জীবন আহমেদ বলে ও তাই…তা-বেশ, আমার মা জননী কি রান্না করছে শুনি? জিমি হেসে বলে ভাত, গোস্তো, আর ডাল রান্না করছি। তুমি খাবা আব্বু?
জিমির আম্মু সুলতানা বেগম রান্না ঘর থেকে শুনে হাসতে হাসতে বলে নাও, তোমার মা জিমি গোস্তো রান্না করেছে খেয়ে নাও। আজ আর তোমার আমার রান্না না খেলেও চলবে। জীবন আহমেদ বলে বা-রে আমার জিমি
মা রান্না করেছে আর আমি খাবো না তাই কি হয়?
নিয়ে এসো মা জিমি আমার খুব ক্ষিদে লেগেছে।
জীবন আহমেদের কথা শেষ হতেই অমনি জিমি বলে ক্ষিদে লেগেছে…ভাত খাবা? বসো আমি তোমার জন্যে ভাত নিয়ে আসছি। তারপর মিচমিচ করে হাসে আর তড়িঘড়ি করে ধুলোবালি জলের তৈরি ডাল। আর ইটের কুচির তৈরি ভাত। পেয়ারার গোটার তৈরি মাংস প্লেটে নিয়ে হাজির হয়। তারপর বলে, এই নাও খেয়ে দ্যাখো আব্বু কি মজা। জীবন আহমেদ হাসি মুখে দু, হাত বাড়ায় সেগুলো নেয়।
তারপর মিছামিছি মুখের কাছে নিয়ে খায়। জীবন
আহমেদ বলে হুম….তাইতো ভীষণ মজা লাগছে মা। শুনে জিমি তো খুব খুশি হয়। বলে,আমি রান্না
করেছি। মজা লাগছে তাই না আব্বু? জীবন বলে হুম…খুব মজা লাগছে মা। জিমি বলে আর একটু এনে দেবো আব্বু? জীবন আহমেদ বলে দাও…
জিমি আবার দৌড়ে গিয়ে এনে দেয়। জীবন আহমেদ মিছিমিছি খাওয়া শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। জিমি বলে পেট ভরে গেছে আব্বু?
জীবন আহমেদের মিছে সে খেলনা খাবার খেয়ে
পেট না ভরলেও। মেয়ে জিমির নিষ্পাপ মুখের
স্বর্গীয় সেই বিশ্বজয়ী পরিতৃপ্তির উচ্ছ্বাসে ভরা হাসি দেখে অন্তরটা যেনো সেই মুহুর্তে ভরে যায়। জীবন সে তার পেট দেখিয়ে বলে হুম…এই না পেট একেবারে ভরে গেছে মা।
জিমি বলে দাঁড়াও তোমার জন্যে পানি এনে দিচ্ছি আব্বু। এসব দেখে জিমির ছোট ভাইয়া মুত্তাকিন দূর থেকে মিচ মিচ করে হাসতে থাকে। জিমি বলে তুই হাসছিস কেন? তারপর জীবন আহম্মেদ এর
কাছে নালিশ করে। বলে, আব্বু ঐ দ্যাখো ভাইয়া হাসছে। জীবন আহমেদ বলে,এই মুত্তাকিন তুই হাসছিস কেনো? আর হাসিস-নে যেনো। জিমি খুশি সে দৌড়ে গিয়ে তার আব্বুর জন্য পানি এনে দেয়।
জীবন আহমেদ আবার তা-মুখের কাছে নিয়ে মিছামিছি খায়। এভাবে প্রতিটাদিন জিমির বাবা-মা, ভাই আর তার খেলনা সংসারের সদস্য রাজা রাণী পুতুল দুটো আর হাঁড়িকুঁড়ি নিয়ে বেশ হাসি-খুশির মধ্যদিয়েই চলতে থাকে ছোট্ট কচি মনের জিমির সাজানো গুছানো খেলনা সেই ছোট্ট পুতুলের সংসারটি।
যদিও সকলের কাছে সেটা খেলনা সংসার। তবুও
চার বছরের ছোট্ট মেয়ে জিমির সেই কচি মনের
সাজানো সংসারটা যেনো পৃথিবীর সকল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ দুঃখ হাসি কান্না আনন্দ আর বেদনা মিশ্রণ জীবন যাত্রার বাস্তবতারই এক প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়।
নারাংগালী ঝিকরগাছা যশোর বাংলাদেশ।